হাবড়ার শ্রীপুর স্পোর্টিং ক্লাবের প্রতিমা। ছবি: সুজিত দুয়ারি
হাবড়ার মানুষের কাছে কালীপুজোই প্রধান উৎসব। কর্মসূত্রে বাইরে থাকা লোকজন এ সময়ে ঘরে ফেরেন। কালীপুজো উপলক্ষে এখানকার মানুষ নতুন জামাকাপড় কেনেন। পুজো দেখতে স্থানীয় বাসিন্দাদের আত্মীয়-স্বজনেরা ভিড় করেন। উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদর বারাসত বা লাগোয়া মধ্যমগ্রাম ছাড়াও হাবড়ার কালীপুজোর নামডাক ইদানীং ছড়িয়েছে দূরদূরান্তে।
এ বছর অবশ্য মানুষের আনন্দ-উৎসবের চেহারাটা কিছুটা ম্লান। কারণ এ অঞ্চলে জ্বর-ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়িয়েছে। অনেক মানুষ এখনও চিকিৎসাধীন। কয়েক জন মারাও গিয়েছেন। সেই সব শোকার্ত পরিবারে প্রদীপ জ্বলছে না। সদ্য বিবাহিত এক তরুণী স্বামীকে হারিয়েছেন ডেঙ্গিতে। তাঁর কথায়, ‘‘জীবনের আলোই তো নিভে গিয়েছে। প্রদীপ জ্বালিয়ে আর কী করব!’’
তারই মধ্যে অবশ্য শহর সেজে উঠেছে আলোর মালায়। এক পুজো উদ্যোক্তার কথায়, ‘‘জীবনের নানা সমস্যার মধ্যেও এ ক’টি দিন মানুষকে একটু ভাল রাখার চেষ্টা করি আমরা।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার হাবড়া প্রশাসনের অনুমোদিত পুজোর সংখ্যা ৩৫। তার মধ্যে বড় বাজেটের পুজো দশটি। রবিবার বিকেল থেকেই নানা জায়গা থেকে মানুষ ভিড় করতে শুরু করেছেন হাবড়ায়। রাত জেগে চলবে প্রতিমা দর্শন। পুলিশের অনুমান, কালীপুজোয় শহরে লক্ষাধিক মানুষের আসার সম্ভাবনা। পুলিশের তরফে তাই আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। থানার আইসি গৌতম মিত্র বলেন, ‘‘শহরের রাস্তায় দু’শো পুলিশকর্মী নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন। শ্রীপুর ও বাণীপুর এলাকায় পুলিশ সহায়তা কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা, চাইল্ড কার্ডের সুবিধা থাকছে। ট্রেনের সময়ও বলে দেওয়া হবে দর্শনার্থীদের।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৮টি এলাকায় ‘নো এন্ট্রি পয়েন্ট’ করা হয়েছে। করা হয়েছে বেশ কয়েকটি ‘ট্রাফিক পয়েন্ট’ও। অপ্রীতিকর ঘটনা বন্ধ করতে থাকছে মোবাইল টহল। শহরের অলিগলির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ১৬টি বাইকে চেপে টহল দিচ্ছেন পুলিশকর্মীরা।
থিমের ছোঁয়া দেখা যাচ্ছে এ বার। মণ্ডপ তৈরির উপকরণের মধ্যেও রয়েছে অভিনবত্ব। মাদুরকাঠি, পুরনো বাদ্যযন্ত্র, কতবেল, পাহাড়ি ফুল, টিন, পাটকাঠি, খড়-বিচালি, ফাইবার নেট, চট, আমড়া আঁটি বা মাটির প্রদীপ, ঘট, কলসি— বহু জিনিস ব্যবহার হয়েছে মণ্ডপসজ্জায়। যশোর রোডের উপরে আলোর তোরণ তৈরি করা হয়েছে। আলো-ভাবনায় রয়েছে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া নানা বিষয়।
হাবড়ার উল্লেখযোগ্য পুজোগুলির মধ্যে রয়েছে শ্রীপুর ভারতীয় সঙ্ঘ। ৪৬ তম বর্ষে তাঁদের থিম ‘কাজই ধর্ম’। মণ্ডপে রাখা হয়েছে, লাঙল, কোদাল, কাস্তে, বেলচা, ঠেলাগাড়ি। সঙ্ঘের তরফে শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘থিমের মাধ্যমে আমরা বার্তা দিতে চেয়েছি, কোনও কাজই ছোট নয়।’’ রাধারানি পার্কের শ্রীপুর ইউনাইটেড ন্যাশনাল ক্লাবের থিম ‘স্বপ্নমহল’। শ্রীপুর ইস্টবেঙ্গল বয়েজ ক্লাবের পুজো এ বার ৫৮ তম বর্ষে। তাদের থিম ‘দূষণমুক্ত পৃথিবী’। আগামী দিনে পৃথিবীর সব চেয়ে বড় সমস্যা হবে পরিবেশের দূষণ। সেই দূষণ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার বার্তা দেওয়া হয়েছে এখানে। ৪৭ তম বর্ষে শ্রীপুর স্পোর্টিং ক্লাবের থিম ‘সম্পর্কের অটুট বন্ধনের বার্তা’। দেশবন্ধু সেবা সমিতির ৫৩ তম বর্ষের থিম ‘বর্ণপরিচয়’। বাণীপুর এলাকার ছাত্রসঙ্ঘের থিম ‘ঘুরে ফিরে আসতে হবে রূপসী বাংলায়’। মছলন্দপুর এলাকার বয়েজ ক্লাবের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে অরুণাচলের শিব মন্দিরের আদলে। জাগরণী সঙ্ঘের ৪১ তম বর্ষের থিম ‘জাগরণীতে আফ্রিকা’। শক্তিমান ক্লাবের থিম ‘সৃষ্টি’। অশোকনগর ৮ নম্বর অগ্রদূত ক্লাবের পুজো ৫০ তম বর্ষের। তাদের থিম ‘স্বর্ণমন্দির’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy