দূষণ: নদীর চরে জমে রয়েছে আবর্জনা। কালীতলা বাজারে। নিজস্ব চিত্র
সু্ন্দরবনের বাস্তুতন্ত্র নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে অনন্য। সাম্প্রতিক প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী সুন্দরবনে আরও ম্যানগ্রোভ রোপণের উপরে জোর দিয়েছেন। এর আগেও তাঁর বিভিন্ন বক্তব্যে সন্দরবন রক্ষার নানা পরিকল্পনার কথা শোনা গিয়েছে। কিন্তু সুন্দরবনের জল-জঙ্গলের যত্ন নেন না এলাবাসীরাই। বহু জায়গায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনও ব্যবস্থাই নেই। আবর্জনা জমছে যত্রতত্র। সম্প্রতি পরিবেশ আদালত একটি মামলায় এ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
নদীনালা বেষ্টিত বাজার এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে নদী। সেখানে আবর্জনা ফেলা হয়। যেখানে নদীর পাশে জনবসতি রয়েছে, সেখানেও নদীর চরে জমছে আবর্জনা। স্থানীয় বাসিন্দাদের এই প্রবণতা দীর্ঘ দিনের। এ নিয়ে সচেতনতা প্রচার বা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ তৎপরতাও নেই প্রশাসনের। মাঝে মধ্যে প্রচার অভিযান চলে ঠিকই, কিন্তু তাতে যে কোনও ফল হয় না, তা নদীর পাড়গুলি দেখলেই বোঝা যায়।
হিঙ্গলগঞ্জের কালীতলা পঞ্চায়েতের সামসেরনগর ট্রেকার স্ট্যান্ড বাজারে দোকানের পিছন দিকে কয়েক ফুট দূরেই রয়েছে সুন্দরবন জঙ্গল। মাঝখান দিয়ে বয়ে গিয়েছে এক ফালি কুঁড়ে নদী। এই নদীতে বাজারের দেদার পচনশীল, অপচনশীল বর্জ্য ফেলা হয়। বিপুল পরিমাণ বর্জ্যের চাপে এই অংশে নদী দ্রুত মজে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।
৪ নম্বর সামসেরনগর এলাকার পরিস্থিতিও একই রকম। শীতের মরসুম অনেকেই পিকনিক করতে আসেন। সেই সমস্ত বর্জ্য ফেলা হয় নদীতে। কালীতলা বাজার চত্বরের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে কুঁড়েখালি নদী। নদীর অন্য পাড়ে সুন্দরবনের জঙ্গল। বাজারে রয়েছে শতাধিক দোকান। এই বাজারের ব্যবসায়ী আজগার গাজি জানালেন, নদীর চরে অবাধে আবর্জনা ফেলা হয়। বাজার পরিষ্কার করেও নদীর চরে ফেলা হয়। প্লাস্টিকের প্যাকেট, চায়ের কাপ, থার্মোকলের থালা-গ্লাসের মতো বর্জ্য জোয়ারে নদীতে ভেসে যায়। নদীর চরে ম্যানগ্রোভের শ্বাসমূলে আটকে থাকে প্লাস্টিক।
সুন্দরবন এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করেন পরিবেশকর্মী সুদীপ্ত ভট্টাচার্য। তিনি জানান, প্লাস্টিক, থার্মোকল ম্যানগ্রোভের শ্বাসমূলে আটকে তাদের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। ছোট ম্যানগ্রোভের মৃত্যুও হতে পারে। এ ছাড়া, নদীতে ফেলা পচনশীল বর্জ্য থেকেও দূষণ হয়। এগুলি জলে পচে গিয়ে জলে অক্সিজেন মাত্রা কমিয়ে দেয়। ফলে জলজ বাস্তুতন্ত্র ও জীব বৈচিত্রে তার প্রভাব পড়ে।
নদীতে বর্জ্য ফেলার একই ছবি দেখা গেল হিঙ্গলগঞ্জের দুলদুলি, নেবুখালি, রূপমারি বাজার, বিশপুর বাজার এলাকা, সন্দেশখালির খুলনা বাজার, ধামাখালি, সন্দেশখালি খেয়াঘাট চত্বর, হাসনাবাদ বাজার-সহ একাধিক জায়গায়। সামসেরনগর গ্রামের বাসিন্দা রাজীব মণ্ডল বলেন, ‘‘বাড়ির গবাদি পশু মারা গেলেও নদীতে ফেলা হয়।’’
পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত জানান, সুন্দরবনের ৯টি ব্লকে জনবসতি ক্রমশ বাড়ছে। অথচ, কোথাও সে ভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু নেই। এ নিয়ে পরিবেশ আদালত, সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায় রয়েছে। প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে উদাসীন। তিনি বলেন, ‘‘দ্রুত এই এলাকাগুলিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু হওয়া দরকার। না হলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের বড় মূল্য দিতে হবে।’’
এ বিষয়ে হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ী বলেন, ‘‘এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য সচেতনতার প্রচার চালানো হয়। তবুও মানুষ যেখানে সেখানে ময়লা ফেলছেন। প্রশাসনের তরফে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy