—প্রতীকী ছবি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে এক নাবালিকাকে ধর্ষণ-খুনের মামলায় দোষীর সাজার মেয়াদ নিয়ে শুনানি শেষ। শুক্রবার বিকেল সওয়া ৩টেয় সাজা ঘোষণা করা হবে বলে জানালেন বারুইপুর ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের বিচারক।
আরজি কর-কাণ্ডের আবহে জয়নগরে বছর নয়েকের এক নাবালিকাকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনা শোরগোল ফেলে দিয়েছিল গোটা রাজ্যে। সেই মামলায় বৃহস্পতিবার মূল অভিযুক্ত বছর উনিশের মোস্তাকিন সর্দারকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত। শুক্রবার সকালে মোস্তাকিনের সাজার মেয়াদ নিয়ে শুনানি ছিল। সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে লকআপ থেকে আদালত কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয় অপরাধীকে। দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে শুরু হয় শুনানি। দু’পক্ষের আইনজীবী এবং দোষীর বক্তব্য শোনার পর রায়দান স্থগিত রাখেন বিচারক।
শুনানি শুরু হতেই বিচারক মুস্তাকিনের কাছে জানতে চান, সাজার ব্যাপারে তাঁর কিছু বলার আছে কি না? জবাবে মুস্তাকিন জানান, তিনি নাবালিকাকে ধর্ষণ-খুন করেননি। তিনি বলেন, ‘‘আমি এ কাজ করিনি। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। বাবা অসুস্থ। আমি ছাড়া ওঁদের দেখার কেউ নেই। যদি পারেন, আমাকে মাফ করবেন। অভাবের কারণে আমি কাজ করতাম। বাবা-মাকে দেখার কেউ নেই।’’
মুস্তাকিন বাবার অসুস্থতার কথা জানাতেই বিচারক বলে ওঠেন, ‘‘পুলিশ বলছে, বাবার খোঁজ নেই। এখন বলা হচ্ছে, বাবা বাড়িতে অসুস্থ।’’ মুস্তাকিনের আইনজীবীকেও তিনি বলেন, ‘‘আপনি প্রমাণ দিন, বাবা বাড়িতে আছেন। বাবার যোগাযোগ নম্বর দিতে পারবেন? বাবা যদি সত্যি অসুস্থ হয়, তা হলে তো সেই বিষয়টা দেখতে হবে।’’ এর পরেই আদালত থেকেই মুস্তাকিনের বাবার নম্বরে ফোন করেন তাঁর আইনজীবী। কিন্তু তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
মুস্তাকিনের আইনজীবী বিচারকের উদ্দেশে বলেন, ‘‘বাবা অসুস্থ হওয়ার পর পড়াশোনা ছেড়ে কাজ শুরু করেছিল মুস্তাকিন। নাবালক হওয়া সত্ত্বেও। ওর বিরুদ্ধে আগে কোনও মামলা নেই। ও জড়িতও নয়। পরিবারের কথা বিবেচনা করবেন । ওর বয়স বিবেচনা করে ওকে শুধরে নেওয়ার সুযোগ দিন।’’
পাল্টা দোষীর ফাঁসির দাবি জানান বিশেষ সরকারি আইনজীবী। তাঁর বক্তব্য, মুস্তাকিনকে যে যে ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, তার মধ্যে চারটির সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি। বছর কুড়ি পর যদি অপরাধী বাইরে বেরিয়ে আসেন, তখন সমাজে কী প্রতিক্রিয়া হবে?
সরকারি আইনজীবী বলেন, ‘‘মেয়েটি বিশ্বাস করে ওর (অপরাধীর) সাইকেলে উঠেছিল। এর পর মেয়েটিকে নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে খুন করেছে! এটা পূর্বপরিকল্পিত। মুখ টিপে, শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে শক্ত জমির উপর বার বার মাথা ঠুকে দেওয়া হয়েছে। মেয়েটির শরীরে ৩৮টি আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। নৃশংস ঘটনা! একে ক্ষমা করা হলে ভবিষ্যতে আবার ঘটবে এই ধরনের ঘটনা।’’ সরকারি আইনজীবীর বক্তব্যে আরজি করের নিহত মহিলা চিকিৎসকের প্রসঙ্গও উঠে এসেছিল।
প্রসঙ্গত, গত ৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল ওই নাবালিকা। মেয়ে বাড়ি না-ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন পরিবারের লোকজন। স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে যাওয়া হয়। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ ওঠে। এর পর গভীর রাতে বাড়ির কাছের জলাজমি থেকে মেলে মেয়েটির দেহ। ওই রাতেই গ্রেফতার হয় মোস্তাকিন। পরের দিন সকালে পুলিশ, স্থানীয় নেতারা এলাকায় গেলে, তাঁদের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। হামলা চলে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতেও। ঘটনার পরে প্রাথমিক ভাবে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছিল পুলিশ। পরে আদালতের নির্দেশে পকসো ধারা যুক্ত করা হয়।
আরজি কর আন্দোলনের আবহে জয়নগরের নিহত নাবালিকার জন্যও বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। জয়নগরের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই নিহত নাবালিকার বাড়িতে গিয়েছিলেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারেরা। ধর্মতলায় অনশনমঞ্চে জয়নগরের নির্যাতিতার ‘প্রতীকী মূর্তি’ বসানো হয়েছিল। আরজি করের মহিলা চিকিৎসকের পাশাপাশি জয়নগরের নির্যাতিতার জন্যও বিচারের দাবিতে স্লোগান দিতে দেখা যেত আন্দোলনকারীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy