বনগাঁর নতুনগ্রামে জলের অভাবে জমিতেই পড়ে আছে পাট। জাঁক দেওয়া যাচ্ছে না। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
শ্রাবণ মাস শেষ হতে চলল। এখনও বৃষ্টির পরিমাণ পর্যাপ্ত নয়। বৃষ্টির ঘাটতির প্রভাব পড়ছে চাষে। বিশেষ করে ক্ষতির মুখে পড়েছে আমন চাষ। কম বৃষ্টি হওয়ায় চাষের খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে বলে জানান চাষিরা। ধান ছাড়াও বিপর্যস্ত পাট, আনাজ, ফুল চাষও।
বনগাঁর চাঁদা এলাকার বাসিন্দা রঞ্জিত দাস দীর্ঘদিন ধরে আমন ধান চাষ করেন। রঞ্জিত জানান, এ বার সাড়ে ছ’বিঘে জমিতে ধান চাষ করেছেন। দিন কয়েক আগে বীজতলা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে শ্যালোর জলে বীজতলা তৈরি করতে বাড়তি প্রায় ১৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। এখন জমিতে জল দিয়ে চারা রোপণের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। সেখানেও মোটর এবং শ্যালো ভাড়া করে জল দিতে হচ্ছে। সে জন্য বিঘা প্রতি প্রায় ১২০০ টাকা খরচ হচ্ছে বলে জানান তিনি। রঞ্জিতের কথায়, “অন্যান্য বছর বীজতলা তৈরি করতে এবং জমি কাদা করতে কোনও টাকাই খরচ হত না। বৃষ্টির জলে প্রয়োজন মিটে যেত। কিন্তু এ বার বৃষ্টি কম হওয়ায় অনেক টাকা বাড়তি খরচ হয়ে যাচ্ছে।”
রঞ্জিতের মতোই সমস্যায় পড়েছেন অনেক চাষি। তাঁরা জানালেন, বর্ষার আমন চাষে অন্যান্য বছর খরচ কম হয়। তাই লাভ বেশি থাকে। কিন্তু এ বার চাষের কাজে খরচ বেড়ে যাওয়ায় চাষিরা চিন্তায়। লাভ এ বার অনেকটাই কমে যাবে দাবি তাঁদের।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, এ বার জেলায় মোট ধান চাষের জমি ১ লক্ষ ৬১ হাজার হেক্টর। ধান চাষির সংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ। কৃষি আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে ধান চাষে জলের ঘাটতি দেখা গিয়েছে। বিশেষ করে যে সব চাষির জমি উঁচু এলাকায়, তাঁদের সমস্যা বেশি। যে সব চাষি রিভার পাম্প, গভীর নলকূপের সাহায্যে চাষ করেন বা নিজস্ব শ্যালো মেশিন আছে, তাঁদের খরচ কম হচ্ছে। তবে জেলার বড় অংশের চাষিরা বৃষ্টির জলের উপরেই নির্ভরশীল। তাঁদের চাষের খরচ বাড়ছে।
উত্তর ২৪ পরগনার উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) নারায়ণ শিকদার বলেন, “পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে জেলার ধান চাষিরা কমবেশি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। গত বছর জুলাই-অগস্টের তুলনায় এ বার প্রায় ৪০ শতাংশ বৃষ্টির ঘাটতি আছে। তবে এক-দু’দিন ঝেঁপে বৃষ্টি হলে জলের সমস্যা অনেকটাই মিটবে।”
পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে সমস্যায় পড়েছেন জেলার পাট চাষিরাও। জেলার অন্যতম অর্থকরী ফসল পাট। পাট কাটার সময় হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পাট পচাতে জলের অভাব তৈরি হয়েছে। সে কারণে অনেক পাট চাষিই পাট কাটতে পারছেন না। জমিতেই রেখে দিয়েছেন। পাট চাষিরা জানালেন, অন্যান্য বছরগুলিতে বৃষ্টির জলে খাল, বিল, নদী, বাঁওড় জলমগ্ন থাকে। ফলে পাট পচানোর জলের অভাব হয় না। অনেক সময়ে পাট খেতেই বৃষ্টির জল দাঁড়িয়ে যায়। চাষিরা খেতেই পাট পচানোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি আলাদা।
অশোকনগরের শ্রীকৃষ্ণপুর পঞ্চায়েতের পাট চাষি মিনাজুল হক বলেন, “বৃষ্টি নেই। পাট পটাতে তাই বাধ্য হয়ে আমরা ৬ জন চাষি মিলে একটি ডোবায় ৩৫ ঘণ্টা মোটর চালিয়ে জলের ব্যবস্থা করে পাট পচাচ্ছি। মোটর চালাতে ঘণ্টায় ১৫০ টাকা করে খরচ হয়েছে। লাভ আর কিছু থাকবে না।”
মোটরের জলের তুলনায় বৃষ্টির জলে পাট পচানো হলে গুণগত মান ভাল হয় বলে জানান চাষিরা। দাম ভাল মেলে। কাঁচা পাট তৈরির জন্য গাছ কেটে সেগুলিকে বৃষ্টির জলে পচাতে হয়। এর ফলে পাটের কাঠি থেকে শাঁস বা পাট আলাদা হয়। তার পরে তা রোদে শুকিয়ে গাঁটি বাঁধা হয়। পাটের মানও অনেকটা নির্ভর করে এই প্রক্রিয়ার উপরে। কিন্তু এ বার বৃষ্টি তেমন ভাল না হওয়ায় পাট পচাতে সমস্যায় পড়ছেন চাষিরা।
বৃষ্টির অভাবে আনাজ চাষেও খরচ বেড়েছে বলে জানালেন চাষিরা। জেলায় বনগাঁ ও বারাসত মহকুমার আনাজ চাষ বেশি হয়। বাগদার আনাজ চাষি সন্ন্যাসী মজুমদার বলেন, “৩ বিঘে জমিতে আনাজ চাষ করেছি। এখন সপ্তাহে দু’দিন ১২ ঘণ্টা করে শ্যালো মেশিনে জল দিতে হচ্ছে। ১ ঘণ্টা খেতে জল দিতে খরচ ১৫০ টাকা। বৃষ্টি ঠিক মতো হলে মাসে দু’দিন শ্যালো মেশিন লাগে।”
উপ কৃষি অধিকর্তার অবশ্য দাবি, “অল্প বৃষ্টি তুলনায় আনাজ চাষের পক্ষে ভাল। কারণ, বৃষ্টি বেশি হলে আনাজ চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।”
জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ফুল চাষ হয়। চাষিরা জানালেন, ফুল চাষে জলের প্রচুর চাহিদা না থাকায় সমস্যা তুলনায় কম। ফুল চাষি রাজ্জাক মণ্ডল বলেন, “৮ বিঘে জমিতে রজনীগন্ধ চাষ করেছি। এখনও জলের ঘাটতি হয়নি।” তবে চাষিরা জানালেন, আগামী দিনে বৃষ্টি কম হলে, ফুল চাষেও খরচ বাড়বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy