এই জায়গা নিয়েই গন্ডগোল দুই পরিবারের মধ্যে। নীচে, মৃতদের বাড়ির সামনে ভিড় প্রতিবেশীদের। —দিলীপ নস্কর
বাড়িতে ঠাকুরকে মাখা সন্দেশ দিয়ে পুজো দেওয়া হয়েছিল। সেই প্রসাদ খেয়ে মৃত্যু হয় একই পরিবারের চারজনের। ওই প্রসাদের বিষ মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে তদন্তকারীরা জেনেছেন। এই ঘটনায় পুলিশ আগেই রঞ্জিত কয়াল নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছিল। ওই ঘটনায় শনিবার রাতে রঞ্জিতের পরিবারেরই আরও ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম গোপাল কয়াল, স্ত্রী দিপালী, ছেলে সঞ্জীব, ছেলের স্ত্রী ডলি, মেজো বৌমা অষ্টমী, মেয়ে মান্তা কয়াল। ধৃতদের রবিবার ডায়মন্ড হারবার আদালতে তোলা হলে বিচারক সঞ্জীবকে ১০ দিনের পুলিশ হেফাজত ও বাকিদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মথুরাপুরের ভগবতীপুর গ্রামের বাসিন্দা গোপাল কয়াল ও বিশ্বনাথ কয়াল। তাঁরা সম্পর্কে আত্মীয়। গোপালের দুই ছেলে সঞ্জীব ও রঞ্জিত। বিশ্বনাথের তিন ছেলে সুদীপ, সোমনাথ ও নবদ্বীপ। দু’জনেই পাশাপাশি ইটের দেওয়ালের টালির বাড়িতে থাকেন। দু’টো বাড়ির মাঝে প্রায় ২ ফুট চওড়া নিকাশি নালা রয়েছে।
ওই নালার দখল নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। বিবাদ মেটাতে বহুবার সালিশি সভাও বসে। প্রতিবারই সেখানে বিবাদ মিটিয়ে দেওয়া হত। দুই বাড়ির বারান্দা সামনাসামনি। কিন্তু একে অপরের মুখ দেখবেন না বলে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
৮ জানুয়ারি বুধবার ওই নালার দখল নিয়ে ফের দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল বিবাদ বাধে। পরে গ্রামবাসীদের মধ্যস্থতায় বিষয়টি মেটে। দুই পরিবারের মধ্যে বিবাদ থাকলেও গোপালের ছেলে রঞ্জিতের সঙ্গে বিশ্বনাথের পরিবারের সম্পর্ক ভাল ছিল। পরের দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে রঞ্জিতই পুজোর মাখা সন্দেশ খেতে দেয় বিশ্বনাথের পরিবারকে। ওই সন্দেশ খান বিশ্বনাথের স্ত্রী মঙ্গলা ছেলে সোমনাথ ও নবদ্বীপ। সুদীপ দিনমজুরের কাজ করেন। তখন তিনি বাইরে থাকায় ওই সন্দেশ খাননি।
পুলিশ জানিয়েছে, মাখা সন্দেশ খাওয়ার পর তাঁদের বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। শ্বাসকষ্ট হতে শুরু করে। প্রতিবেশীরা ৪ জনকে মথুরাপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই মারা যান ছোট ছেলে নবদ্বীপ। বাকিদের অবস্থার অবনতি হওয়ায় ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। ওই দিন রাতেই সেখানে তিন জনের মৃত্যু হয়।
পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে রঞ্জিতের দেওয়া মাখা সন্দেশ খেয়ে ওই চারজনের মৃত্যু হয়েছে। সেই সুদীপের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথমেই রঞ্জিতকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর বাকি ৬ জনকে ধরে পুলিশ।
এ দিকে একই পরিবারের চারজনের মৃত্যুর ঘটনা সারা গ্রাম শোকস্তব্ধ। ঘটনার পর থেকে গ্রামের মানুষ রান্না খাওয়া ভুলে গিয়েছেন। গোপালের পরিবারের বিরুদ্ধে সারা গ্রাম ক্ষোভে ফুঁসছে। গ্রামে উত্তেজনা থাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। গ্রামবাসীরা জানালেন, দুই পরিবারের মাঝে নালার দখল নিয়ে বিবাদ চলছে প্রায় পনেরো বছর ধরে। ওই গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জীবন পুরকাইত বলেন, ‘‘ওঁদের নালা দখল নিয়ে বহু গ্রাম্য সভা ডেকে মিটিয়েছি। সভায় দু’পক্ষ রাজি হয়ে গেলেও আবার সেই অশান্তি বাধত।’’
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, গোপালের ছেলে সঞ্জীব এলাকায় গুনিন বলে পরিচিত। দিন কয়েক আগে ঝগড়ার সময় সঞ্জীব বলেছিল, ওই পরিবারের সকলকে আমি শেষ করে দেব। ওদের বংশে বাতি দেওয়ারও কেউ থাকবে না। এক গ্রামবাসীর কথায়, ‘‘ওর মদতেই চারজনের মৃত্যু হয়েছে। গ্রামে নানা অশান্তিও ছড়ায় গোপালের পরিবার। ওদের জ্বালায় তিতিবিরক্ত ছিলাম আমরাও। ওরা গ্রামে ফিরে এলে আবার অঘটন ঘটাবে।’’
এ দিন দুপুরে গলায় কাছা নিয়ে ফাঁকা বাড়ির বারান্দায় শূন্য দৃষ্টিতে বসেছিলেন ওই পরিবারের একমাত্র বেঁচে থাকা সুদীপ। বাবা-মাকে দাহ করা হয়েছে। এ বার ভাইকে দাহ করা হবে। কিছু বলতে গেলেই হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলছেন। প্রতিবেশীরা বলেন, ‘‘সুদীপ বাইরে না থাকলে সে-ও বাঁচত না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy