বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের ফুল, পাতা দিয়ে তৈরি ভেষজ আবির সাড়া ফেলল বাজারে। ডায়মন্ড হারবারের সরিষার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যান পালন বিভাগের পড়ুয়াদের তৈরি ওই আবির এ বার দেদার বিক্রি হয়েছে দোলে। উদ্যানপালন বিভাগের প্রধান সার্থক ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘ইতিমধ্যেই আমরা বিভিন্ন মেলায় আবির নিয়ে যোগ দিয়েছি। ব্যাপক সাড়া মিলেছে। এ বছর আমরা ব্যাপক সাফল্য পেয়েছি। আগামী দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে ভেষজ আবির যাতে বাজারজাত করা যায় সেই চেষ্টা চলছে।’’
রাসায়নিক পদার্থ থেকে তৈরি আবিরে ত্বকের ক্ষতি হয়। তাই গত কয়েক বছর ধরেই দোলে ভেষজ আবিরের চাহিদা বাড়ছে। সে কথা ভেবেই সরিষার ওই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা ভেষজ আবির তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা জানান, ক্যাম্পাসের মধ্যে থাকা নানা রঙের ফুল, নিম পাতা দিয়ে তৈরি হয়েছে এই আবির। বিশ্ববিদ্যালয়েরই ল্যাবরেটরিতে তৈরির পর সেই ভেষজ আবির পৌঁছে যাচ্ছে স্থানীয় মেলায় ও বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানপালন বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, পরীক্ষাগারে ভুট্টা ও অ্যারারুট নির্দিষ্ট অনুপাতে বিভিন্ন ফুলের নির্যাসের সঙ্গে মিশিয়ে এই আবির তৈরি করা হয়। ভেষজ আবির তৈরির গোটা প্রক্রিয়ায় কোনও রাসায়নিকেরও সাহায্য নেওয়া হয়না। তাই ওই আবির মাখলেও ত্বকে কোনও প্রভাব পড়বেনা। তাছাড়া জল ঢাললে নিমেষেই আবির ধুয়ে যাবে। পলাশ, রুদ্রপলাশ, জবা, কাগজফুল, গাঁদা, অপরাজিতা-সহ বিভিন্ন ফুলের নির্যাস থেকে নানা রঙের আবির তৈরি করেছেন পড়ুয়ারা। নিমপাতা, বিট, গাজর, হলুদের মতো বিভিন্ন রঙিন আনাজ থেকেও ভেষজ আবির তৈরি করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন (কৃষি ও আনুষঙ্গিক) সুশীলকুমার কোঠারি বলেন, ‘‘সুস্থ থাকার জন্য রাসায়নিক ত্যাগ করে আমরা ভেষজ রঙ বা আবির ব্যবহারের প্রতি ঝুঁকছি। তাই আমাদের পড়ুয়ারা প্রাকৃতিক উপায়ে ভেষজ আবির বানিয়েছে।’’
গত বছর ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের জন্য প্রথম এই ভেষজ আবির তৈরি করেন এই পড়ুয়ারা। তারপর থেকেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফুল বা আনাজ থেকে ভেষজ আবির তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। এ বার দোলের জন্যও প্রচুর আবির তৈরি করেছিলেন পড়ুয়ারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, কর্মী এবং পড়ুয়াদের একাংশই প্রায় সব আবির কিনে ফেলেছেন। উদ্যানপালন বিভাগের প্রধান বললেন, ‘‘যে কোনও বয়সের মানুষ এই আবির মাখতে পারবেন। ত্বকে ক্ষতির কোনও আশঙ্কাই থাকছে না।’’ পড়ুয়া সায়ন্তিকা মণ্ডল, বাস্তব বসু বললেন, ‘‘আমরা নিজেরাও ভেষজ আবির দিয়েই দোল খেলব। নিজেরা তৈরি করে মজা পেয়েছি। বন্ধুবান্ধব এবং পরিচিতদেরকেও ভেষজ আবির কিনতে বলেছি।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)