Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

স্বপ্ন দেখাচ্ছেন স্যার

২০০৫ সালে টিম টিম করে ৫৫ জনকে নিয়ে চলছিল স্কুল। ২০১৯ সালে দাঁড়িয়ে ৩২৫ জন পড়ুয়া আর ছ’জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে নিয়ে এলাকার গর্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে বসিরহাটের ধলতিথা অবৈতনিক প্রাথমিক স্কুলটি। 

ভোলবদল: উপরে, ঝাঁ চকচকে স্কুল। — ছবি: নির্মল বসু

ভোলবদল: উপরে, ঝাঁ চকচকে স্কুল। — ছবি: নির্মল বসু

নিজস্ব সংবাদদাতা 
বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৩৭
Share: Save:

কখনও স্কুলে চলে আসেন সকলের আগে। কখনও ছুটির পরে কাজ গুছিয়ে বেরোতে বেরোতে সন্ধে গড়িয়ে যায় স্যারের।

এ ভাবেই গত চোদ্দো বছর ধরে মাটি আঁকড়ে লড়ে গিয়েছেন স্কুলের হাল ফেরাতে। ধীরে ধীরে ফল মিলেছে। যে স্কুলে এক সময়ে মাটিতে বসে পড়তে হত ছেলেমেয়েদের, সেখানে এখন অডিও-ভিস্যুয়াল ব্যবস্থায় ক্লাস করছে পড়ুয়ারা। চেয়ার-বেঞ্চ তো এসেইছে। মিড ডে মিল খাওয়ার জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা আছে। পুরুষ-মহিলাদের আলাদা শৌচালয়ের ব্যবস্থা হয়েছে।

২০০৫ সালে টিম টিম করে ৫৫ জনকে নিয়ে চলছিল স্কুল। ২০১৯ সালে দাঁড়িয়ে ৩২৫ জন পড়ুয়া আর ছ’জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে নিয়ে এলাকার গর্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে বসিরহাটের ধলতিথা অবৈতনিক প্রাথমিক স্কুলটি।

এলাকার মানুষ এক বাক্যে মানেন, প্রধান শিক্ষক সৌভিক বসুর নিরলস চেষ্টায় এই চেহারা পেয়েছে স্কুল। এ বার তাই রাজ্য সরকারের ‘শিক্ষারত্ন’ হিসাবে শৌভিকের নাম ঘোষণায় তাঁরা বিস্মিত নন। বরং কেউ কেউ বলছেন, ‘‘পুরস্কার ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র!’’

স্যারকে ঘিরে উচ্ছ্বাস।— ছবি: নির্মল বসু

পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চার জন্যও ব্যবস্থা আছে স্কুলে। তৈরি হয়েছে সাংস্কৃতিক মঞ্চ। আছে শিশু উদ্যান। দেওয়াল ভরিয়ে দেওয়া হয়েছে রঙিন ছবিতে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য বায়োমেট্রিক হাজিরার ব্যবস্থা চালু করেছেন হেডস্যার। ২০১৩ সালে ‘নির্মল বিদ্যালয়’ পুরস্কারও পেয়েছে ধলতিথার এই স্কুল।

স্কুল সূত্রে জানা গেল, ১৯৫৫ সালে খড়ের চাল দেওয়া ঘরে প্রত্যন্ত এলাকায় গরিব-গুর্বো কিছু পরিবারের ছেলেমেয়েকে নিয়ে চালু হয়েছিল স্কুল। তারপরে এতটা পথ পেরিয়ে এমন দৃশ্য।

মঙ্গলবার সৌভিককে অভিনন্দন জানাতে এসেছিলেন বসিরহাট নতুনচক্রের অন্য স্কুলের শিক্ষক ও আধিকারিকেরা। পড়ুয়া, অভিভাকদের অভিনন্দনেও দিনভর ভেসে গিয়েছেন স্যার।

অভিভাবক অমিয় ঢালি, প্রীতম বৈরাগী, মৌসুমি সরকার, চৈতালি সরকাররা বলেন, ‘‘স্কুলের এমন উন্নতি গোটা এলাকার পরিবেশটাকেই যেন বদলে দিয়েছে। ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে এখন আগ্রহ বোধ করেন মানুষ জন।’’ দূরদূরান্তের গ্রাম থেকেও পড়ুয়ারা এখানে পড়তে আসে বলে জানালেন অনেকেই। স্যারের কথা উঠতেই কথা যেন থামতে চায় না ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের। তিথি, সৌমী, সামিউল, আমজাদদের কথায়, ‘‘এখানে সব স্যার-দিদিমণিরা আমাদের ভালবাসেন। যত্ন করে পড়ান। স্যার প্রাইজ পাচ্ছেন শুনে আমরা খুব খুশি।’’

এ দিন স্কুলে এসেছিলেন তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি বিশ্বরূপ ঘোষ এবং নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মৈনাক ঘোষ। তাঁদের মতে, আশপাশের কোনও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এই স্কুলের ধারে কাছে আসবে না, এমনই পরিষেবা চালু করেছেন হে়ডস্যার।

দিনটা উপভোগ করলেন সৌভিকও। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রামবাসীরা সাহায্য করেছেন। সরকার এবং সহকর্মীরা পাশে ছিল। সকলের মিলিত চেষ্টায় এই দিনটা উপহার পেলাম।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Education School Head Master
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy