—প্রতীকী ছবি।
কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীর ‘কুনজর’ পড়েছিল স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়া বছর তিরিশের এক মহিলার উপরে। তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাবে মুখের উপরে ‘না’ বলার খেসারত দিতে হয়েছে কাঁকিনাড়ার ওই বধূকে। সেই সহকর্মীর ছোড়া অ্যাসিডে ঝলসে গিয়েছে শরীর। গত ১ ফেব্রুয়ারির সেই ঘটনায় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ তাঁর জন্য ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে। সোমবার, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সেই খবর পেয়ে ওই মহিলার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া, ‘‘টাকা হয়তো আমার অভাব কিছুটা ঘোচাবে। কিন্তু আমি চাই ওর শাস্তি হোক।’’
গত ১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বিধাননগর স্টেশনের অদূরে একটি ডাল কারখানায় কাজকর্ম সেরে স্টেশনে যাচ্ছিলেন ওই মহিলা। অভিযোগ, রাস্তায় তাঁর উপরে অ্যাসিডের বোতল ছোড়ে সুধীর মুখিয়া নামে এক যুবক। পুড়ে যায় তাঁর মুখ, পিঠ, হাত ও পায়ের একাংশ।
ওই মহিলার কথায়, ‘‘ওই কারখানায় আমিই একমাত্র মহিলা কর্মী ছিলাম। অনেক দিন ধরেই ছেলেটা আমাকে কুপ্রস্তাব দিচ্ছিল। আমি তাকে পরিষ্কার জানিয়ে দিই, খেটে খেতে এসেছি। আমি রাজি না-হওয়ায় ও রেগে ছিল। কিন্তু এর জন্য ও অ্যাসিড ছুড়বে, তা ভাবিনি।’’
গুরুতর জখম ওই মহিলাকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। উল্টোডাঙা থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। থানার এক আধিকারিক জানান, সুধীর-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তে জানা গিয়েছে, সুধীরের বন্ধু অজিত পাল অ্যাসিড কিনে এনেছিল। বিক্রি করেছিল সুভাষ ভৌমিক নামে এক জন। তাদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন ধৃতেরা জেল হেফাজতে। থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার ২৬ দিনের মাথায় শিয়ালদহ আদালতে চার্জশিট জমা পড়েছে।
আর জি করে কয়েক দিন চিকিৎসা চলার পরে এখন ওই মহিলা রয়েছেন তাঁর বাবার বাড়িতে। তিনি বলেন, ‘‘সুধীরও ওই কারখানায় কাজ করত। মাঝেমধ্যেই আমাকে ওর সঙ্গে যেতে বলত। রাজি না হওয়ায় ও কারখানার লোকজনকে বলেছিল, কেন এক জন মেয়ে এতগুলো ছেলের মধ্যে কাজ করবে। ও চাইছিল, আমাকে তাড়িয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু কারখানার লোকজন তা করেননি। উল্টে মদ খেয়ে কাজে আসায় ওকেই তাড়িয়ে দেওয়া হয়। তাই ও রাগে ফুঁসছিল।’’
ওই মহিলা জানান, এখন প্রতিদিন ৭০০ টাকা খরচ করতে হয় ওষুধের জন্য। ‘ড্রেসিং’-এর খরচ ২৫০ টাকা। তিনি বলেন, ‘‘বাবা চটি-জুতো সেলাইয়ের কাজ করেন। এত টাকা পাব কোথায়?’’ গত মাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণের আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি। সেই আর্জি মঞ্জুর হয়েছে।
জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘গত শুক্রবার ‘ক্রিমিন্যাল ইনজুরিজ় কম্পেনসেশন বোর্ড’-এর বৈঠকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ লক্ষ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।’’ এই খবরে খুশি আক্রান্ত মহিলা। বলেন, ‘‘ওই টাকায় চিকিৎসা করাব। যদি কিছু বাঁচে, তা দিয়ে পেট চালাব। আমি চাই, ওই ছেলেটা শাস্তি পাক। ওকে শাস্তি দেওয়ার লড়াই লড়ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy