কর্মব্যস্ত ওই ডাককর্মী। ছবি: সুজিত দুয়ারি।
ডাকঘর আছে, নেই কোনও পোস্টম্যান বা পোস্টমাস্টার!
কর্মী বলতে একজনই। খাতায়-কলমে তিনি অবশ্য ‘রানার’। রানার হলেও তিনিই এই ডাকঘরের অলিখিত পোস্টম্যান এবং পোস্টমাস্টার। চিঠি বিলি থেকে শুরু করে টাকা লেনদেন বা নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা-সহ ডাকঘরের যাবতীয় কাজকর্ম তাঁকেই সামলাতে হয়।
এমন পরিস্থিতি হাবড়ার সলুয়া গভর্মেন্ট কলোনি শাখা ডাকঘরের। স্থানীয় সলুয়া, পায়রাগাছি, বাউগাছি, নাংলা-সহ বেশ কিছু এলাকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ ওই ডাকঘরের উপর নির্ভরশীল। অথচ কর্মীর অভাবে ধুঁকছে ডাকঘরটি। কাজ সামালাচ্ছেন ওই ‘রানার’ ষাট ছুঁইছুঁই নীলরতন চক্রবর্তী। নীলরতন অসুস্থ হয়ে পড়লে বা কোনও কারণে কাজে আসতে না পারলে সমস্ত পরিষেবাই ব্যাহত হয়।
ডাকঘরের বেহাল পরিষেবা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে প্রচুর ক্ষোভ। তাঁরা জানান, প্রয়োজন পড়লেই ওই ডাকঘর থেকে টাকা তোলা যায় না। টাকার জন্য ন্যূনতম দু’দিন অপেক্ষা করতে হয়। এক মহিলা জানান, কিছুদিন আগে তাঁর স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য দ্রুত টাকার প্রয়োজন হয় তাঁর। অথচ ডাকঘরে টাকা তুলতে গেলে তাঁকে জানানো হয়— টাকা নেই, পরের দিন আসতে হবে। এমন অভিজ্ঞতা এলাকার বহু মানুষেরই।
বিকল্প ব্যবস্থা কিছু নেই?
এলাকাবাসীরা জানান, ব্যাঙ্কের পরিষেবা পেতে গেলে মছলন্দপুর বা হাবড়ায় যেতে হবে। মছলন্দপুর ৫ কিলোমিটার আর হাবড়া ৭ কিলোমিটার দূরে। গরিব মানুষের পক্ষে গাড়িভাড়া খরচ করে মছলন্দপুর বা হাবড়ায় যাওয়া সব সময়ে সম্ভব হয় না। স্থানীয় বাসিন্দা পূর্ণেন্দুশেখর বিশ্বাস বলেন, ‘‘এখানকার বহু মানুষ খেতমজুরি, দিনমজুরি করেন। টাকা-পয়সা লেনদেনের ক্ষেত্রে তাঁদের প্রধান ভরসা এই ডাকঘরই। অথচ পরিকাঠামোর অভাবে রোজই আমাদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।’’
টাকার বিষয়ে ডাকঘর সূত্রে জানা গিয়েছে, ডাকঘরে গ্রাহকদের দেওয়ার জন্য দৈনিক ২ হাজার টাকার বেশি থাকে না। কেউ টাকা জমা দিলে সেখান থেকে গ্রাহকদের টাকা দেওয়া হয়। কেউ বেশি টাকা তুলতে চাইলে তাঁকে বাধ্য হয়েই পরের দিন আসতে বলতে হয়। হাবড়া মুখ্য ডাকঘর থেকে টাকা এনে পরের দিন সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে দেওয়া হয়।
ডাকঘর এমন কর্মীহীন কেন?
ডাকঘর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানে যিনি পোস্টম্যান হিসেবে কাজ করতেন তিনি ৮ বছর আগে অবসর নেন। তবে পোস্টমাস্টার ১ বছর আগে পর্যন্ত ছিলেন। তিনি অবসর নেওয়ার পরে নতুন কোনও নিয়োগ হয়নি।
পরিকাঠামোগত সমস্যাও রয়েছে ডাকঘরটির। ১৯৭৯ সালে ডাকঘরটি শুরু হয়। আজও এর নিজস্ব কোনও ভবন তৈরি হল না। এক ব্যক্তির বাড়ির ৮ ফুট বাই ৬ ফুটের একটি বারান্দা ভাড়া নিয়ে সেখানেই ডাকঘরটি কোনও ক্রমে চলছে। বাসিন্দারা জানান, ডাকঘরে কোনও বিদ্যুৎসংযোগ নেই। বর্ষায় ডাকঘর-চত্বরে জল জমে।
কী ভাবে চলছে নিত্যদিনের কাজ?
রোজ হাবড়া মুখ্য পোস্ট অফিস থেকে চিঠি নিয়ে আসেন নীলরতন। দিনের শেষে সলুয়া ডাকঘরে জমা টাকা তিনিই হাবড়ায় নিয়ে যান। রোজ সাইকেল চালিয়ে এলাকায় ঘুরে ঘুরে চিঠি বিলি করেন নীলরতন। বিলি শেষে তিনিই ডাকঘরে এসে অন্য কাজকর্ম করেন। তিনি যতক্ষণ চিঠি বিলি করেন, ততক্ষণ গ্রাহকেরা ডাকঘরে এসে অপেক্ষা করেন। পাছে গ্রাহকেরা ফিরে যান তাই নীলরতন তাঁর ছেলে অভিজিৎকে ডাকঘরে বসিয়ে রাখেন। কেউ ডাকঘরে এলে অভিজিৎ তাঁকে অপেক্ষা করতে বলেন।
এখানেই শেষ নয়। ডাকঘরে ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু হয়েছে। যদিও ডাকঘরের বারান্দায় ইন্টারনেট কাজ করে না। নেট-সংযোগ পাওয়ার জন্য নীলরতনকে দূরে মেশিন নিয়ে যেতে হয়। দুর্বল নেট-সংযোগের কারণে অনেক সময়েই কেউ একটু বেশি পরিমাণ টাকা জমা করতে এলে সমস্যায় পড়েন। অনেক সময়েই যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য দু’বারও টাকা জমা পড়ে যায়। পরে আবার সেই সমস্যা সামলাতে নীলরতনকে কম বেগ পেতে হয় না।
সমস্যার কথা অজানা নয় ডাকঘর কর্তৃপক্ষের। তাঁরা জানিয়েছে, কর্মী নিয়োগ অনেকদিন বন্ধ রয়েছে। কর্মী নিয়োগ না হলে সমস্যা মিটবেও না।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy