রুপোলি শস্যের খোঁজে মৎস্যজীবীরা চলেছেন গভীর সমুদ্রে। নিজস্ব চিত্র
গভীর সমুদ্রে ইলিশ ধরার মরসুম শুরু হচ্ছে আজ, সোমবার থেকে। সারা সুন্দরবন এলাকা থেকে প্রায় তিন হাজার ট্রলার পাড়ি দেবে গভীর সমুদ্রে। এখন রুপোলি শস্যের জোগানের সঠিক আবহাওয়া বলে মনে করছেন মৎস্যজীবীরা। তাই জালে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ মিলবে বলে আশা করছেন তাঁরা।
গভীর সমুদ্রে যাওয়া ট্রলারে সাধারণত ১৫-১৮ জন মৎস্যজীবী থাকেন। মাছ ধরা ট্রলার গভীর সমুদ্রে যাওয়ার আগে সরকারি নির্দেশ মেনে প্রতিটি মৎস্যজীবীর পরিচয়পত্র, লাইফ জ্যাকেট-সহ অন্য নথিপত্র নিজেদের কাছে রাখতে হয়। এ বার তার সঙ্গে সংযোজন হয়েছে, কিছু স্বাস্থ্য বিধিনিষেধও। প্রত্যেক মৎস্যজীবীকে মাস্ক পরতে হবে, ব্যবহার করতে হবে স্যানিটাইজ়ার। ট্রলার ঘাটে ফিরলে যে শ্রমিকেরা মাছ নামাবেন বা বরফ ট্রলারে তুলবেন, জাল সারাই করবেন— তাঁদেরও মাস্ক পরা আবশ্যক। মাছ ধরা ও ঘাটে নামানোর সময়ে হাতে গ্লাভস থাকতে হবে। ট্রলারে যাওয়ার আগে প্রত্যেক মৎস্যজীবীকে থার্মাল স্ক্রিনিং করা হবে। আবার তাঁরা ফিরে এলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। এ জন্য প্রতিটি ঘাটে তিন দিন করে স্বাস্থ্য শিবির চলবে। সে বিষয়ে মৎস্যজীবীদের সতর্ক করতে ঘাটে ঘাটে প্রচার করা হবে।
গত কয়েক বছরে পর পর ট্রলার দুর্ঘটনায় অনেক মৎস্যজীবী তলিয়ে গিয়েছিলেন। ওই দুর্ঘটনা যাতে পুনরায় না ঘটে, সে জন্য আবহাওয়া দফতরের নির্দেশ মেনেই সকলকে চলতে হবে।
কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, ‘‘সোমবার কাকদ্বীপ মহকুমার বিভিন্ন ঘাট থেকে প্রায় ৩ হাজার ট্রলার গভীর সমুদ্রে ইলিশ ধরতে যাবে। তবে বর্তমানে যা আবহাওয়া তাতে ঝাঁকে ঝাঁকে জালে ইলিশ আটকাবে বলে আশা করা যায়।’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সহ মৎস্য অধিকর্তা সামুদ্রিক জয়ন্ত প্রধান বলেন, ‘‘এ বার মোট ৯টি ঘাট থেকে ট্রলার যাবে। এর মধ্যে থাকছে তিনটি মৎস্য বন্দর ও ৬টি জেটি ঘাট। ওই ঘাটগুলিতে মৎস্যজীবীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকছে।’’ তিনি জানান, প্রতিটি ট্রলারে মৎস্যজীবীদের নথিপত্র রাখার পাশাপাশি লাইফ জ্যাকেট, লাইফ বয়া রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ওই সমস্ত ঘাটে মৎস্যজীবীদের সরকারি নিয়ম-কানুনের বিষয়ে সতর্ক করতে মাইকে প্রচার শুরু করে দেওয়া হয়েছে।
মৎস্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সারা সুন্দরবন এলাকায় কাকদ্বীপ, নামখানা, সাগর, পাথরপ্রতিমা, রায়দিঘি, কুলতলি, ডায়মন্ড হারবার, কুলপির বিভিন্ন ঘাট থেকে প্রতিবছর কয়েক হাজার মৎস্যজীবী ট্রলার নিয়ে গভীর সমুদ্রে যান। কেন্দ্রীয় ও রাজ্যে সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী, মাছের প্রজননের জন্য ১৫ এপ্রিল থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ৬২ দিন সমুদ্রে যাওয়া ও মাছ ধরা কঠোর ভাবে বারণ থাকে। কিন্তু এ বার লকডাউনের জেরে গত ২৪ মার্চ থেকে মাছ ধরা বন্ধ ছিল।
গত বছর সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাসের জেরে বেশ কিছু ট্রলার ডুবে যায়। মুখোমুখি ধাক্কা লেগে ভেঙেও গিয়েছিল কিছু ট্রলার। আমপানের ধাক্কায় সুন্দরবন এলাকায় বিভিন্ন ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় ২ হাজার ট্রলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নতুন ট্রলার তৈরি বা মেরামতির ভাল কারিগরেরা আসেন বর্ধমান, হুগলি ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলা থেকে। এ ছাড়া, ট্রলার সারানোর সরঞ্জাম আসে কলকাতা বড় বাজার থেকে। কিন্ত টানা লকডাউনের জেরে পরিবহণ বন্ধ থাকা নতুন ট্রলার তৈরির সরঞ্জাম যেমন আনা যায়নি। আসতে পারেননি কারিগরেরাও।
তবে এমন আবহাওয়া হওয়ায় এখন মৎস্যজীবীরা খুশি। তাঁরা মনে করছেন, টানা লকডাউনের জেরে নদী ও সমুদ্রে জলযান কম চলাচল করায় নদী ও সমুদ্রের জল অনেক স্বচ্ছ। সব মিলিয়ে জালে বেশি মাছ পড়ার আশায় সব পক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy