Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

স্বাস্থ্যপরীক্ষা তো তেমন কিছুই হল না

বহুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে বাসে করে বারাসতে নিয়ে আসে। সেখানে কয়েক ঘণ্টা রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুবল মণ্ডল (পরিযায়ী শ্রমিক)
পারঘুমটির বাসিন্দা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২০ ০৪:০০
Share: Save:

দীর্ঘ অপেক্ষার পরে তামিলনাড়ু থেকে রবিবার সন্ধ্যায় ট্রেনে উঠি বাড়ি ফেরার আনন্দ নিয়ে। তামিলনাড়ু সরকার খুব ভাল বন্দোবস্ত করেছিলেন আমাদের ফেরানোর জন্য। ট্রেনেও খুব ভাল ব‍্যবস্থা ছিল। সব মিলিয়ে কোনও অসুবিধা হয়নি। তবে মঙ্গলবার সকালে ডানকুনিতে নামার পরে কোনও রকম ব‍্যবস্থা চোখে পড়েনি। আমাদের এক বোতল জলটুকুও কেউ দেয়নি। বহুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে বাসে করে বারাসতে নিয়ে আসে। সেখানে কয়েক ঘণ্টা রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল। খিদের জ্বালায় অনেকে অসুস্থবোধ করতে থাকে। এরপর সেখান থেকে আবার বসিরহাটের একটি মাঠে নিয়ে আসা হয় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য। সেখানে দেখলাম, একটা মাঠে বাইরের রাজ্য থেকে আসা বহু মানুষ গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছেন। যা দেখে ভয় লাগল। বুঝলাম, ওখানে যদি একজন করোনা আক্রান্ত থাকেন, তা হলে আমাদের সকলের মধ্যে তা ছড়াতে পারে। জানি না, এটুকু সতর্কতা কেন নেওয়া হয়নি। এরপরে ঝড়বৃষ্টির মধ্যে ভিজে লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানোর পরে আমার ও স্ত্রীর আধার কার্ড দেখে নম্বর লিখে, ফোন নম্বর নিয়ে ছেড়ে দিল। এই হল স্বাস্থ্যপরীক্ষা। এরপরে রাত হয়ে যায়। খিদেয় শরীর আর চলছিল না। তবুও কোনও খাবার বা জল পাইনি। কাছে টাকাও ছিল না যে কিছু কিনে খাব। অবশেষে বাসে করে নেবুখালি বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত আমাদের দিয়ে যাওয়া হয়। রাত তখন ১২টা বাজতে যায়। কিন্তু আমাদের বাড়ি তো সুন্দরবনের শেষ প্রান্ত কালীতলা পঞ্চায়েতের পারঘুমটি গ্রামে। গভীর রাতে বাড়ি যাবো কী ভাবে, তা ভেবে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠি। এরপরে কাছে সব মিলিয়ে যে ৬০ টাকা ছিল তা দিয়ে স্বামী-স্ত্রী খেয়া পার হয়ে দুলদুলি এসে পঞ্চায়েত প্রধানকে ফোনে সব জানাই। তিনি গাড়ি পাঠান। গভীর রাতে পারঘুমটি ফ্লাড শেল্টারে নিয়ে এসে রাখা হয়। সেখানে এসে শুনেছিলাম ভাত রান্না হয়েছে। কিন্তু সারা রাত আমাদের খেতে দেয়নি কেউ। বুধবার থেকে যদিও খাবার পাচ্ছি। তবে এখানে পানীয় জল, স্নান বা শৌচকর্মের জল নেই। এ ছাড়া, এ রাজ্যে আসার পরে আমাদের এখনও স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো হয়নি। তবে তামিলনাড়ু সরকার আমাদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে ট্রেনে তুলেছিল। আমরা চাই, সরকারি ভাবে আমাদের এখন আরও একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হোক। না হলে বুঝতে পারছি না, আমরা করোনা আক্রান্ত কিনা। তাই ভয় কাটছে না। এমন অবস্থা শুধু আমার একার নয়, এক সঙ্গে ফেরা অনেকেরই।

— অনুলিখন: নবেন্দু ঘোষ

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in West Bengal Migrant Labourers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy