Advertisement
২১ নভেম্বর ২০২৪
Soil Mining

চাষের জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়, ক্ষতির আশঙ্কা

কুলতলির কুন্দখালি-গোদাবর পঞ্চায়েতের কীর্তনখোলা এলাকায় সম্প্রতি এ ভাবেই মাটি কাটার ছবি চোখে পড়েছে।

এ ভাবেই যন্ত্র বসিয়ে কাটা হচ্ছে মাটি।

এ ভাবেই যন্ত্র বসিয়ে কাটা হচ্ছে মাটি। নিজস্ব চিত্র।

সমীরণ দাস 
কুলতলি  শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২৪ ০৯:০৪
Share: Save:

চাষের জমির মাটি কেটে সেখানে তৈরি হচ্ছে আস্ত জলাশয়। আর সেই কাটা মাটি চলে যাচ্ছে ইটভাটায়। টাকার বিনিময়ে জমির মালিকের কাছ থেকে মাটি কিনে নিচ্ছেন ইটভাটা কর্তৃপক্ষ। এতে লাভবান হচ্ছে দু’পক্ষ। কিন্তু জমির চরিত্র বদল হয়ে যাচ্ছে বরাবরের মতো। চাষের জমি পরিণত হচ্ছে জলাশয়ে। তাতে মাছ চাষ হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ফসল চাষের আর উপায় থাকছে না। সুন্দরবন ঘেঁষা কুলতলি ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় এ ভাবেই অবাধে মাটি কাটা চলছে দিনের পর দিন। অভিযোগ, হেলদোল নেই প্রশাসনের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জমির চরিত্র বদলের বড় প্রভাব পড়তে পারে ভবিষ্যতে।

কুলতলির কুন্দখালি-গোদাবর পঞ্চায়েতের কীর্তনখোলা এলাকায় সম্প্রতি এ ভাবেই মাটি কাটার ছবি চোখে পড়েছে। এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে ধান জমির একটা অংশের মাটি কেটে ফেলা হচ্ছে। সেই মাটি মালবাহী গাড়িতে করে চলে যাচ্ছে অন্যত্র। জমির মালিক সলোমান মণ্ডল জানান, মাছ চাষ করবেন বলে চাষের জমির একটি অংশের মাটি কেটে পুকুর তৈরি করছেন। কিন্তু কার অনুমতি নিয়ে এ ভাবে চাষের জমির মাটি কেটে জলাশয় তৈরি হচ্ছে, সে ব্যাপারে সঠিক উত্তর দিতে পারেননি সলোমান। কাটা মাটি কোথায় যাচ্ছে, সে ব্যাপারেও কিছু বলতে চাননি তিনি। তবে স্থানীয় লোকজন জানান, এলাকারই এক ইটভাটায় যাচ্ছে ওই মাটি।

স্থানীয় সূত্রের খবর, কুলতলি জুড়ে চলছে মাটি কাটা। সেই মাটি যাচ্ছে ইটভাটাগুলিতে। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, “কারও হয়ত এক বিঘে (প্রায় কুড়ি কাটা) চাষের জমি রয়েছে। তার মধ্যে এক কাটা জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। ইটভাটা মালিক যন্ত্র বসিয়ে সেই জমির মাটি কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে। ফলে ওই এক কাটা নীচু জমি হয়ে থেকে যাচ্ছে। কেউ কেউ সেখানে জলাশয় বানিয়ে মাছ চাষ করছেন। কেউ ফেলে রাখছেন।”

মাটির দর ঠিক হচ্ছে ফুট হিসেবে। গাড়িতে মাটি ভরার সময় এক ফুট পুরু করে যতটা মাটি ধরছে, তাকেই বলা হচ্ছে এক ফুট। প্রতি ফুট মাটি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকায়। একেকটি জমি থেকে এরকম আট-দশ হাজার ফুট বা তারও বেশি মাটি মিলছে। ফলে এক ধাক্কায় মোটা টাকা ঢুকছে জমির মালিকের পকেটে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ইটভাটার মালিক একসঙ্গে আট-দশ বিঘা জমি কিনে নিয়ে, সেখান থেকে ইচ্ছে মত মাটি কাটছেন।

চাষের জমির মাটি কাটায় বিপদ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, এ ভাবে মাটি কাটার ফলে জমির চরিত্র বদলে যাচ্ছে। এতে সুদূরপ্রসারী ক্ষতি হতে পারে। আবার বড় জমির একাংশ হঠাৎ করে কেটে নিচু করা হলে বা জলাশয় তৈরি হলে, বৃষ্টির সময় অন্য অংশের মাটি ধুয়ে এসে সেখানে পড়বে। এর ফলে জমির ভারসাম্য নষ্ট হবে। বাকি জমির উপরের অংশের মাটি বা ‘টপ সয়েল’ ধুয়ে গেলে, সেই অংশের চাষও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

নিমপীঠ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের প্রধান তথা কৃষিবজ্ঞানী চন্দন মণ্ডল বলেন, “চাষের জমিতে জলাশয় তৈরি করে মাছ চাষ হলে, নতুন সম্ভবনা তৈরি হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু এতে চাষের জমির ক্ষতি হচ্ছে। তাছাড়া চাষের জমির মাটি কেটে ফেলা হলে, তা মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। বিশেষ করে জমির উপরের অংশের মাটি সবচেয়ে উর্বর। সেই মাটি নষ্ট হলে চাষে প্রভাব পড়তে বাধ্য।”

কুলতলি পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ সাহাদাত শেখ বলেন, “নিজস্ব জমি থেকে কেউ মাটি কাটলে প্রশাসনের সেই অর্থে কিছু করার থাকে না। তবে নিয়ম ভেঙে গভীর ভাবে মাটি কাটা হচ্ছে কিনা সে দিকে খেয়াল রাখা হয়। কোনওভাবে পরিবেশের ক্ষতি হলে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Kultoli
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy