প্রতীকী চিত্র।
কেউ বলছেন, আমপানে ক্ষতিগ্রস্তদের থেকে কাটমানি আদায় করতে যাতে কেউ না-পারে, তার জন্য তৃণমূলের এই পদক্ষেপ। কারও মতে, এটি শাসকদলের ‘ভাবমূর্তি’ উদ্ধারের চেষ্টা। আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজনের কাছে অচেনা নম্বর থেকে আসা ফোন নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা জল্পনা।
ঘটনা ১: গত বুধবার দুপুরের খাওয়া শেষ করে সবে দাওয়ায় বসেছেন ডায়মন্ড হারবার-১ ব্লকের বোলসিদ্ধি-কালীনগর পঞ্চায়েতের বাসিন্দা আনারুল মোল্লা। মোবাইল ফোনটা হঠাৎ বেজে উঠল। মোবাইলের পর্দায় ভেসে উঠল অচেনা এক নম্বর। ফোন ধরতেই উল্টো দিক থেকে অপরিচিত এক ব্যক্তি জানতে চাইলেন, আমপানের ক্ষতিপূরণের টাকা কি তিনি পেয়েছেন। উত্তরে ‘না’ শোনার পরে এল দ্বিতীয় প্রশ্ন: ক্ষতিপূরণ পাওয়া কোনও ব্যক্তির থেকে টাকার ভাগ চাওয়া হয়েছে, এমন কোনও ঘটনার কথা কি তাঁর জানা আছে। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে, আনারুল জানান, এমন কিছু তাঁর জানা নেই। আনারুল বলেন, ‘‘আমি ওই ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাই। তিনি বলেন, শাসকদলের এক সাংসদের কার্যালয় থেকে বলছেন। তখন তাঁকে বলি, আমি একটি ত্রিপলও পাইনি। অথচ এমন অনেকে আছে, যাঁদের ঘরের সামান্য ক্ষতি হলেও তাঁরা ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন।’’
ঘটনা ২: ওই ব্লকেরই বাসিন্দা আশাদুল্লা পাইকেও সে দিন ওই নম্বর থেকেই ফোন করা হয়েছিল। আমপানে ঘরের চাল উড়ে গিয়েছিল আশাদুল্লার। ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন কিনা, তা তাঁর থেকে জানতে চান প্রশ্নকর্তা। উত্তরে ‘হ্যাঁ’ শোনার পরে তাঁর থেকে জানতে চাওয়া হয়, সেই টাকার ভাগ কি কেউ আশাদুল্লার থেকে চেয়েছে। উত্তরে ‘না’ বলেন তিনি। আশাদুল্লার কথায়, ‘‘ওই ব্যক্তি বলেন, তিনি শাসকদলের এক সাংসদের অফিস থেকে ফোন করছেন। ক্ষতিপূরণ নিয়ে নানা প্রশ্ন করেন। অবাক হয়ে দেখলাম যে, উনি আমার বাড়ির ঠিকানা, বুথ নম্বর, পঞ্চায়েত সদস্যের নাম— সবই জানেন। তাঁকে বলি, আমি পাঁচ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছি। কাউকে টাকার ভাগ দিতে হয়নি। তবে সঙ্গে এ-ও বলেছি, যাঁরা ২০ হাজার টাকা পেয়েছেন, তাঁদের অনেকের থেকে ক্লাব করার নামে টাকা নেওয়া হয়েছে।’’
ঘটনা ৩: ডায়মন্ড হারবার-১ ব্লকের যাটমনিসা গ্রামের সুবারুদ্দিন মোল্লার মোবাইলেও ফোন এসেছিল বুধবার। ফোন নম্বর, প্রশ্ন এবং প্রশ্নকর্তা— সবই এক। সুবারুদ্দিন বলেন, ‘‘পরিচয় জানতে চাইলে ওই ব্যক্তি বলেন, শাসকদলের এক সাংসদের কার্যালয় থেকে ফোন করা হয়েছে।’’
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, যে নম্বর থেকে ফোন এসেছিল ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে, সেই নম্বরে আবার ‘ইনকামিং কল’ এর সুবিধা নেই। ফলে, গোটা ঘটনা নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে ডায়মন্ড হারবারে। ঘটনাচক্রে, ওই কেন্দ্রের সাংসদ আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এলাকাবাসী এবং স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তেরা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন কিনা, এবং পেলে তাঁদের থেকে কেউ ‘কাটমানি’ চাইছেন কিনা, তার জানতেই এই পদক্ষেপ। অনেকে আবার এই প্রক্রিয়া ‘ভোটকুশলী’ পিকে-র মস্তিষ্কপ্রসূত বলে মনে করছেন।
কে বা কারা ফোন করে ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত বিষয় জানতে চেয়ে ফোন করছেন, তা জানা নেই ব্লক প্রশাসনের। বারবার ফোন করেও জেলাশাসক পি উলগানাথনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। গোটা বিষয়টি লিখে হোয়াটস্অ্যাপে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়। সেই মেসেজের-ও উত্তর আসেনি। বিডিও (ডায়মন্ড হারবার-১) মিলনতীর্থ সামন্ত বলেন, ‘‘শুনেছি, ক্ষতিপূরণ সম্পর্কে জানতে চেয়ে কয়েকজনকে ফোন করা হয়েছে। তবে ব্লক প্রশাসনের তরফে এই ধরনের কোনও ফোন কাউকে করা হয়নি। হয়ত, অন্য কোনও স্তর থেকে ফোন করা হয়েছিল।’’
তবে কি শাসকদলের তরফে নজরদারি চলছে? উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ কিছুই বলেননি জেলা তৃণমূল সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তী। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘সবকিছুর উপরেই দল ও প্রশাসন নজর রাখছে। দলের পরিষ্কার নির্দেশ রয়েছে, কোনও উপভোক্তার থেকে টাকা দাবি করা যাবে না। এই নির্দেশ অমান্য করলে শাস্তি পেতে হবে। আমাদের কাছে একাধিক অভিযোগ এসেছিল। চার জনকে শো-কজ়ও করা হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy