বিহার থেকে আগত শান্তি দেবী— নিজস্ব চিত্র।
কথায় রয়েছে, সব তীর্থ বারবার গঙ্গাসাগর একবার। ভারতের অন্যতম তীর্থক্ষেত্র গঙ্গাসাগরে জীবনে অন্তত একবার আসার ইচ্ছে থাকে মানুষের। কিন্তু অনেকেরই সময় ও সুযোগ হয়ে ওঠে না। ঠিক যেমনটা হয়েছিল অশীতিপর শান্তি দেবীর ক্ষেত্রে। কিন্তু জীবনের শেষ লগ্নে শান্তির নাতি-নাতনিরাই ঠাকুমার ইচ্ছেপূরণ করলেন।
করোনা অতিমারিতে এ বছর কম পুণ্যার্থী সাগর মেলাতে এসেছেন। সেই তালিকাতেই রয়েছেন বিহারের বৃদ্ধা আর তাঁর তিন নাতি-নাতনি। ঠাকুমাকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে সাগরের মেলায় এনেছিলেন তাঁরা।
বছর পাঁচেক আগে দুর্ঘটনার মুখে পড়ে দু’পায়ে ভর দিয়ে চলার শক্তি হারিয়েছেন পাটনার বাসিন্দা শান্তি। সেই থেকে হুইল চেয়ারই তাঁর সঙ্গী। ছোট থেকে বাবা-মায়ের কাছে গঙ্গাসাগর নিয়ে অনেক গল্প শুনেছেন। কিন্তু সাগরদ্বীপে আসা হয়ে ওঠেনি। বৃদ্ধা শান্তির ৪ ছেলে রয়েছে। বছর দশেক আগে স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে তীর্থে তীর্থে ভ্রমণ শুরু করেন তিনি। কিন্তু দুর্ঘটনার আগে ভারতের বড় কয়েকটি তীর্থে ভ্রমণ করলেও সাগর মেলায় আসার সুযোগ হয়ে ওঠেনি তাঁর।
মৃত্যুর আগে অন্তত একবার সাগরদ্বীপ ঘুরে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছার কথা শান্তি জানিয়েছিলেন চার ছেলেকে। কিন্তু কাজের চাপে কেউই তাঁকে সাগরে নিয়ে আসতে পারেননি। বৃদ্ধার ইচ্ছার কথা জানতে পেরেছিলেন নাতি-নাতনিরা। তাঁদের হাত ধরেই ইচ্ছে পূরণ হল ঠাকুমার। শান্তিকে নিয়ে সাগরের উদ্দেশে রওনা দেন নাতি রণধীর কুমার, রবীশ কুমার এবং নাতনি সনি কুমারী। বৃদ্ধার ভাইপো সুশীল কুমার কর্মসূত্রে কলকাতার বাসিন্দা। বিহার থেকে রওনা দিয়ে শান্তিকে প্রথমে নিয়ে আসা হয় কলকাতায়। এরপর নাতি-নাতনি ও ভাইপো-সহ বেশ কয়েকজন মিলে তাঁকে সাগরে আনেন।
বৃহস্পতিবার মকর সংক্রান্তির পুণ্যস্নানের দিন বৃদ্ধা শান্তি দেবী পা রাখেন সাগরদ্বীপে। হুইল চেয়ার ঠেলে তাঁকে নিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতে দেখা গেল নাতি-নাতনিদের। কপিলমুনির মন্দিরের সামনে এসেই আবেগ ধরে রাখতে না পেরে কেঁদে ফেললেন শান্তি। তিনি বলেন, ‘‘ভাবতেই পারিনি এ জীবনে আর কোনওদিন সাগর মেলায় আসতে পারব। দু’পায়ে ভর দেওয়ার শক্তি হারিয়েছি। কিন্তু নাতি নাতনিরাই আমার স্বপ্ন পূর্ণ করল। কপিলমুনির ধামের স্মৃতি আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’’
সনি বলেন, ‘‘ঠাকুমা অনেক বার সাগরে আসার কথা বলতেন। তাঁর ইচ্ছাপূরণ করতে পেরে আমরা খুব খুশি।’’ এ বার ভিড় কম থাকায় শান্তিকে মেলার কিছুটা অংশ ঘুরে দেখানো হয়।
বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে শুরু হয় মকর সংক্রান্তির পুণ্য যোগ। ভোর রাত থেকেই পুণ্যের ডুব দেন বহু পুণ্যার্থী। তবে এ বার সাড়া ফেলে দিয়েছে ই-স্নান। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে সাগর মেলার পরিস্থিতি জানান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এ বারের মেলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৫ লক্ষের বেশি পুণ্যার্থী স্নান সেরে বাড়ি ফিরেছেন। এখনও বহু পুণ্যার্থী আসছেন। ইতিমধ্যেই ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ২ লক্ষেরও বেশি মানুষ ই-স্নান অর্ডার করেছেন। বিভিন্ন প্রান্তে তৈরি মোট ৫৫টি কাউন্টারের মাধ্যমে ৬৩ হাজার তীর্থযাত্রীকে বিনামূল্যে কৌটো ভরা গঙ্গাজল তুলে দেওয়া হয়েছে। সারা ভারতের প্রায় ৫১ লক্ষ মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ই-দর্শনে অংশ নিয়েছেন।’’
আরও পড়ুন: করোনা আবহের কারণে প্রধান অতিথি বিহীন প্রজাতন্ত্র দিবস
মন্ত্রী জানান, মেলায় আসার সব প্রবেশপথ মিলিয়ে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে। প্রায় ৩৬ হাজার পুণ্যার্থীর র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হয়েছে। ৬ হাজারের বেশি র্যান্ডম টেস্ট করানো হয়েছে। কিন্তু সাগরমেলার মধ্যে কোন তীর্থযাত্রীরই দেহে করোনাভাইরাস মেলেনি বলে প্রশাসনের দাবি। কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকাতে প্রশাসনের তরফে ইতিমধ্যে ৫ লক্ষের বেশি মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: এখনও চিনে ১৬ ভারতীয় নাবিক আটক, ২৩ জন ফিরছেন দেশে
বৃহস্পতিবার সাগরের সমুদ্র সৈকতে এসে ই-স্নান করেন মন্ত্রী সুজিত বসু। স্নান শেষে মন্দিরে পুজো দেন তিনি। দুপুরে স্নান সারেন পুরীর শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy