শোকার্ত: স্বামীর মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন স্ত্রী। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র
স্বামী উৎপল বিশ্বাসের মৃত্যুতে নিজের মামা-মামি-সহ আটজনের নামে মারধর, আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের করলেন স্ত্রী আজমিরা সর্দার।
বৃহস্পতিবার সকালে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের শৌচালয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন উৎপল। বুধবার রাতে ক্যানিংয়ের আঁধলা গ্রামে শ্বশুরবাড়ি থেকে টেনে বের করে তাঁকে নারী পাচারকারী অপবাদ দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। আজমিরার মামা-মামি ও স্থানীয় কিছু লোকজনই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ আজমিরার। পরে উৎপলের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় হাসপাতাল থেকে। অপমানেই ওই যুবক আত্মঘাতী হয়েছেন বলে অনুমান পুলিশের। মামা গোলাম মোস্তফা মণ্ডল ওরফে হারান, মামি সাজিদা মণ্ডল-সহ আটজনের নামে ক্যানিং থানায় অভিযোগ করেছেন আজমিরা। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। স্বামীর মৃত্যুর ভেঙে পড়েছেন আজমিরা। মাঝে মধ্যেই জ্ঞান হারাচ্ছেন। কখনো ছোট সন্তানকে বুকে জড়িয়ে কাঁদছেন। শুক্রবার দুপুরে আঁধলা গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, বাড়িতে পড়শিদের ভিড়। কাঁদতে কাঁদতে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে চলেছেন আজমিরা। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষটা খুব ভাল ছিল। আমাকে ভালবাসত। উদ্ধার করে এনে সংসার পাতল। সেই মানুষটাকেই এমন অপবাদ দিয়ে মারধর ওরা।’’ মামা-মামি ছাড়াও স্থানীয় বাসিন্দা মজিদ গাজি, রাজু গাজি, আলম গাজি, মনা সর্দার ছাড়াও আরও কয়েকজন মারধর করেছে বলে অভিযোগ তাঁর।
আজমিরা জানান, মামি তাঁকে পঞ্চাশ হাজার টাকায় দিল্লিতে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে উৎপল তাঁকে উদ্ধার করে ফিরিয়ে আনেন। পরিবারের অনুমতি নিয়েই বিয়ে করেন। আজমিরার দাবি, সুখের সংসার সহ্য করতে পারেনি মামা-মামি। স্থানীয় সূত্রে পুলিশ জানতে পেরেছেন, প্রতিদিন ভোরে কলকাতায় কাজে যায় আজমিরার মামি সাজিদা। এর আগেও একাধিকবার এলাকার মেয়েদের বিভিন্ন জায়গায় কাজের নাম করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। দিন কয়েক আগে এলাকার এক কিশোরী নিখোঁজ হয়। দু’তিনদিন কেটে গেলেও বাড়ি ফিরে না আসায় পরিবারের লোকজন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য-সহ এলাকার মানুষকে বিষয়টি জানান। সেই ঘটনায় সাজিদাকে সন্দেহ করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন স্থানীয় মানুষজন। কিন্তু সাজিদা কৌশলে ওই কিশোরীকে পাচারের দায় চাপিয়ে দেয় ভাগ্নিজামাই উৎপলের উপরে।
বুধবার রাতে এলাকার মানুষজন শ্বশুরবাড়ি থেকে উৎপলকে টেনে বের করে কিশোরীর সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে। উৎপল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তারপরেও তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। কিন্তু ঘটনার কথা অস্বীকার করলে তাকে আজমিরার সামনেই বেধড়ক মারধর করে সকলে।
বছর তিনেক আগে সাজিদার সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন আজমিরা। সে সময়ে ক্যানিং থানায় সাজিদার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন আজমিরার মা খতেজান সর্দার। কয়েক মাস বাদে উৎপল তাঁকে ফিরিয়ে আনেন।
সাজিদার পাল্টা বক্তব্য, কাজের লোভ দেখিয়ে আজমিরা ও তাঁর স্বামী সাজিদা ও তার সন্তানদের দিল্লিতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সাজিদার কথায়, ‘‘ওদের মতলব ভাল নয় বুঝতে পেরে পালিয়ে আসি।’’ ঘটনার কথা পুলিশকে কেন জানায়নি, তা নিয়ে সদুত্তর নেই সাজিদার কাছে। মামির তোলা অভিযোগ অস্বীকর করেছেন আজমিরাও। নারী ও শিশু পাচারের বিরুদ্ধে কাজ করে একটি সংস্থা। তার সদস্য নিহার রপ্তান বলেন, ‘‘প্রতি বছর ক্যানিং মহকুমা থেকে শ’খানেক নারী ও শিশুকে পাচারের অভিযোগ পুলিশ-প্রশাসনের কাছে জমা পড়ে। কখনও কাজের টোপ দিয়ে, কখনও প্রেমের ফাঁদে ফেলে পাচার চলে। মানুষজন সচেতন না হলে পাচার পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy