Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
পরপর বিপর্যয় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গিয়েছে, সুন্দরবনের জন্য কতটা প্রয়োজন ম্যানগ্রোভ। মুখ্যমন্ত্রী-সহ রাজ্যের একাধিক মন্ত্রীর মুখে বারবার শোনা গিয়েছে ম্যানগ্রোভের গুরুত্বের কথা। বেআইনিভাবে ম্যানগ্রোভ কাটলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বারবার বলা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। কিন্তু তারপরেও সুন্দরবনবাসীকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে নির্বিচারে ম্যানগ্রোভ ধ্বংস চলছে নানা জায়গায়। খোঁজ নিল আনন্দবাজার। আজ প্রথম কিস্তি।
namkhana

নামখানায় ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করে গড়া হচ্ছে মেছোভেড়ি

সুন্দরবন রক্ষায় ম্যানগ্রোভের অবদান প্রচুর। গত কয়েক বছরে পর পর দুর্যোগে, অনেক ক্ষেত্রেই ঝড়ের মুখে বাঁধের ভাঙন রুখে দিয়েছে ম্যানগ্রোভ।

বেআইনি: এখানেই ম্যানগ্রোভ কেটে গড়ে উঠছে ভেড়ি। নিজস্ব চিত্র

বেআইনি: এখানেই ম্যানগ্রোভ কেটে গড়ে উঠছে ভেড়ি। নিজস্ব চিত্র

সমরেশ মণ্ডল
নামখানা শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১০:০৩
Share: Save:

বিঘের পর বিঘে জমির ম্যানগ্রোভ কেটে তৈরি হচ্ছে মাছের ভেড়ি। নামখানার লালপুল এলাকার সুন্দরিকা-দোয়ানিয়া খালের দু’পাশে নির্বিচারে ম্যানগ্রোভ নিধন চলছে বেশ কিছুদিন ধরেই। রাতে মেশিন দিয়ে গাছ কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকার মানুষের। স্থানীয়দের দাবি, প্রভাবশালীদের মদতেই এ ভাবে ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করে মেছো ভেড়ি তৈরির কাজ চলছে। নজর নেই প্রশাসনের। নামখানার চন্দ্রনগর, চন্দনপিড়ি, হরিপুর এলাকাতেও একইভাবে ম্যানগ্রোভ কেটে বেআইনি মেছোভেড়ি তৈরি হয়েছে বলে জানান স্থানীয়েরা।

সুন্দরবন রক্ষায় ম্যানগ্রোভের অবদান প্রচুর। গত কয়েক বছরে পর পর দুর্যোগে, অনেক ক্ষেত্রেই ঝড়ের মুখে বাঁধের ভাঙন রুখে দিয়েছে ম্যানগ্রোভ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ম্যানগ্রোভ রোপণে গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশে আমপান-ইয়াস পরবর্তী সময়ে সুন্দরবন জুড়ে কয়েক কোটি নতুন ম্যানগ্রোভের চারা রোপণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তরফে বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে দিয়ে ম্যানগ্রোভের চারা তৈরি ও রোপণের কাজ চলছে নিয়মিত। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, “সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে ১২.৫১ কোটি ম্যানগ্রোভ লাগানো হয়েছে। বন দফতরের সহযোগিতায় ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের মাধ্যমে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের দিয়ে এই কাজ হয়েছে।”

এর মধ্যেই নামখানায় ম্যানগ্রোভ ধ্বংস চলছে নির্বিচারে। ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ছে। পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “বারে বারে সুন্দরবনে উপকূলীয় আইন ভাঙা হচ্ছে। সুন্দরবন না থাকলে আগামিদিনে কলকাতাও থাকবে না। প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে ব্যাবস্থা নেওয়া।” স্থানীয় বিজেপির যুব সভাপতি স্নেহাশিস গিরির অভিযোগ, “শাসক দলের ছত্ৰছায়ায় থাকা মানুষজনেরাই প্রশাসনের সহযোগিতায় দিনের পর দিন ম্যানগ্রোভ কেটে চলেছেন। সরকার সুন্দরবনের উপকূলীয় এলাকার মানুষদের বাঁচানোর জন্য ম্যানগ্রোভ লাগাচ্ছে আর এখানে বেআইনি ভাবে কেটে মাছ চাষ চলছে। কে কার বিচার করবে!”

স্থানীয় সূত্রের খবর, নামখানায় যে জমিতে ভেড়ি তৈরির কাজ চলছে, তার বেশির ভাগই সেচ দফতরের। বাকি জমির মালিক জেলা প্রশাসন। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান অনুপমা শীট বলেন, “আমার এরকম কিছু জানা ছিল না। যদি কেউ কিছু করে থাকে, তাহলে আমার পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা নেব।” গঙ্গাসাগর বকখালি উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান শ্রীমন্ত মালির দাবি, “৮-১০ বছর আগে মাছের ভেড়ি হয়েছিল। নতুন ভেড়ি হচ্ছে না।”

দক্ষিণ ২৪ পরগনা বনবিভাগের বিভাগীয় বন আধিকারিক মিলনকান্তি মণ্ডল বলেন, “বিষয়টি খতিয়ে দেখতে অধিকারিকদের পাঠাব। রিপোর্ট হাতে পেয়েই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, “এটা বেআইনি। অধিকারিকদের বলব দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।”

অন্য বিষয়গুলি:

namkhana Mangrove
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy