স্রোতহীন: এই অবস্থা দাঁড়িয়েছে ইছামতীর। মশার দাপট বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে সাপের উপদ্রবও। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
বনগাঁ মহকুমা জুড়ে জ্বর-ডেঙ্গির প্রকোপ বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মশার উপদ্রব। বিশেষ করে ইছামতী নদী সংলগ্ন এলাকায় মশার উৎপাত বেড়েছে বেশি। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, নদীতে কচুরিপানা থাকার কারণেই মশার এ হেন দৌরাত্ম্য। দ্রুত নদী কচুরিপানা মুক্ত করা না গেলে জ্বর-ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে বলেই মত অনেকের।
বনগাঁ ব্লকের গোপালনগর ২ পঞ্চায়েতের নতুনগ্রাম এলাকায় নদী ভরে উঠেছে কচুরিপানায়। দূর থেকে দেখলে সবুজ মাঠ বলে ভুল হতে পারে। জল নেই। কচুরিপানার মধ্যেই গজিয়ে উঠেছে ঘাস, আগাছা। নদীর অন্য পাড়ে শুকপুকুরিয়া গ্রাম। সে দিকেও নদীর একই চেহারা।
ওই কচুরিপানা এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বনগাঁ মহকুমার নদীপাড়ের বাসিন্দাদের। অনেকে জানালেন, কচুরিপানাই এখন মশাদের আদর্শ ‘আঁতুড়ঘর’। সন্ধ্যার পরে তো কথায় নেই। দিনের বেলাতেও মশার দৌরাত্ম্য সহ্য করা যাচ্ছে না।
বনগাঁর মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ইছামতী নদী থেকে কচুরিপানা তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিদ্যাধরী ড্রেনেজ ডিভিশনের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, শহর এলাকায় নদী থেকে শীঘ্রই কচুরিপানা তোলা শুরু হবে।’’ ইছামতী যমুনা সহ মহকুমার প্রধান নদীগুলি থেকে কচুরিপানা তোলার জন্যও পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মহকুমাশাসক।
এক ব্যক্তির বাড়িতে গোয়ালে গরু মশারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তিনি জানান, সন্ধ্যার পর ঘরের আলো জ্বালালেই নদী থেকে হু হু করে মশা উড়ে আসছে। ছেলেরা মশারির মধ্যে বসে লেখাপড়া করছে। গ্রামীণ এলাকায় বহু মানুষ গবাদি পশু বাড়িতে পোষেন। বিশেষ করে গরুদের মশার হাত থেকে বাঁচাতে গৃহকর্তারা গরুর জন্য মশা মারার তেল কিনে আনছেন। জলের সঙ্গে সেই তেল মিশিয়ে গরু ছাগলের শরীরে মাখিয়ে রাখছেন তাঁরা। একশো গ্রাম তেলের দাম ৯০ টাকা। অনেকে আবার গোয়ালে মশা মারতে গোবরের ধোঁয়া দিচ্ছেন।
মশার হাত থেকে বাঁচতে স্বাভাবিক ভাবে নদী পাড়ের বাসিন্দা ফের একবার নদী থেকে কচুরিপানা সরানোর দাবি তুলছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রামে কম বেশি মশা মারার কাজ হলেও নদীর মধ্যে মশা মারতে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। সম্প্রতি বৃষ্টি শুরু হওয়ার পরে মশার উপদ্রব আরও বেড়েছে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁ মহকুমায় ইছামতী নদী দত্তফুলিয়া থেকে বেড়ি গোপালপুর পর্যন্ত। দূরত্ব প্রায় ৬৫ কিলোমিটার। নদীর বিস্তীর্ণ অংশে রয়েছে কচুরিপানা। বনগাঁ পুরসভার এলাকাতেও নদীতে কচুরিপানা জমা হয়েছে। বনগাঁ শহর এলাকায় পুরসভার পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে ইছমতী নদী থেকে কচুরিপানা তুলে নদী পরিষ্কার করা হয়ে থাকে। কিছু দিন নদী পরিষ্কার থাকার পর ফের কচুরিপানা জমা হয়।
শহরের খয়রামারি এলাকার বাসিন্দা অচিন্ত্য ঘোষ বলেন, ‘‘নদীতে কচুরিপানার কারণে মশা তো বেড়েছে। স্নানও করা যাচ্ছে না। নদীর জল অন্য কাজেও লাগছে না।’’
মহকুমার বেশ কিছু গ্রামীণ এলাকার বহু দিন নদী থেকে কচুরিপানা তোলা হয় না। বেসরকারি উদ্যোগে বাগদার সিন্দ্রাণী পঞ্চায়েত এলাকায় কিছু কচুরিপানা তোলা হয়েছে। যা দিয়ে জৈব সার তৈরি করা হচ্ছে।
অতীতে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে কচুরিপানা তোলার কাজ হত। বহু দিন হল ওই প্রকল্পে কচুরিপানা তোলার কাজ প্রশাসন বন্ধ করে দিয়েছে। ইছামতীর পাশাপাশি যমুনা, কোদালিয়া, নাওভাঙা নদীতেও কচুরিপানা বহু দিনের সমস্যা। বাসিন্দারা মনে করছেন, নদীর জমাট কচুরিপানার মধ্যে ডেঙ্গি মশার লার্ভা জন্মাতে পারে। পাশাপাশি কচুরিপানার মধ্যে বিষাক্ত সাপেদের আনাগোনা দেখতে পেয়েছেন স্থানীয় মানুষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy