অপেক্ষা: শুক্রবার বনগাঁ হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার জন্য ভিড়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
হাবড়ার পশ্চিম কামারথুবা এলাকার বাসিন্দা নীহাররঞ্জন চৌধুরী কয়েক দিন ধরে অসুস্থ। বৃহস্পতিবার স্বামীর করোনা পরীক্ষার জন্য হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে এসেছিলেন তাঁর স্ত্রী। অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কয়েক দিন পরে স্বামীকে নিয়ে আসতে বলেছেন। নিহারবাবুর স্ত্রীর প্রশ্ন, “এই সময়ের মধ্যে স্বামীর যদি ভাল-মন্দ কিছু হয়ে যায়, তার দায়িত্ব কে নেবে?”
শুধু হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালই নয়, অভিযোগ, উত্তর ২৪ পরগনার বেশ কিছু হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে করোনা পরীক্ষা করাতে গেলে তাঁদের পরে আসতে বলা হচ্ছে। বিশেষ করে আরটিপিসিআর পরীক্ষা দিনের দিন হচ্ছে না। এর ফলে উপসর্গ থাকা অনেকেই আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকে বাইরের রাজ্যে নির্দিষ্ট সময়ে কর্মস্থলে যেতে পারছেন না। করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে না থাকায় বিমানের টিকিট কেটেও তা বাতিল করতে হচ্ছে।
হাবড়ার বাসিন্দা বিশ্বনাথ অধিকারী বলেন, “গোয়ায় কর্মস্থলে যাব বলে আগে থেকে বিমানের টিকিট কেটেছিলাম। হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ২৩ এপ্রিল করোনা পরীক্ষা করাতে আসি। আমাকে ২৬ এপ্রিল আসতে বলা হয়। ওই দিন লালারস দিই পরীক্ষার জন্য। তিন দিন পরে রিপোর্ট আসবে বলা হয়েছিল। ২৯ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত রিপোর্ট আসেনি। রিপোর্ট ছাড়া বিমানে ওঠা যাবে না। তাই বাধ্য হয়ে টিকিট বাতিল করেছি। রিপোর্ট পাওয়ার পরে আবার টিকিট কাটতে হবে বেশি টাকা দিয়ে।”
সমস্যার কথা মেনে নেন হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল সুপার বিবেকানন্দ বিশ্বাস। তিনি বলেন, “করোনা পরীক্ষার কিটের অভাব রয়েছে। সে কারণেই মানুষকে পরে আসতে বলা হচ্ছে। দৈনিক যত কিট থাকছে, সেই মতো পরীক্ষা করা হচ্ছে।”
একই পরিস্থিতি বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালেও। এখানেও আরটিপিসিআর পরীক্ষা করাতে গেলে পরে তারিখ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতাল সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, “আরটিপিসিআর পরীক্ষার জন্য প্রায় সাড়ে তিনশো নমুনা জমে গিয়েছে। রোজ ১০০টি নমুনা এনআরএস হাসপাতালে পাঠানো হয়। জমে থাকা রিপোর্ট ক্লিয়ার হলে আবার নতুন করে আরটিপিসিআর পরীক্ষা শুরু করা হবে। আপাতত রবিবার পর্যন্ত আরটিপিসিআর পরীক্ষা বন্ধ থাকছে।”
তবে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হচ্ছে কিছু জায়গায়। শুক্রবার বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে তা-ও বন্ধ ছিল। এ দিন হাসপাতালে কেবল রাজনৈতিক দলগুলির প্রার্থী, এজেন্ট-সহ গণনা কেন্দ্রে যাঁরা যাবেন তাঁদের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়। সকাল ৬টা থেকে করোনা পরীক্ষা করাবেন বলে হাসপাতালে এসে সাধারণ মানুষ লাইন দেন। কয়েক ঘণ্টা পরে তাঁরা জানতে পারেন, এ দিন করোনা পরীক্ষা হবে না। ক্ষোভ ছড়ায়। অনেকে টেবিল চাপড়ে প্রতিবাদ জানান। এক মহিলার কথায়, “শ্বাসকষ্ট নিয়ে করোনা পরীক্ষা করাতে এসে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পরে জানতে পারি, আজ পরীক্ষা হবে না। কেন আগে জানানো হল না?”
বনগাঁ, গাইঘাটা ব্লকে এখন রোজ ৩০টি করে আরটিপিসিআর পরীক্ষা করা হচ্ছে। মাস দেড়েক আগেও সংখ্যাটা ছিল ৮০। অ্যান্টিজেন পরীক্ষা অবশ্য তুলনায় বেশি হচ্ছে। বারাসত জেলা হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, “আমাদের এখানে আসা প্রতিটি মানুষের প্রথমে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হচ্ছে। ২ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকেরা যদি মনে করেন কারও আরটিপিসিআর করার প্রয়োজন আছে, তখন তাঁদের আরটিপিসিআর করা হচ্ছে।”
করোনা পরীক্ষা করাতে সমস্যার পাশাপাশি আরটিপিসিআর পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে তিন থেকে পাঁচ দিন সময় লাগছে। এক রোগীর কথায়, “পরীক্ষা করাতে কয়েক দিন সময় লাগছে। রিপোর্ট আসতে আরও কয়েক দিন সময় লাগছে। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে হয় রোগীরা সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন, নয় তো অবস্থার অবনতি হলেও তাঁরা করোনা হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন না।” অনেক ক্ষেত্রে এই সময়ের মধ্যে পরীক্ষা করানো লোকজন এবং তাঁদের পরিবারের লোকজন বাজার-হাটে, রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছেন। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে।
স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “আরটিপিসিআর পরীক্ষার রিপোর্ট তৈরির কাজে জড়িত অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সে কারণেই সাময়িক সমস্যা তৈরি হয়েছে। দ্রুত মিটে যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy