Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
গ্রেফতার দুই সুপারভাইজ়ার
100 Days Work

একশো দিনের বকেয়া টাকা ‘ভুয়ো’ শ্রমিককে

পুলিশ জানিয়েছে, গাইঘাটার বিডিও নীলাদ্রি সরকারের অভিযোগের ভিত্তিতেই ওই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৪৬
Share: Save:

রাজ্যে দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প বন্ধ রয়েছে। তার আগে ওই প্রকল্পে যে সব শ্রমিক কাজ করেছিলেন, কেন্দ্র তাঁদের টাকা আটকে রাখায় সম্প্রতি রাজ্য সরকার তা মিটিয়ে দেয়। কিন্তু গাইঘাটার সুটিয়া পঞ্চায়েতের কিছু ভুয়ো শ্রমিককে ওই টাকা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল সেখানকার দুই সুপারভাইজ়ারের বিরুদ্ধে। প্রসেনজিৎ ঘোষ এবং রূপালি মণ্ডল নামে ওই দুই অভিযুক্তকে রবিবার গ্রেফতার করে পুলিশ। ভোটের আবহে ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতির চাপানউতোর শুরু হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, গাইঘাটার বিডিও নীলাদ্রি সরকারের অভিযোগের ভিত্তিতেই ওই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ, ওই দু’জন ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ করেননি, এমন শ্রমিকদের নাম মাস্টাররোলে তুলে দিয়েছিলেন। সেইমতো রাজ্য সরকারের দেওয়া টাকা ওই ‘ভুয়ো’ শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে চলে আসে। ধৃতদের সোমবার বনগাঁ মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়। বিচারক তাদের ৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

ব্লক প্রশাসনের একটি সূত্রে জানানো হয়েছে, ১০০ দিনের প্রকল্পে দক্ষ শ্রমিকেরও প্রয়োজন হয়। কিন্তু জব কার্ড থাকা শ্রমিকদের মধ্যে অনেক সময়ে দক্ষ শ্রমিক মেলে না। দক্ষ শ্রমিক বাইরে থেকে আনারও নিয়ম নেই। এ ক্ষেত্রে জব কার্ড না থাকা দক্ষ শ্রমিকের কাজে লাগানোর পরে তাঁদের মজুরির টাকা জব কার্ড থাকা শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে ঢুকিয়ে ওই দুই অভিযুক্ত মেটানোর ব্যবস্থা করেছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। ভুয়ো শ্রমিকদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

এ দিনই ওই পঞ্চায়েতের ৯৯ নম্বর বুথের বেশ কিছু ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের শ্রমিক বকেয়া কম মিলেছে, এই অভিযোগে বিডিওকে স্মারকলিপি দেন। পঞ্চায়েতের আরও এক সুপারভাইজ়ারের বিরুদ্ধেও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ জানানো হয়। নেতৃত্বে ছিলেন বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবদাস মণ্ডল। দেবদাসের অভিযোগ, ‘‘এই দুর্নীতিতে কেবল দুই সুপারভাইজ়ার যুক্ত নন। পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান-সহ তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরাও যুক্ত। যাঁরা কাজ করেছেন, অনেকেই রাজ্য সরকারের টাকা পাননি। পেলেও কম পরিমাণে। সেখান থেকেও তৃণমূলের লোকজন কাটমানি খেয়েছেন।’’

পঞ্চায়েতের উপপ্রধান, তৃণমূলের মিহির বিশ্বাস অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘কোনও সুপারভাইজ়ার ১০ টাকাও কারও কাছ থেকে নেননি। যে দু'জন গ্রেফতার হয়েছেন, তাঁদের ভুল একটাই। তাঁরা শ্রমিকদের দিয়ে সই না করিয়ে নিজেরা মাস্টাররোলে সই করে দিয়েছিলেন। তাঁরা কোনও টাকা আত্মসাৎ করেননি। এটা বিজেপির রাজনৈতিক চক্রান্ত।’’

শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, তাঁরা ১০০ দিনের প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ করেছিলেন। বকেয়ার পরিমাণ অনেক বেশি হলেও কেউ ১১০০ টাকা, কেউ ১৫০০ টাকা পেয়েছেন। শ্রমিকদের অভিযোগ, সুপারভাইজ়াররা তাঁদের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন, প্রতিদিনের হিসেবে মজুরি মিলবে। বাস্তবে তা মেলেনি। অথচ, কাজ করেননি, এমন ১৫ জন শ্রমিকের নাম ওই প্রকল্পের কাজের মাস্টাররোলে নথিভুক্ত করে তাঁদের অ্যাকাউন্টে ৫-৬ হাজার টাকা করে পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের দাবি, পাইয়ে দেওা টাকার পরিমাণ ৮১ হাজার ৫৫৪ টাকা।
টাকা প্রাপকদের মধ্যে কয়েকজন জানান, এক সুপারভাইজ়ারের কথামতো তাঁর কাছে তাঁরা জব কার্ড এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়েছিলেন। তাঁরা একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করেননি। পরে জানতে পারেন, অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে। তখন সুপারভাইজ়ার তাঁদের কাছে সেই টাকার দাবি জানান। বিনিময়ে ৫০০-২০০০ হাজার টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু এখনও তাঁরা ওই টাকায় হাত দেননি।

অন্য বিষয়গুলি:

Gaighata Fraudulence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy