প্রতীকী ছবি
কোথাও পুরনো তালিকায় নাম ছিল ২২৬ জনের। নতুন তালিকায় কেটেকুটে ঠাঁই পেয়েছে ১০০ জনের নাম। ২৩০ জনের নামের তালিকা ছেঁটে ১২৩ জনের নাম আছে।
আমপানে ঘরের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে তালিকায় নানা অসঙ্গতির অভিযোগ উঠছিল। যার জেরে তালিকা পুরো ফেলে দিয়ে নতুন করে তৈরির নির্দেশ দেন বিডিও। তারপরেই চাঞ্চল্যকর ভাবে বদলে গিয়েছে সেই তালিকা।
ঘটনাটি আমপান বিধ্বস্ত বাগদা ব্লকের। কয়েক হাজার বাড়ি ভেঙেছিল এখানে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করতে শুরু করে পঞ্চায়েতগুলি। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা তৈরি করেছে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের প্রধান-সহ চারজনের কমিটি। ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা তৈরিও হয়। এরপরেই ওই তালিকা নিয়ে ব্লকের বিভিন্ন এলাকার গ্রামবাসীরা আপত্তি তোলেন। তাঁদের দাবি, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত অনেকের নাম ওই তালিকায় নেই। আবার ক্ষতিগ্রস্ত নন, এমন মানুষের নামও তালিকায় রয়েছে।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, বিডিও অফিসে এসেও অনেক মানুষ ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করেন। তাঁরা দাবি করেন, তাঁদের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হলেও নাম পঞ্চায়েতের তৈরি তালিকায় নেই।
এরপরেই বিডিও জ্যোতিপ্রকাশ হালদার সোমবার পঞ্চায়েতগুলির প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, থানার ওসি এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে প্রধানেরা প্রস্তাব দেন, নতুন করে তালিকা তৈরি করা হোক। বিডিও সেই মতো নির্দেশ দিয়েছেন, নতুন করে তালিকা তৈরি করতে হবে। বিডিও বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবারের মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিকদের নামের তালিকা তৈরি হয়ে যাচ্ছে। শুক্রবারই তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিকদের তালিকা রবিবারের মধ্যে পঞ্চায়েতগুলিকে জমা দিতে বলা হয়েছে।’’ ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত একজনের নামও যাতে বাদ না যায়, সে দিকেই প্রশাসন নজর রাখছে। বিডিও অফিসে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ছবি তুলে নিয়ে আসছেন। প্রশাসনের তরফে পঞ্চায়েতগুলিকে তাঁদের নাম তালিকায় খতিয়ে দেখে তুলে দিতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
এ দিকে বুধবারই ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা দেখতে চেয়ে রনঘাট পঞ্চায়েতে তালা দিয়ে, পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসী। তাঁদের দাবি, তাঁরা জানতে পেরেছেন ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সাহায্য পাওয়ার জন্য সে তালিকা তৈরি করা হয়েছিল, তা ত্রুটিপূর্ণ। অনেক প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের নাম বাদ গিয়েছে। আবার ক্ষতিগ্রস্ত নন, এমন মানুষের নামও তালিকায় তোলা হয়েছে। ব্লকের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ নিজেদের আত্মীয়-স্বজনের নাম তালিকায় তুলে দিয়েছিলেন। পাকাবাড়ি রয়েছে, এমন লোকজনের নামও তোলা হয়েছিল। তালিকা তৈরি দেরি হওয়ায় মানুষ ক্ষুব্ধ। তাঁদের দাবি, অনেক ব্লকের মানুষ ইতিমধ্যেই টাকা পেতে শুরু করেছেন। আর এখানে তালিকা তৈরিতে দীর্ঘ সময় লাগছে। সামনেই বর্ষা। সময় মতো ঘরবাড়ি মেরামত করতে না পারলে দুর্দশার শেষ থাকবে না। রনঘাট পঞ্চায়েতের প্রধান গণেশ রায় বলেন, ‘‘ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের নামের নতুন তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ১২৩ জনের নাম আছে। পুরনো তালিকায় ছিল ২৩০ জনের নাম।’’ কী ভাবে কমে গেল সংখ্যা?
প্রধানের যুক্তি, ‘‘পঞ্চায়েত সদস্যদের মধ্যে কেউ কেউ অবৈধ ভাবে কিছু নাম তালিকায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। তা ছাড়া, খুব অল্প সময়ের মধ্যে তালিকা তৈরি করতে হয়েছিল বলে ভুলভ্রান্তি হয়ে গিয়েছিল।’’
বিজেপি পরিচালিত সিন্দ্রাণী পঞ্চায়েতের প্রধান লতিকা মণ্ডলের কথায়, ‘‘পুরনো তালিকায় আমাদের ২২৬ জনের নাম ছিল। নতুন তালিকায় নাম আছে ১০০ জনের।’’ এত নাম কী ভাবে বাদ গেল নতুন তালিকায়?
প্রধান বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সদস্যেরা আমাদের যে তালিকা দিয়েছিলেন, সেটা জমা করেছিলাম। পঞ্চায়েত সদস্যদের তো বিশ্বাস করতেই হয়। পুরনো তালিকায় এমন নাম ছিল, যাদের কয়েকজনের বাড়ির ক্ষতি হয়নি। বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত তালিকায় নাম তুলে দেওয়া হয়েছিল।’’ তিনি জানান, পুরনো তালিকায় যাঁদের নাম ছিল, তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তদন্ত করে নতুন তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
বাগদার বিজেপির নেত্রী তথা দলের বারাসত সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি বিভা মজুমদার বলেন, ‘‘পুরনো তালিকায় স্বজনপোষণ করা হয়েছিল। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল। আমরা তার বিরোধিতা করেছিলাম।’’
বাগদার তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদ সদস্য পরিতোষ সাহাও মানছেন, গোলমাল একটা হয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘পুরনো তালিকায় কমবেশি সব পঞ্চায়েত থেকেই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের থেকে তালিকায় বেশি নাম ঢুকে পড়েছিল।’’
তবে কি দুর্নীতি হয়েছে? সে কথা সরাসরি মানছেন না পরিতোষ। তিনি বলেন, ‘‘এমন দেখা গিয়েছে, আংশিক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তাঁদের নাম সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত তালিকায় তুলে দেওয়া হয়েছিল। সে কারণেই নতুন করে তদন্ত করিয়ে নেওয়া হল।’’
বিডিও অবশ্য মুখ খুলতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy