মিনাখাঁয় বিদ্যাধরী নদী থেকে বালি তোলা হচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র।
লোকসভা ভোট মিটেছে। পরিবেশের তোয়াক্কা না করে ফের বসিরহাট মহকুমার বিদ্যাধরী, রায়মঙ্গল-সহ বিভিন্ন নদীর চর ও বাঁধের মাটি-বালি বেআইনি ভাবে কেটে পাচারের অভিযোগ উঠছে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কৃষিজমিকেও রেয়াত করছে না বলে অভিযোগ তুলছেন গ্রামবাসী। কেউ কেউ এই কারবারে শাসকদল ও পুলিশের একাংশের মদত রয়েছে, এমন দাবিও করছেন। তৃণমূল বা পুলিশ এ কথা মানেনি।
বসিরহাট জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘অবৈধ ভাবে বালি ও মাটি কাটার অভিযোগে বিডিও এবং ব্লক ভূমি দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে বাদুড়িয়ায় বেশ কয়েক বার অভিযান চালানো হয়েছে। বালি ও মাটি কাটার সরঞ্জাম, ট্রাক্টর, ট্রলি আটক করা হয়েছিল। কয়েক জনকে গ্রেফতারও করা হয়। লিখিত অভিযোগ পেলে ফের তল্লাশি চালানো হবে।’’
মিনাখাঁ ব্লক দিয়ে বয়ে গিয়েছে বিদ্যাধরী নদী। এখানকার নদীপারের বহু মানুষের অভিযোগ, ইদানীং ভাটার সময় জল নেমে গেলে নদীর চর এবং বাঁধের পাশ থেকে বালি কেটে নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় শ্যামল হালদার, সুজয় নস্করদের অভিযোগ, ‘‘বালি কাটা নিয়ে বহু বার প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু পুলিশের একাংশ ও শাসকদলের কিছু নেতার চোখরাঙানিতে আমরা প্রতিবাদ আন্দোলন ধরে রাখতে পারিনি।’’
অবশ্য শুধু মিনাখাঁই নয়, হাড়োয়া, বাদুড়িয়া, মাটিয়া এবং স্বরূপনগর-সহ বিভিন্ন এলাকার নদীর চর ও পার থেকে পরিবেশ আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সাদা বালি কাটা বেড়ে গিয়েছে বলে গ্রামবাসীদের দাবি।
সিপিএম নেতা নিরাপদ সর্দার বলেন, ‘‘নির্বাচনের আগে প্রশাসনের তৎপরতায় অবৈধ ভাবে বালি এবং মাটি কাটা বন্ধ ছিল। ভোট শেষ হতেই প্রশাসনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সেই কাজ জোরকদমে শুরু হয়েছে।’’ একই সুরে বিজেপি নেতা তারক ঘোষও বলেন, ‘‘ভোট শেষ হতেই পুলিশ প্রশাসন চোখ বন্ধ করে রেখেছে। আর শাসকদলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বালি-মাটি চুরি করছে দু’হাত ভরে।’’
মাটি কাটার বিষয়ে বিশেষ কিছু জানা নেই দাবি করে মিনাখাঁর তৃণমূল বিধায়ক ঊষারানি মণ্ডল বলেন, ‘‘অভিযোগ যখন উঠেছে তখন তদন্ত হবে। আইনানুগ ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে।’’
ভুক্তভোগীদের খেদ, অবৈধ ভাবে নদী থেকে বালি তোলার ফলে প্রতি বছর নদীর বাঁধ ভাঙে। সেই বালি দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় রাতের অন্ধকারে ভরাট হয়ে যায় জলাশয়। নির্দ্বিধায় চলে প্রোমোটারিরাজ। ভাটার সময় জল সরতেই নদীর মাঝে জেগে ওঠা চরের বালি যেমন তোলা হচ্ছে, তেমনই কেটে নেওয়া হচ্ছে পারের বালি। এর ফলে পার ধসে ভাঙনের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বর্ষার মুখে। বালি নৌকা বোঝাই হয়ে বা ট্রাক-ট্রাক্টরের পিছনে বাঁধা ট্রলিতে করে হাড়োয়ার কুলটি-সহ বিভিন্ন সাদা বালির অবৈধ খাদানে মজুত করা হচ্ছে। সেখান থেকেই ডাম্পার বা ট্রাকে করে চড়া দামে বসিরহাট-সহ বিভিন্ন এলাকায় বালি বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই জানান, নদী থেকে তোলা সাদা বালি বিক্রি পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে মোটা অঙ্কের টাকার লেনদেন চলে। দুর্ঘটনা ঘটে এই বালি ও মাটির কারণে। এগুলি নিয়ে যাওয়ার সময় কোনও ঢাকা না থাকায় বালি ওড়ে। পথচারীদের চোখে-মুখে ঢোকে। আর মাটি হলে তো কথাই নেই। বর্ষায় পিচরাস্তায় ডাম্পার বা ট্রাক থেকে পড়া মাটিতে মোটরবাইকের চাকা পিছলে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy