রূপকথা দত্ত।
এক্সপ্রেসওয়ের ধারেই স্কুল। ছুটির পরে সেই রাস্তা পেরোতে গিয়েই লরির ধাক্কায় ছিটকে পড়ল তিন পড়ুয়া। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হল এক ছাত্রীর। সঙ্কটজনক অবস্থায় আর এক ছাত্র ও ছাত্রী বাইপাসের ধারের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। লরিটিকে আটক করে চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে রহড়া থানার রুইয়া এলাকার কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েতে। পুলিশ সূত্রের খবর, মৃত ছাত্রী রূপকথা দত্তের (১৭) বাড়ি মধ্যমগ্রামে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ত্রিদীপ রায় ও অদ্রিকা পালিত পানিহাটির বাসিন্দা। তাদেরও বয়স ১৭। তিন জনেই সেন্ট জ়েভিয়ার্স স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া।
পুলিশ জানিয়েছে, মালবাহী লরিটিকে ওই এক্সপ্রেসওয়ের উপরেই ব্যারাকপুর ওয়্যারলেস মোড়ে ধরা হয়। চালক জয়ন্ত সাঁতরাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। খালি লরিটি মুড়াগাছার দিক থেকে ব্যারাকপুরের দিকে যাচ্ছিল।
সূত্রের খবর, গরমের ছুটির আগে এ দিন ছিল শেষ স্কুল। ছুটির পরে রূপকথা, ত্রিদীপ, অদ্রিকা ও তাদের আর এক সঙ্গী স্কুল থেকে বেরিয়ে কয়েকশো মিটার দূরের এক্সপ্রেসওয়ে পার করে রুইয়া ভেপার মোড়ের দিকে যাচ্ছিল। যে জায়গায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে এসে মিশেছে উড়ালপুল। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, চার জন একসঙ্গে এক্সপ্রেসওয়ের নিমতামুখী লেন পার করে পথ-বিভাজিকা টপকে ব্যারাকপুরগামী লেনে চলে যায়। সেই সময়ে উড়ালপুল থেকে দ্রুত গতিতে নামছিল লরিটি। তা দেখে এক পড়ুয়া রাস্তায় দাঁড়িয়ে গেলেও রূপকথারা দৌড়ে পার হতে গেলেই ঘটে দুর্ঘটনা। লরির ধাক্কায় ওই ছাত্রী-সহ অদ্রিকা ও ত্রিদীপ ছিটকে পড়ে কিছুটা দূরে সার্ভিস রোডের ধারে।
খবর পেয়ে স্কুল থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অন্যেরা ছুটে যান। সেই সময়ে ওই স্কুলেরই একটি বাস সার্ভিস রোড ধরে যাচ্ছিল। তাতেই তিন জনকে তুলে স্কুল কর্তৃপক্ষ কাছের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যান। সেখানে রূপকথাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। জানা যাচ্ছে, মুখ ও মাথার একপাশ থেঁতলে গিয়েছিল রূপকথার। ত্রিদীপের মস্তিষ্ক, ফুসফুস মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙেছে হাত-পা। তাকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়েছে। অদ্রিকার পাঁজরের ছ’টি হাড় ভেঙেছে। তাকেও আইসিইউ-তে রাখা হয়। পরে পরিজনদের সম্মতি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ওই দু’জনকে পুলিশের সহযোগিতায় অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যান।
মধ্যমগ্রামের এলআইসি টাউনশিপের বাসিন্দা রূপকথার পরিজন-প্রতিবেশীরা বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে, মাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করা মেয়েটি আর নেই। রূপকথার কাকা জয় মুন্সী জানান, স্কুলের পরে বন্ধুদের সঙ্গে রাস্তা পার হয়ে অটোয় চেপে প্রথমে মুড়াগাছা ও সেখান থেকে মধ্যমগ্রামে ফিরত রূপকথা। জানা গিয়েছে, রূপকথার যমজ বোন আছে। তাদের বাবা আদিত্য দত্ত কাজের সূত্রে বিলাসপুরে থাকেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রওনা দিয়েছেন তিনি। তাঁর জন্যই দেহ মধ্যমগ্রাম পুর হাসপাতালের শব-সংরক্ষণ কেন্দ্রে রাখা হয়। স্কুল সূত্রে জানা যাচ্ছে, দ্বাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের ওই ছাত্রী স্কুলের ভাইস-ক্যাপ্টেন ছিল।
বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ত্রিদীপ। বছরকয়েক আগে মারা গিয়েছেন তার বাবা। রুইয়ার ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক দ্যুতিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ওদের উন্নত চিকিৎসার জন্য যা প্রয়োজন, সব ব্যবস্থা স্কুল করবে। সেই মতো আইসিইউ অ্যাম্বুল্যান্সে করে দু’জনকে অ্যাপোলোয় নিয়ে এসেছি।’’
এ দিন বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, এক্সপ্রেসওয়ের ব্যারাকপুরগামী রাস্তা ও সার্ভিস রোডের মাঝে ব্যারিকেড করেছে পুলিশ। রক্ত ধোয়া হলেও, তখনও দাগ স্পষ্ট। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, ওই সার্ভিস রোড থেকে ব্যারাকপুর ও মুড়াগাছা যাওয়ার অটো ধরতে অনেকেই এক্সপ্রেসওয়ে পার করেন। ব্যারাকপুরের উপ-নগরপাল (ট্র্যাফিক) সন্দীপ কাররা বলেন, ‘‘স্কুলের সামনে আন্ডারপাস থাকলেও পড়ুয়ারা সেটি ব্যবহার করেনি। যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে পার হওয়ার কথাই নয়। সার্ভিস রোডে রেলিং বসানো হচ্ছে। ওয়্যারলেস মোড় থেকে মুড়াগাছা পর্যন্ত কাজও শীঘ্রই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy