দেড় থেকে ২ টাকা কিলো দরে পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে টোম্যাটো! এই পরিস্থিতিতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা। টোম্যাটো বিক্রি করে শ্রমিকের মজুরি দেওয়ার মতো অবস্থা নেই বলে জানাচ্ছেন অনেকে। গাছের পাকা টোম্যাটো গাছে থেকেই নষ্ট হচ্ছে মাঠের পর মাঠ জুড়ে।
ডায়মন্ড হারবার ১, ২, কুলপি, রায়দিঘি, মথুরাপুর ১, ২ মগরাহাট ১ ও ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে টোম্যাটো চাষ হয়। বর্ষার ধান কাটার শেষে নভেম্বর মাসের দিকে মাঠে টোম্যাটো চারা বসানো শুরু হয়। ওই চারা গাছ বড় হয়ে ফল পাকতে সময় লাগে প্রায় দেড় মাস। আড়াই থেকে তিন মাস ধরে টোম্যাটোর ফলন হয়। টোম্যাটো চাষের জন্য নানা রকম রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয়। গাছের পোকা মারার জন্য কীটনাশকের প্রয়োজন হয়। টোম্যাটো চাষ অনেক ব্যয়বহুল বলে জানাচ্ছেন কৃষকেরা। এ ছাড়াও আছে শ্রমিকের মজুরি। এক জন শ্রমিক ৪-৫ ঘণ্টা কাজ করলে তাঁকে ৩৫০-৪০০ টাকা দিতে হয়।
এই পরিস্থিতিতে টোম্যাটোর পাইকারি বাজারে কিলো প্রতি দেড়-দু’টাকা দাম পাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা। ডায়মন্ড হারবারে পারুলিয়া গ্রামের সুমিতাভ মণ্ডল এ বার সাড়ে তিন বিঘা জমিতে টোম্যাটোর বাগান করেছেন। কয়েক কুইন্টাল টোম্যাটো ফলেছে। বাজার দর তলানিতে নেমে যাওয়ায় ক্ষতি মুখে পড়েছেন বলে জানালেন। বাজারে চাহিদার থেকে জোগান বেড়ে যাওয়ার ফলেই এই পরিস্থিতি বলে তাঁর মত।
মথুরাপুর ২ ব্লকের বকুলতলা গ্রামের বাসিন্দা দিবাকর মণ্ডল চার বিঘা জমিতে টোম্যাটোর পাশাপাশি বাঁধাকপি, ফুলকপি চাষ করেছেন। তিনি জানাবেন, বর্তমানে টোম্যাটোর বাজার দর একশো থেকে দেড়শো টাকা কুইন্টাল। এই পরিস্থিতিতে খুবই ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। খেত থেকে টোম্যাটো তোলার মতো অবস্থা নেই।
কৃষি দফতরের অনুমান, বর্ষার শেষে চাষিরা অনেকে টোম্যাটো চাষ করেছেন। ‘উপযুক্ত আবহাওয়া’ থাকায় প্রচুর ফলন হয়েছে। ফলে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী জোগান বেড়ে যাওয়ায় টোম্যাটোর দাম নেমে গিয়েছে।
পাইকারি ব্যবসায়ী নিরঞ্জন হালদার জানালেন, এ বার হাইব্রিড উচ্চ ফলনশীল টোম্যাটো চাষে প্রচুর ফলন হয়েছে। প্রতিদিন সকালে কুলপির করঞ্জলি বাজারের কাছে পাইকারি দরে বিক্রি করার জন্য চাষিরা টোম্যাটো নিয়ে আসেন। দেড় থেকে দু’টাকা কিলো দরে কিনে কলকাতা সহ বিভিন্ন বাজারে পাঠানো হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘বেশি ফলন হওয়ায় আমরাও ভাল লাভ পাচ্ছি না। এই অবস্থায় খোলা বাজারে টোম্যাটো ৮-১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)