শংসাপত্রে সই করছেন পঞ্চায়েত প্রধান মোদাসের হোসেন। নিজস্ব চিত্র
কেউ রাত থাকতে লাইন দিচ্ছেন ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিসে। কেউ বাড়ির পুরনো নথিপত্র উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। ভোটার কার্ড, আধার কার্ড সংশোধনের ধুম পড়েছে দিকে দিকে। কারণ, এনআরসি-সিএএ আতঙ্ক।
পরিচয়পত্র তৈরি বা ভোটার কার্ড, আধার কার্ডে সংশোধনের জন্যও উঠেপড়ে লেগেছেন মানুষ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বারই বলছেন, এ রাজ্যে এনআরসি বা সিএএ চালু করতে দেবেন না। কিন্তু তারপরেও প্রশাসনিক ভাবে গ্রামগঞ্জে সে ভাবে প্রচার না থাকায় মানুষ আতঙ্কিত। এরই মধ্যে ভাঙড় ২ ব্লক এলাকায় কয়েক দিন ধরে গুজব ছড়িয়েছে, ভোটার কার্ড বা আধার কার্ডের পাশাপাশি পঞ্চায়েত থেকে স্থায়ী বসবাসের শংসাপত্র প্রয়োজন। এই পরিস্থিতিতে ভোর থেকে বিভিন্ন পঞ্চায়েত অফিসের সামনে ওই শংসাপত্র পাওয়ার জন্য ভিড় জমাচ্ছেন মানুষ।
গত কয়েক দিন ধরে ভোগালি ২ পঞ্চায়েত অফিসের সামনে স্থায়ী বসবাসের শংসাপত্র পাওয়ার জন্য ভিড় জমছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, পঞ্চায়েতের ছাপানো শংসাপত্রে ছবি, সিলমোহর মেরে খালি শংসাপত্রে প্রধান সই করে দিচ্ছেন। সেই শংসাপত্র মানুষজন বাইরে গিয়ে নিজেদের মতো পূরণ করে নিচ্ছেন। শংসাপত্র দেওয়ার জন্য পঞ্চায়েতের তরফে শংসাপত্র নিতে আসা লোকজনের আধার কার্ড, ভোটার কার্ডটুকু দেখতে পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে না বলে জানা গেল।
কিন্তু যে যাচ্ছে তাকেই এ ভাবে ঢালাও ভাবে স্থায়ী বাসিন্দার শংসাপত্র দেওয়া কী আইনসঙ্গত হচ্ছে?
ভোগালি ২ পঞ্চায়েতের প্রধান মোদাসের হোসেন বলেন, ‘‘প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে মানুষজনের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, ব্যাঙ্কের পাস বই, জমির কাগজপত্রে নামের বানান, ঠিকানা ভুল রয়েছে। ওই সব কাগজপত্র সংশোধন করতে গেলে সাধারণ মানুষকে বলা হচ্ছে, প্রধানের কাছ থেকে স্থায়ী বাসিন্দার শংসাপত্র নিয়ে এসো। তা ছাড়া, মানুষের মধ্যে এনআরসি নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সে কারণেই স্থানীয় মানুষ স্থায়ী বাসিন্দার শংসাপত্রের জন্য পঞ্চায়েত অফিসে ভিড় জমাচ্ছেন। বাধ্য হয়ে আমাদের শংসাপত্র দিতে হচ্ছে।’’
যদিও ভাঙড় ২ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা ব্লক তৃণমূল সভাপতি ওহিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা এই কাজের সমর্থন করি না। কী কারণে প্রধান এ ভাবে ঢালাও শংসাপত্র দিচ্ছেন, তা খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
বানিয়াড়া গ্রামের শীলা ঘোষ, উর্মিলা ঘোষরা বলেন, ‘‘গ্রামের সকলেই বলছে, এনআরসি চালু হলে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবে। সে ক্ষেত্রে আধার কার্ড, ভোটার কার্ডের পাশাপাশি স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে শংসাপত্র পেলে হয় তো আর দেশ থেকে তাড়াতে পারবে না। তাই গ্রামের সকলের মতো আমরাও স্থায়ী বাসিন্দার শংসাপত্র নিতে এসেছি।’’ পূর্ব কাঁঠালিয়ার বাসিন্দা নূর মহম্মদ মোল্লা বলেন, ‘‘এলাকার প্রধানই তো ভাল জানেন, আমরা এই এলাকার বাসিন্দা কিনা। তাই ওঁর কাছ থেকে স্থায়ী বাসিন্দার শংসাপত্র নিয়ে রাখছি।’’
এ বিষয়ে ভাঙড় ২ বিডিও কৌশিককুমার মাইতি বলেন, ‘‘আমি শুনেছি কিছু মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে স্থায়ী বাসিন্দার শংসাপত্রের জন্য পঞ্চায়েত অফিসে ভিড় করছেন। অযথা যাতে মানুষ বিভ্রান্ত না হন, সে জন্য আমরা এলাকায় মাইকে প্রচারের ব্যবস্থা করছি। পঞ্চায়েত অফিসগুলিকে বলেছি, যাতে মানুষ বিভ্রান্ত না হন সে জন্য নোটিস টাঙিয়ে দিতে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy