Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
By Election

উপ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান না, জানাচ্ছেন বিশ্বজিৎ

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বাগদা থেকে বিজেপির টিকিটে দাঁড়িয়ে জয়ী হয়ে বিশ্বজিৎ বিধায়ক হয়েছিলেন। তাঁর বাড়ি বনগাঁ উত্তর বিধানসভার গোপালনগরে।

বিশ্বজিৎ দাস।

বিশ্বজিৎ দাস। —ফাইল চিত্র।

সীমান্ত মৈত্র  
বাগদা  শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২৪ ০৮:৪৪
Share: Save:

বাগদা বিধানসভার উপ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হতেই (১০ জুলাই) এ বার তৃণমূল প্রার্থী কে হতে চলেছেন, তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বাগদার সদ্য প্রাক্তন বিধায়ক তথা এ বারের লোকসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস জানিয়েছেন, তিনি উপ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান না। সূত্রের খবর, বিশ্বজিৎ তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘বাগদা কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থী কে হবেন, সে বিষয়ে শীর্ষ নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেবেন। আমি এ বার ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই না। দল যাঁকেই প্রার্থী করবে, আমার এক মাত্র লক্ষ্য থাকবে বাগদা আসনটিতে তৃণমূলকে জেতানো।" বিশ্বজিতের কথায়, "আমি চাই, বাগদার ভূমিপুত্র কেউ এ বার উপ নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুন।" যদিও বিশ্বজিৎ ‘ভূমিপুত্র’ বলতে কারও কথা আলাদা করে উল্লেখ করেননি।

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বাগদা থেকে বিজেপির টিকিটে দাঁড়িয়ে জয়ী হয়ে বিশ্বজিৎ বিধায়ক হয়েছিলেন। তাঁর বাড়ি বনগাঁ উত্তর বিধানসভার গোপালনগরে। ভোটে পরাজিত হলেও বিশ্বজিৎ এখনও তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি।

গত লোকসভার প্রচারে বাগদার হেলেঞ্চায় জনসভা করতে এসেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে নিজের বক্তৃতায় বাগদা উপ নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী কে হবে, সে বিষয়ে বলেছিলেন, "জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে আমি আবার বাগদায় আসব। ৫০ হাজার মানুষ গোপনে ব্যালটে ভোট দিয়ে বিধায়ক ভোটের উপ নির্বাচনে তাঁদের প্রার্থী বেছে নেবেন। ৪টি বক্স থাকবে। সেখানে সকলে ভোট দেবেন। মানুষ যাঁকে প্রার্থী হিসাবে চাইবেন, আমরা তাঁকেই প্রার্থী করব।"

কিন্তু জেলা তৃণমূল সূত্রে জানানো হয়েছে, লোকসভা ভোট শেষ হতেই উপ নির্বাচনের দিন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচন সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে প্রার্থী নির্বাচন শীর্ষ নেতৃত্বের হাতেই থাকছে।

কেন বিশ্বজিৎ এ বার ভোটে দাঁড়াতে চাইছেন না?

রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন, এ বারের লোকসভা ভোটে বাগদা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ পিছিয়ে ছিলেন ২০ হাজার ৬১৪ ভোটের ব্যবধানে। বাগদা কেন্দ্র থেকে বিশ্বজিৎ পিছিয়ে থাকলেও বাগদার অনেকে মানুষই স্বীকার করছেন, বিধায়ক থাকাকালীন গত আড়াই বছরে বিশ্বজিৎ বাগদার উন্নয়নে ভাল কাজ করছেন। কাজের নিরিখে অনেকেই তাঁর প্রশংসা করছেন। বিশ্বজিতের কথায়, "মানুষের কাছ থেকে পাওয়া এই প্রশংসা নিয়েই থাকতে চাইছি।"

দলের একাংশের মতে, লোকসভা ভোটে বাগদায় তৃণমূলের পিছিয়ে থাকার বড় কারণ, গোষ্ঠীকোন্দল। এই অল্প সময়ে সেই কোন্দল মিটিয়ে সকলকে এক ছাতার তলায় আনাটা তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে চ্যালেঞ্জ। মতুয়া উদ্বাস্তু অধ্যুষিত বাগদায় ভাল ফল করতে হলে স্থানীয় বাসিন্দা মতুয়া সমাজের মধ্যে থেকে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মুখই বেশি কার্যকর হবে বলে ঘনিষ্ঠ মহলে বিশ্বজিৎ জানিয়েছেন।

মঙ্গলবারই মতুয়াদের একাংশ (তৃণমূলপন্থী) দাবি তুলেছেন, বাগদা বিধানসভায় এ বার মতুয়াদের মধ্যে থেকে প্রার্থী করার। এ দিন বিকেলে মতুয়ারা হেলেঞ্চায় হরিচাঁদ মন্দিরে জড়ো হয়েছিলেন। সেখানে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের কার্যকরী সভাপতি শচীন সরকার বলেন, "বাগদা এলাকায় ৮০ শতাংশ মতুয়া সমাজের মানুষ বসবাস করেন। এখানকার মতুয়ারা দাবি তুলেছেন, মতুয়াদের মধ্যে থেকে প্রার্থী করতে হবে। তা হলে মতুয়াদের এবং বাগদার সাধারণ মানুষের উন্নয়ন হবে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবিপত্র পাঠাচ্ছি।" বিশ্বজিৎ বলেন, "প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছি, শীর্ষ নেতৃত্ব মতুয়া সমাজের মধ্যে থেকে কোনও মহিলাকে প্রার্থী করতে চলেছেন।’’

বিজেপি অবশ্য বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডল বলেন, "এ সব নাটক করে কোনও লাভ হবে না। বাগদার মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষ লোকসভা ভোটে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা বিজেপির সঙ্গে ছিলেন, আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন।"

মঙ্গলবার সকালেই বাগদার বিভিন্ন এলাকায় বাগদার প্রাক্তন বিধায়ক তথা বিজেপি নেতা দুলাল বরের বিরুদ্ধে পোস্টার পড়তে দেখা গিয়েছে। ছাপানো পোস্টারে তাঁকে কটাক্ষ করে লেখা হয়েছে, ‘‘বাগদা বিধানসভায় তৃণমূলের দালাল দুলাল বরকে আমরা চাই না।" নীচে লেখা, ‘প্রচারে ভারতীয় জনতা পার্টি।’ এ বিষয়ে দুলালের প্রতিক্রিয়া, "এই পোস্টার প্রমাণ করছে, বাগদায় আমার জনপ্রিয়তা আছে।"

একই ধরনের পোস্টার পড়তে দেখা গিয়েছে বিজেপি নেতা হারাধন হালদারের বিরুদ্ধে। এ ক্ষেত্রে তাঁকে ‘সুদখোর’ বলে সমালোচনা করা হয়েছে। হারাধন জানিয়েছেন, প্রার্থী হতে তিনি কোথাও যোগাযোগ করেননি। কাকে প্রার্থী করা হবে, সেটা দলীয় সিদ্ধান্ত। বিজেপির মধ্যে কোনও গোষ্ঠী কোন্দল নেই, এটা বিরোধীদের চক্রান্ত বলেই তাঁর দাবি।

বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে পোস্টার পড়া নিয়ে বিশ্বজিৎ বলেন, "তৃণমূল এ সব নোংরা রাজনীতি করে না। বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দলের ফলে। ভোটে কে দাঁড়াবেন, তা নিয়ে ওঁদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়ে গিয়েছে।"

অন্য বিষয়গুলি:

Biswajit Das TMC Bagda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy