Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

এক পা নিয়েই চলছে রিনির লড়াই

ইতিমধ্যেই প্রতিবন্ধী শিল্পীদের জাতীয় পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে রিনি। স্কুল, জেলা, রাজ্য স্তরে একাধিক পুরস্কার আছে তার ঝুলিতে।

কি বোর্ডে পা। নিজস্ব চিত্র

কি বোর্ডে পা। নিজস্ব চিত্র

নির্মল বসু 
বসিরহাট শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৯ ০১:২২
Share: Save:

জন্ম থেকেই নেই দু’টো হাত, একটা পা। তবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা এতটুকু দমাতে পারেনি তাকে। এক পায়ে সিন্থেসাইজার বাজিয়ে ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলেছে টাকির রিনি। ওই এক পা’কে সম্বল করে পড়াশোনায়ও দিব্যি এগোচ্ছে মেয়েটা। মাধ্যমিক পাস করে এখন উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য পড়ছে সে।

বসিরহাট মহকুমার হাসনাবাদের টাকি পুরসভার ন’নম্বর ওয়ার্ডের স্টেশন পাড়ায় বাসিন্দা মুকুল ও শর্মি ভট্টাচার্যের একমাত্র মেয়ে রিনি জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। দু’টো হাতের অর্ধেকটা নেই। হাঁটুর পর থেকে নেই বাঁ পা। ডান পায়ে ভর করে হাঁটা চলা করে সে। স্কুলে যায়। ওই পায়ের আঙুলে কলম ধরেই লেখে। অবসরে লেখে গল্প-কবিতা। আর ওই এক পায়ের আঙুল দিয়েই বাজায় সিন্থেসাইজার।

ইতিমধ্যেই প্রতিবন্ধী শিল্পীদের জাতীয় পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে রিনি। স্কুল, জেলা, রাজ্য স্তরে একাধিক পুরস্কার আছে তার ঝুলিতে। রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর সামনে সিন্থেসাইজার বাজিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে। সম্প্রতি কলকাতার নিউটাউনের রবীন্দ্রতীর্থে কলা উৎসবে পা দিয়ে সিন্থেসাইজার বাজিয়ে রাজ্যের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে রিনি। সিন্থেসাইজার বাজানোর পাশাপাশি ভাল গানও গায় সে। প্রিয় রবীন্দ্র সঙ্গীত ও ক্লাসিকাল গান। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে তার ইচ্ছা গান নিয়ে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করা। রিনির পরিবারের লোকজন জানান, ভর্তির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও একসময় তাকে ভর্তি নেয়নি একটি স্কুল। বলা হয়েছিল, তার প্রতিবন্ধকতা প্রভাব ফেলতে পারে অন্য পড়ুয়াদের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত রিনি ভর্তি হয় টাকি ষষ্ঠীবর লালমাধব উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। দশম শ্রেণিতে ওঠার পর রিনির সুবিধার কথা ভেবে দোতলা থেকে একতলায় ক্লাস নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করেন প্রধান শিক্ষিকা। কিন্তু তাতে বাধা দেয় রিনি নিজেই। জানিয়ে দেয়, দোতলায় উঠতে তার কোনও কষ্ট হবে না। প্রধান শিক্ষিকা মণীষা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মেয়েটার অসম্ভব মনের জোর। ওকে দেখে মনে হয় শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কোনও ব্যাপার নয়। রিনির লড়াই অন্যদের কাছে শিক্ষণীয়। জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা থেকে শুরু করে যে ভাবে একের পর এক সাফল্য পাচ্ছে তা আমাদের গর্বিত করে। পড়াশোনাতেও ও বেশ ভাল।’’ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েই মেয়ের লড়াইয়ে গর্বিত রিনির বাবা-মা। শর্মিদেবীর কথায়, ‘‘তিনটি অঙ্গ না থাকায় মেয়েকে জন্মের পর বাঁচানো কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। পাঁচ বছর ধরে কঠিন লড়াইয়ের পরে এক পায়ে হাঁটা শুরু করে।’’ মুকুলবাবু বলেন, ‘‘ঘরে বসে না থেকে মেয়ে যে ভাবে জীবন যুদ্ধে লড়াই করে এগিয়ে চলেছে তা আমাদের মুগ্ধ করে।’’ বাবা-মা’র পাশাপাশি এই লড়াইয়ে পাশে থাকার জন্য রিনি কৃতিত্ব দেন তার ডাক্তার জেঠু তড়িৎ দত্তকে। তার কথায়, ‘‘ডাক্তার জেঠু না থাকলে হয়তো আজ আমি এতটা এগোনোর জোর পেতাম না। ডাক্তার জেঠুই আমাকে এগিয়ে যাওয়ার সাহস জুগিয়েছেন। নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ না করে আমি চাই আরও অনেক, অনেক পথ এগোতে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে ভাবে মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করেছিলেন, তা আমার কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’’

রিনির কথা শুনে জেলাপরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ ফিরোজ কামাল গাজি বলেন, ‘‘মেয়েটার প্রচেষ্টা আমাদের অবাক করেছে। ওর প্রচেষ্টাকে কুর্নিশ করতে হয়। আমরা সমস্ত রকম সাহায্য নিয়ে রিনির পাশে আছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Physical Disabilities Synthesizer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy