‘‘আরও কত জঞ্জাল দেখতে চান? সামনের দিকে এগিয়ে যান!’’ রাস্তার মাঝ বরাবর নেমে আসা আবর্জনার স্তূপের সামনে দাঁড়াতে এমনই মন্তব্য করলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কারণ, ভাগাড় উচ্ছেদ কমিটির আন্দোলনের জেরে টানা ২৮ দিন ধরে পানিহাটি পুরসভায় জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজ বন্ধ রয়েছে। যার ফলে গোটা পুর এলাকার বড় রাস্তাগুলি কার্যত ছোটখাটো ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
পানিহাটির রামচন্দ্রপুর এলাকা থেকে ভাগাড় সরানোর দাবিতে গত ২৮ দিন ধরে আন্দোলন চালাচ্ছেন সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা। ভাগাড়ে যাওয়ার রাস্তার উপরে রিলে পদ্ধতিতে চলছে অবস্থান-বিক্ষোভ। ঘন জনবসতিপূর্ণ ওই এলাকা থেকে ভাগাড় অন্যত্র সরানোর দাবিতে প্রায় ৫০ বছর ধরে আন্দোলন চললেও কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ। তাই এ বার নিজেদের অবস্থান থেকে সরতে নারাজ বাসিন্দারা। কয়েক সপ্তাহ ধরে এমন অচলাবস্থা চললেও সমস্যার সমাধানে পুর কর্তৃপক্ষের তেমন কোনও হেলদোল দেখা যায়নি বলেই অভিযোগ পানিহাটির অন্যান্য এলাকার বাসিন্দাদের। প্রকাশ্যে মুখ খুলতে না চাইলেও পুর কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট পুরপ্রতিনিধিদের একাংশও। তাঁদের কথায়, ‘‘এক-দু’দিন নয়, প্রায় এক মাস ধরে আবর্জনা ফেলা নিয়ে সমস্যা চলছে। কিন্তু পুর কর্তৃপক্ষের কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই।’’
যদিও পানিহাটির পুরপ্রধান মলয় রায় দাবি করেছেন, বিষয়টি পুরমন্ত্রী এবং প্রশাসনের সমস্ত স্তরে জানানো হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরাও তো সমস্যায় রয়েছি। আশা করছি, দ্রুত সমাধান হবে।’’ কিন্তু পুরপ্রতিনিধিদের একাংশ থেকে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, সেই দিনটা কবে আসবে? বিরোধীদের দাবি, পানিহাটি জুড়ে অপদার্থ প্রশাসন চলছে। পরিস্থিতি যে ভাল নয়, তার আভাস মিলেছিল দিনকয়েক আগেই। পুরপ্রধান কোনও কাজ করছেন না বলে অভিযোগ তুলে খোদ শাসকদলের পুরপ্রতিনিধিরাই বোর্ড মিটিং থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।
বি টি রোড-সহ এলাকার অলিগলি, এমনকি অন্যান্য বড় রাস্তা— সর্বত্রই ডাঁই করা রয়েছে পূতিগন্ধময় আবর্জনা। সোদপুর-মধ্যমগ্রাম রোডে কয়েক হাত অন্তর আবর্জনার স্তূপ। সুশীলকৃষ্ণ বয়েজ় স্কুলের গেটের পাশেই আবর্জনার ভাগাড় তৈরি হয়েছে। কাপড়ে নাক ঢেকে যাওয়ার সময়ে এক মহিলা বললেন, ‘‘এ বার বাড়িতেও আবর্জনার পাহাড় হবে। ময়লা নিতেই তো আসছে না।’’ আবার আর এন অ্যাভিনিউ, পঞ্চাননতলায় রাস্তার মাঝ বরাবর চলে এসেছে আবর্জনার স্তূপ। এক দোকানি বলেন, ‘‘গোটা পানিহাটিতে যে দিকেই যত এগোবেন, ততই জঞ্জাল দেখতে পাবেন।’’
বাসিন্দাদের বক্তব্য, রামচন্দ্রপুরের লোকজন দীর্ঘদিন ধরেই ভাগাড় সরানোর দাবিতে সরব। অথচ, জমি-জটের কথা বলে চুপ করে থেকেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকার এবং পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে কথা বলেছি। কলকাতা পুরসভার ভাগাড়ে আপাতত পানিহাটির আবর্জনা ফেলা যায় কি না, তা মন্ত্রী দেখছেন। পাশাপাশি, আন্দোলনকারীদের আন্দোলন থেকে বিরত করার বিষয়টিও রাজ্য সরকার দেখবে।’’
বিজেপির উত্তর কলকাতা জেলা কমিটির সহ-সভাপতি কৌশিক চট্টোপাধ্যায় শুক্রবার
সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বলেন, ‘‘গোটা পানিহাটি জঞ্জালের স্তূপের উপরে দাঁড়িয়ে আছে। আসলে বিধায়ক এই সমস্যা তৈরি করিয়েছেন, যাতে অন্যদের অযোগ্য প্রমাণ করে নিজের ছেলেকে পুরপ্রধান করতে পারেন।’’ যদিও বিধায়ক নির্মল ঘোষের দাবি, ‘‘বিজেপি অবান্তর কথা বলছে। দীর্ঘদিন ধরে আমি ভাগাড় উচ্ছেদ আন্দোলনে শামিল। চারটি পুরসভাকে নিয়ে
কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের জন্য মুখ্যমন্ত্রী ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। সেই কাজ করতে একটু সময় লাগছে।’’
বৃহস্পতিবার বি টি রোড ধরেই পানিহাটির উপর দিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘উনিও নিশ্চয়ই এই দুরবস্থা দেখেছেন।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)