উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরে গত ৩ ফেব্রুয়ারি উদ্ধার হয়েছিল হজরত লস্কর নামে এক যুবকের মুন্ডুহীন দেহ। ওই ঘটনার তদন্তে ফের চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে পেল পুলিশ। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রমাণ লোপাট করতে হজরতের দেহ পুড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন অভিযুক্ত জলিল। সে জন্য কেরোসিনও কিনেছিলেন তাঁরা। কিন্তু শেষমেশ কেরোসিন কম পড়ে যাওয়ায় দেহ অর্ধদগ্ধ অবস্থায় ফেলে রেখেই পালাতে হয় জলিলকে।
তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, ধৃত জলিল ও তাঁর স্ত্রী সুফিয়াকে জেরায় জানা গিয়েছে, কাজিপাড়ার একটি দোকান থেকে কেরোসিন কিনেছিলেন তাঁরা। শনিবার ধৃতদের সেই দোকানে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুননির্মাণ করেছে পুলিশ। জেরায় জলিল জানিয়েছেন, তিনি মোট এক লিটার কেরোসিন কিনেছিলেন। খুনের পর মাঠের মধ্যে কেরোসিন ঢেলে হজরতের দেহ সম্পূর্ণ ভাবে জ্বালিয়ে দেওয়াই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কেরোসিন কম পড়ে যায়। ফলে অর্ধদগ্ধ অবস্থায় দেহ ফেলেই চলে আসতে হয় জলিলকে। পাশাপাশি জানা গিয়েছে, খুনের পর হজরতের মোবাইলটি পাশের এক নয়ানজুলিতে ফেলে দিয়েছিলেন সুফিয়া। মোবাইল থেকে সিমটি বার করে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল বেগুন ক্ষেতে। তদন্তে নেমে এ বার সেই সিমের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি দত্তপুকুর থানার ছোট জাগুলিয়ার মালিয়াকুর বাজিতপুর এলাকার একটি ফাঁকা জমিতে ওই যুবকের মুন্ডুহীন দেহ দেখতে পান কৃষকেরা। মৃতের হাত-পা বাঁধা ছিল। উপড়ে নেওয়া হয়েছিল যৌনাঙ্গ। সেই থেকেই শুরু হয় কাটা মুন্ডুর খোঁজ। সে জন্য বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়। ডুবুরিও নামানো হয় খালে। ক্রমে মৃতের বাম হাতে আঁকা উল্কির সূত্র ধরে যুবকের নাম-পরিচয় জানা যায়। এর পর গত ১২ ফেব্রুয়ারি উত্তর ভারতের জম্মু থেকে খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত জলিলকে গ্রেফতার করে বারাসত থানার পুলিশ। সঙ্গে গ্রেফতার হন জলিলের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন, হজরতের মামাতো ভাই ওবায়দুল গাজি এবং তাঁর স্ত্রী পূজা দাস। শেষমেশ গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বামনগাছি স্টেশন সংলগ্ন একটি ডোবা থেকে হজরতের কাটা মুন্ডু উদ্ধার হয়। জানা যায়, নিহত হজরতের সঙ্গে সুফিয়ার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। স্ত্রীর সঙ্গে হজরতের যৌনসম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি জলিল। পরবর্তী কালে সম্পর্কে আপত্তি জানাতে শুরু করেছিলেন সুফিয়াও। অভিযোগ, সুফিয়াকে শারীরিক অত্যাচার করতেন হজরত। এর পরেই স্বামী-স্ত্রী দু’জনে মিলে হজরতকে খুনের পরিকল্পনা করেন।