Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

শিক্ষক দিবসে সুটিয়ার মনে পড়ল না বরুণকে

জীবদ্দশায় আদর্শ শিক্ষক হিসাবে এলাকায় এক ডাকে সকলে চিনতেন তাঁকে। বহু গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে অন্যতম প্রতিবাদী মুখও ছিলেন তিনি।

বরুণ বিশ্বাসের মূর্তি। নিজস্ব চিত্র

বরুণ বিশ্বাসের মূর্তি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:৪১
Share: Save:

শিক্ষক দিবসে তাঁর আবক্ষ মূর্তিতে মালাটুকুও দেওয়ার লোক পাওয়া গেল না। কোনও অনুষ্ঠানও হল না এলাকায়।

অথচ, জীবদ্দশায় আদর্শ শিক্ষক হিসাবে এলাকায় এক ডাকে সকলে চিনতেন তাঁকে। বহু গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে অন্যতম প্রতিবাদী মুখও ছিলেন তিনি। দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন কলকাতার মিত্র ইন্সটিটিউশনের (মেন) শিক্ষক বরুণ বিশ্বাস।

সুটিয়ায় বরুণের বাড়ির কাছেই রাস্তার পাশে তাঁর আবক্ষ মূর্তি বসেছে। এ দিন দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, মূর্তির গলায় মালাটুকু নেই। এলাকায় দেখা হল ধীরা গায়েনের সঙ্গে। বললেন, ‘‘আমার ছেলে এখন দশম শ্রেণিতে পড়ে। বরুণ মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত বই-খাতা কিনে দিত ও। গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ার খরচ বরুণই দিত। এখন খুব মনে পড়ে ওর কথা।’’

সুটিয়ার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বহু ছেলেমেয়েকে বরুণ নিজের বেতনের টাকা থেকে বই-খাতা-পোশাক কিনে দিতেন। নিয়মিত ছেলেমেয়েদের বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিতেন পড়াশোনা করতে অসুবিধা হচ্ছে কিনা। চিকিৎসার খরচ জুগিয়েছেন অনেকের। কারও টাকার অভাবে মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না জানতে পারলেও হাসি মুখে সাধ্য মতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। অনেককেই বিনা পারিশ্রমিকে পড়াতেন। পরিচিত লোকজন জানালেন, পরোপকারী যুবকটির মাসের শেষে বেতনের সব টাকা শেষ হয়ে হাত খালি হয়ে যেত অনেক সময়েই। বাড়ির লোকের থেকে চেয়েচিন্তে কয়েকটা দিন চালিয়ে নিতেন। কিন্তু গরির মানুষের প্রয়োজনে কখনও সাহায্য করতে কুণ্ঠা করতেন না।

বরুণের বন্ধু তথা স্কুলশিক্ষক পার্থসারথি দে-র কথায়, ‘‘শিক্ষক হিসাবে বরুণের দক্ষতা, ভাষা শৈলী ছিল চমৎকার। বাংলা ভাষার প্রতি আগ্রহ তৈরি করতেন ছাত্রদের মধ্যে। পাঠ্যক্রমের বাইরে গিয়েও ছেলেদের সাহিত্য পড়াতেন।’’

বরুণের মৃত্যুর পরে তৈরি হয়েছিল, ‘বরুণ স্মৃতি রক্ষা কমিটি।’ বরুণের সামাজিক কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ছিল কমিটির লক্ষ্য। যদিও কাজ এখন উল্লেখযোগ্য ভাবে শুরুই করা যায়নি বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেল। সুটিয়া প্রতিবাদী মঞ্চের সম্পাদক ননীগোপাল পোদ্দার বলেন, ‘‘বরুণ ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় সাহায্য করতেন। শিক্ষক দিবসের দিন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন। নিজের স্কুলের প্রধান শিক্ষকের অনৈতিক কাজেরও তিনি প্রতিবাদ করেছিলেন।’’

এ দিন কেউ-ই মনে করল না বরুণের কথা। ননীগোপাল বলেন, ‘‘আমরা মূলত বরুণের মৃত্যুদিন ও জন্মদিনটা পালন করি। শিক্ষক দিবসে তাঁকে স্মরণ করা হয়ে ওঠেনি। তবে এলাকার স্কুলগুলিতে তাঁকে স্মরণ করা হয়।’’ যদিও এ দিন বিভিন্ন স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তেমন কোনও অনুষ্ঠান হয়নি বরুণকে নিয়ে।

২০১২ সালের ৫ জুলাই স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে গোবরডাঙা স্টেশনে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন বরুণ। গোটা সুটিয়া সে সময়ে খুনিদের শাস্তির দাবিতে গর্জে উঠেছিল। সুটিয়া বারাসত পল্লি উন্নয়ন বিদ্যাপীঠের মাঠে আকাশ ভাঙা বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বরুণের দেহের সামনে হাজার হাজার মানুষ শপথ নিয়েছিলেন, খুনিরা শাস্তি না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। যদিও সেই আন্দোলন এখন অনেকটাই অস্তমিত। মৃত্যুদিনে একটা স্মরণ-অনুষ্ঠান হয় বটে, কিন্তু সেখানে মানুষের যোগদান কমেছে। খুনিদের আজও শাস্তি হয়নি। বনগাঁ মহকুমা আদালতে বিচার পর্ব কার্যত থমকে।

ফিরে দেখা, বরুণ

• ৫ জুলাই,২০১২: গোবরডাঙা স্টেশন চত্বরে বরুণ বিশ্বাসকে গুলি করে দুষ্কৃতীরা খুন করে।

• ৬ জুলাই: পরিবারের তরফে বনগাঁ জিআরপি-র কাছে খুনের অভিযোগ দায়ের। রাজ্য পুলিশ ও জিআরপি তদন্তে নেমে ৬ জন দুষ্কৃতীকে ধরে।
• ৭ জুলাই: মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তদন্ত ভার নেয় সিআইডি। তদন্তে নেমে তাঁরা জানান, দমদম সেন্ট্রাল জেলে বসে বরুণ খুনের ছক কষা হয়েছিল।

• ২৮ সেপ্টেম্বর: সিআইডি বনগাঁ আদালতে চার্জশিট জমা দেয়। সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে অন্যতম সাজাপ্রাপ্ত আসামি সুশান্ত চৌধুরি-সহ ১০ জনের নামে চার্জশিট। বরুণের দিদি প্রমীলা রায় দাবি করেন, বরুণ-খুনে জড়িত রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। জ্যোতিপ্রিয় বিধাননগর আদালতে প্রমিলার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। তা এখনও বিচারাধীন

• সুশান্ত চৌধুরী মারা গিয়েছে। এক জনের জুভেনাইল আদালতে সাজা হয়েছে। ৬ জনের বিচার চলছে। ২ জন ফেরার।

• মামলায় সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছে পরিবার।

অন্য বিষয়গুলি:

Barun Biswas Teacher's Day Sutia Gaighata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy