ফাইল চিত্র।
বনগাঁ লোকালে সেই আগের মতোই ভিড় শুরু হয়েছে। শুক্রবার আগের চিত্রই দেখা গেল ট্রেনে।
ভিড়ের জন্য বনগাঁ লোকালের দুর্নাম রাজ্য জুড়ে। এ দিন কামরায় ঠাসাঠাসি ভিড় ছিল। দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। একে অন্যের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলেছেন যাত্রীরা। হাবড়া, বারাসত, মধ্যমগ্রামের মতো কয়েকটি স্টেশনে কামরায় ওঠানামা করতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়েছে।
নিত্যযাত্রীরা জানালেন, বুধ ও বৃহস্পতিবারের তুলনায় শুক্রবার ভিড় ছিল বেশি। তবে শুক্রবারের তুলনায় শনিবার ভিড় আবার কম ছিল। কালীপুজোর ছুটি থাকায় অনেকে বেরোননি। তবে ট্রেনের সিটে গা ঘেঁষাঘেঁষি করেই যাত্রীরা বসেছিলেন। শারীরিক দূরত্ব বজায় ছিল না। অনেকেরই মাস্ক ছিল না এ দিন। প্ল্যাটফর্মে পুলিশি নজরদারিও ছিল ঢিলেঢালা।
শুক্রবার বনগাঁ স্টেশন থেকে সকাল ৮টার বনগাঁ লোকাল যখন ছেড়েছিল, তখন কামরায় যাত্রীরা দূরত্ব বজায় রেখেই বসেছিলেন। অনেক সিট খালি ছিল। চাকা গড়াতেই ভিড় বেড়েছে। মূলত মছলন্দপুর স্টেশন থেকে ভিড় বাড়তে থাকে। হাবড়া থেকে ভিড় খুবই বেড়ে যায়। দু’টি সিটের মাঝখানে গাদাগাদি হয়ে মানুষ দাঁড়িয়ে গিয়েছেন। ক্রস চিহ্ন আঁকা সিটেও বসেছেন মানুষ। হাবড়ায় ভি়ড় ছিল মারাত্মক। যাত্রীদের প্ল্যাটফর্মে নামতে উঠতে বেগ পেতে হয়েছে।
বনগাঁ স্টেশন চত্বর শুক্র-শনিবার ফাঁকাই ছিল। জিআরপির এক অফিসারের মতে, ‘‘কোন সময়ে ট্রেন ছাড়বে, যাত্রীরা তা বুধবার জেনে গিয়েছিলেন। তাই ট্টেন ছাড়ার একটু আগে অনেকে স্টেশনে এসেছিলেন। প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করতে হয়নি।’’
বনগাঁ স্টেশন হকারদের অস্থায়ী দোকানপাট শনিবারও বন্ধ ছিল। হাবড়া, মছলন্দপুর, গুমা সংহতি, অশোকনগরে অবশ্য প্ল্যাটফর্মে অস্থায়ী দোকানপাট খোলা ছিল। চিন্ময় সাহা নামে এক নিত্য যাত্রী বলেন, ‘‘শুক্রবার ভিড় ছিল বেশি।’’ দেবব্রত বিশ্বাস নামে এক নিত্যযাত্রী বলেন, ‘‘বনগাঁ লোকালে শারীরিক দূরত্ববিধি বজায় রাখা সম্ভব নয়। নিজেদের সচেতন থাকতে হবে। আরও বেশি ট্রেনের সংখ্যা না বাড়ালে সমস্যা কমবে না।’’
তবে ট্রেন চালু হওয়ায় যাত্রীরা খুশি। হাবড়ার বাসিন্দা রাজেশ সরকার কলকাতায় কাজ করেন। বললেন, ‘‘কামরায় শারীরিক দূরত্ব বজায় না থাকলেও আমরা স্বস্তিতে যাতায়াত করতে পারছি। এত দিন বাসে যাতায়াত করেছি। হাবড়া থেকে ধর্মতলা যেতে ৪ ঘণ্টা সময় লাগত। বাসে ভিড়ও বেশি। যাতায়াতে টাকা খরচ হত বেশি। সে তুলনায় ট্রেনে স্বস্তিতে যাতায়াত করতে পারছি।’’
বনগাঁ থেকে বাসে কেষ্টপুর যাতায়াত করেন এক যুবক। সময় লাগত তিন ঘণ্টা। এখন ট্রেনে যাচ্ছেন বলে সময় এবং টাকা— দু’টোই কম লাগছে।
যাত্রীরা অনেকে জানাচ্ছেন, শুক্রবার ও শনিবার বনগাঁ স্টেশনে পুলিশি তৎপরতা থাকলেও বুধ ও বৃহস্পতিবারের তুলনায় তা ছিল কিছুটা ঢিলেঢালা। অনেক যাত্রীকে মাস্ক ছাড়া ট্রেনে উঠতে দেখা গিয়েছে। সহযাত্রীরা মাস্কের কথা বলতেই অবশ্য অনেকে রুমাল, গামছা বা শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকেছেন। রেল পুলিশের এক অফিসার বলেন, ‘‘আমাদের দেখে অনেকেই মাস্ক পরছেন। তাঁদের বলছি, আইন বাঁচাতে মাস্ক পরতে হবে না। নিজেদের বাঁচাতে মাস্ক পরুন।’’ অনেক যাত্রীর থুতনি ও গলায় মাস্ক ঝুলতে দেখা গিয়েছে।
বনগাঁ, হাবড়া, বারাসতের মতো বড় স্টেশনগুলিতে পুলিশি নিরাপত্তা থাকলেও ট্রেনের কামরায় পুলিশ চোখে পড়েনি বলেই জানালেন যাত্রীরা।
চালু হওয়ার পর প্রথম দু’একদিন তেমন ভিড় হয়নি। তবে শুক্রবার থেকে ফের ক্যানিং লোকালের চেনা চেহারা ফিরতে শুরু করেছে। শনিবারও ট্রেনে বেশ ভিড় হয়।
ভোর ৩.৪৫ মিনিটের আপ ক্যানিং-শিয়ালদহ লোকালে আগের মতো ভিড় হয়েছে। ভোরের এই ট্রেনে ক্যানিং থেকে প্রচুর মাছ ব্যবসায়ী কলকাতা যান। প্রথম দু’দিন এঁরা সে ভাবে বেরোননি। তবে এখন প্রায় সকলেই কলকাতায় যাচ্ছেন।
নিত্যযাত্রীদের বড় অংশও ট্রেনে যাতায়াত শুরু করে দিয়েছেন। ক্যানিং থেকে প্রচুর গৃহসহায়িকা কলকাতায় কাজে যান। প্রাথমিক ভাবে কাজে বেরোনো নিয়ে অনেকের কিছুটা অনিশ্চয়তা ছিল। তবে এখন আবার অধিকাংশই বেরোতে শুরু করেছেন।
আপের পাশাপাশি ডাউন ট্রেনগুলিতেও ভিড় হচ্ছে। নিত্যযাত্রী সুভাষ সর্দার বলেন, “ট্রেনই আমাদের অন্যতম ভরসা। গত ক’মাস খুব সমস্যায় ছিলাম। বুধবার থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও প্রথম দু’দিন ট্রেনে চাপিনি। শুক্রবার থেকে আবার ট্রেনেই যাচ্ছি। তাতে যাতায়াতের খরচ কম। সময়ও কম লাগে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy