Advertisement
E-Paper

ভোটের মতো শান্তি গণনাতেও থাকবে কি, আশা-আশঙ্কায় দুলছে ভাঙড় 

রবিবারের পরে এ দিনও সেখান থেকে তেমন কোনও অশান্তির খবর আসেনি। তৃণমূল এবং আইএসএফ, দু’পক্ষই দাবি করেছে, সব শান্ত রয়েছে। কিন্তু পরে কী হবে, জানা নেই।

An image of Vote counting

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৩ ০৭:০৫
Share
Save

কাঁঠালিয়া হাইস্কুলের নীল বাড়িটা যেন একটি দুর্গ! রবিবার সকাল থেকেই সেখান দিয়ে সাধারণ মানুষের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছিল। রবিবার রাতের পরে যা আরও বাড়ে। সোমবার সকালে লাউহাটি-ভাঙড় রোডে স্কুলের গেটের দু’দিকে দেড় কিলোমিটার দূরে বসেছে পুলিশ পিকেট। গাড়ি দেখলেই তল্লাশি চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। স্কুলের গেটে পাহারায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গেই যুক্ত হয়েছেন রাজ্য পুলিশের বন্দুকধারী অফিসারেরা। নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, এমন স্টিকার লাগানো গাড়িরও ছাড় নেই। পুলিশ স্টিকার লাগানো গাড়িতেও তল্লাশি চলছে পুরোদমে!এই স্কুলেই আজ, মঙ্গলবার গণনা হবে ভাঙড়ের ২১৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ৩০টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং তিনটি জেলা পরিষদের ভোট। তার আগে রবিবার রাতে এই স্কুলের গেটের কাছেই একটি মাঠে জড়ো হয়েছিলেন জনা পঞ্চাশ ‘ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট’ (আইএসএফ) কর্মী। তাঁদের দাবি, গণনা কেন্দ্র পাহারা দিতে এসেছেন তাঁরা। গ্যাস আভেন জ্বালিয়ে রাতের রান্নাও শুরু করে দিয়েছিলেন তাঁদের কেউ কেউ। কিন্তু, কিছু ক্ষণের মধ্যেই পুলিশের তাড়ায় এলাকা ছাড়তে হয় তাঁদের। এ দিন তাঁদের দাবি, ‘‘পুলিশ আমাদের মেরে তাড়িয়েছে। ২৬টা মোটরবাইক ভেঙে দেওয়া হয়েছে। পরে থানা থেকে সেই বাইক তুলে নিয়ে গিয়েছে।’’ এক আইএসএফ কর্মীর দাবি, ‘‘বিকেলেও মাঝেরআইটে আমাদের দলীয় কার্যালয়ের কাছে পুলিশ হামলা চালিয়েছে।’’ ভাঙড়ের পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, কাঁঠালিয়া স্কুলের গণনা কেন্দ্রের কাছে কাউকে ঘেঁষতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে।

তবে, শনিবার ভোট মেটার পর থেকে গত দু’দিনে ভাঙড়ে অভিযোগ বলতে এটুকুই। রবিবারের পরে এ দিনও সেখান থেকে তেমন কোনও অশান্তির খবর আসেনি। তৃণমূল এবং আইএসএফ, দু’পক্ষই দাবি করেছে, সব শান্ত রয়েছে। কিন্তু পরে কী হবে, জানা নেই। প্রসঙ্গত, ১৫ জুন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে তিন জনের মৃত্যু হওয়ার পর থেকেই থমথমে পরিস্থিতি ভাঙড়ে। সে দিন বিজয়গঞ্জ বাজার লাগোয়া একাধিক জায়গায় গাড়ি পোড়ানো ও ঘর ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ভোটের দিনও সেই থমথমে ভাব কাটিয়ে বেরোতে পারেনি দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই জনপদ। সে দিন অবশ্য ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হন তিন জন। তবে, ওই পর্যন্তই। যে মাত্রায় হিংসার ঘটনা ভাঙড়ের নির্বাচনের সঙ্গে প্রতি বার জড়িয়ে যায়, তার সিকিভাগও সে দিন ঘটেনি বলে অনেকের মত।

কিন্তু ফল প্রকাশের দিন এবং তার পরে কী হবে? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে জয়পুর, শানপুকুর, কচুয়া, বেলেদোনা এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। জয়পুরের বাসিন্দা সইফুল ইসলাম বলছিলেন, ‘‘বিধানসভার ফল প্রকাশের পরে হানাহানিতে একের পর এক ঘর ভাঙতে, আগুন ধরাতে দেখেছি। কিন্তু এ বার সেই ভয় নেই। আমাদের চোখ সয়ে গিয়েছে।’’ পোলেরহাটের সুমন বর্মণের আবার দাবি, ‘‘পাড়ার সকলেই কোনও না কোনও দলের পক্ষে। সামান্য কথাবার্তাতেও রাজনৈতিক রং লেগে যাচ্ছে। তা থেকে বড় গন্ডগোল হচ্ছে। গত কয়েক মাসে আড্ডাও উঠে গিয়েছে। ফল প্রকাশের পরে গন্ডগোল বাড়তে পারে।’’

আতঙ্ক বাড়িয়ে তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম বললেন, ‘‘ভোটের ফল বেরোবে আর ঝামেলা হবে না, তা হয়! আমি গণনা কেন্দ্রের ভিতরে থাকব। কেউ বাড়াবাড়ি করলে বাইরে সাধারণ মানুষই বুঝে নেবেন।’’ এ দিনও ফুরফুরা শরিফ থেকে ফোনে আইএসএফ প্রধান নওসাদ সিদ্দিকী বললেন, ‘‘ভাঙড়ের মানুষ শান্তির ভোট উপহার দিয়েছেন। ফল ঘোষণার পরেও সেই শান্তি বজায় রাখার অনুরোধ জানাব। তৃণমূলের নেতা-দাদারা আমার চেয়ে বয়স এবং অভিজ্ঞতায় বড়। দাদারা শান্তি বজায় রাখলে ভাইয়েরাও শান্তই থাকবে।’’ না হলে? গণনার সময়ে নওসাদ ভাঙড়ে থাকবেন কি না, তার উত্তরে রহস্য রেখে দেন। অবশ্য বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের যে মামলায় হাই কোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছিলেন নওসাদ, তার শুনানি হয়নি এদিন। অর্থাৎ, রক্ষাকবচ মিলল না তাঁর।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal Panchayat Election 2023 vote counting

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}