নদীর জলে আর্সেনিক মেলায় চিন্তায় পুরবাসী। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক Sourced by the ABP
স্রোত, নাব্যতা হারিয়ে ইছামতী নদী বনগাঁ মহকুমায় মৃতপ্রায় বহু দিন ধরে। এর মধ্যে ইছামতীর জলে উচ্চমাত্রায় আর্সেনিক মেলায় উদ্বেগ বেড়েছে প্রশাসনের।
বনগাঁ পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, পাইপ লাইনের মাধ্যমে ইছামতীর নদীর জল পরিস্রুত করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল পুরসভা। তাই নদীর জল পানের উপযুক্ত কি না তা দেখতে মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টরেট (এমইডি) ইছামতী জল পরীক্ষার জন্য খড়্গপুরে আইআইটির স্কুল অফ এনভায়ার্নমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরে পাঠায়। শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষা— তিনটি মরসুমে ইছামতীর জল আলাদা আলাদা করে পাঠানো হয়। সেখানকার ল্যাবরেটরিতে গত বছর জল পরীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। পুরসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে, পরীক্ষায় জানা গিয়েছে, ইছামতীর জলে উচ্চমাত্রায় আর্সেনিক রয়েছে।
আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ কমিটি সূত্রে জানানো হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) নিয়ম অনুয়ায়ী প্রতি লিটার জলে ০.০১ মিলিগ্রাম আর্সেনিক থাকলে তা স্বাভাবিক হিসাবে ধরা হয়। বনগাঁর পুরপ্রধান গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, গরমের সময়ে ইছামতীর জলে প্রতি লিটারে ২৭.৮-৩২.৩ মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিক থাকে। বর্ষায় জল বাড়লে আর্সেনিকের পরিমাণ কিছুটা কমে। সেই পরিমাণও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকগুণ বেশি।’’
রিপোর্ট মেলার পরে নড়চড়ে বসেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, শহরের দূষিত জল, শৌচাগারের জল ইছামতীতে গিয়ে পড়ে। সেই জলে উচ্চমাত্রায় আর্সেনিক থাকে। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘ইছামতীর জলে আর্সেনিকের পরিমাণ কমাতে আমরা পদক্ষেপ করছি।’’
কী সেই পরিকল্পনা?
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে বনগাঁ পুরসভা এলাকায় তিনটি জলাশয়কে বেছে নিয়ে সংস্কার করা হচ্ছে। সেখানে শহরের জমা জল, দূষিত জল, শৌচাগারের জল নিয়ে আসা হবে। এই জল পরিশোষিত করে তবেই তা ইছামতীতে ফেলা হবে। এই কাজের জন্য পুরসভা ইতিমধ্যেই ১০ কোটি টাকা হাতে পেয়েছে। পাশাপাশি, শোধিত জল ইছামতী নদীতে নিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন করে বেশ কিছু নিকাশি নালা তৈরির প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
ইছামতীর জলে আর্সেনিক মেলার বিষয়ে গবেষক, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তড়িৎ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক নিয়মে নদীর জলে উচ্চমাত্রায় আর্সেনিক থাকার কথা নয়। তবে ইছামতী যে এলাকা দিয়ে বয়ে গিয়েছে, সেগুলি আর্সেনিকপ্রবণ। এখানে ভূগর্ভস্থ জলে উচ্চ মাত্রায় আর্সেনিক আছে। নলকূপ বা চাষিদের শ্যালোর জলেও উচ্চমাত্রায় আর্সেনিক থাকে। সেই আর্সেনিক কোনও ভাবে ইছামতীর জলে মিশে গিয়ে থাকতে পারে।’’
আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ কমিটির রাজ্য সম্পাদক অশোক দাস বলেন, ‘‘এলাকার অনেকেই ইছামতী জল সেচের কাজে লাগান। ফসল, আনাজের মধ্যে দিয়ে আর্সেনিক মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তা ছাড়া, নদীতে স্নান করতে নেমে কোনও অবস্থায় জল মুখে নিয়ে কুলকুচি করা বা খাওয়া যাবে না। এতে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। নাক, কান, চামড়া দিয়েও সামান্য জল শরীরে প্রবেশ করে। তবে এতে খুব বেশি ক্ষতির আশঙ্কা নেই।’’ অশোক আরও জানান, গবাদি পশু, বিশেষ করে গরু যদি ইছামতীর জল পান করে, তা হলে দুধের মাধ্যমে মানুষের শরীরে আর্সেনিক পৌঁছে ক্ষতি করতে পারে। তবে নদীতে থাকা মাছের কোনও ক্ষতি হবে কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত নন আর্সেনিক বিশেষজ্ঞেরা।
বনগাঁ মহকুমায় বহু জায়গায় ইছামতী সারা বছরই কচুরিপানা, কচুবন ও আগাছার ভরা থাকে। ইদানীং পুরসভার তরফে নদী কচুরিপানা মুক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। শহরবাসীর বক্তব্য, এতে ফের নদীর জল দেখা যাচ্ছে। অনেকে ইতিমধ্যে নদীতে স্নান করতে শুরুও করেছেন। কিন্তু জলে আর্সেনিক মেলার খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অনেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy