প্রতীকী ছবি।
পঞ্জাবের হরবিন্দর সিংহকে চেনার কথা নয় হিঙ্গলগঞ্জের বিশপুর গ্রামের মদন বরের। হরবিন্দর এখন প্রবল ঠান্ডায় দিল্লি সীমানায় বসে আন্দোলন করছেন। দাবি, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যকে নির্দিষ্ট করতে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হোক। তা না হলে ফড়ে এবং কর্পোরেট সংস্থার কবলে চাষিদের সর্বনাশ হবে।
মদনও চান ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ধান বেচতে। সে জন্য কিসান মান্ডিতে নাম লিখিয়ে এসেছেন। কিন্তু মাস ঘুরতে চলল, এখনও ডাক আসেনি সেখান থেকে। ফড়েরা কিন্তু আসছেন রোজই। পৌঁছে যাচ্ছে বাড়ি বাড়ি। মদনের থেকে সরাসরি ধান কিনতে চান তাঁরা। কুইন্টাল প্রতি দাম দিচ্ছে ১৩০০-১৩৩০ টাকা। অন্য দিকে, ধানের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ১৮৬৮ টাকা। মান্ডিতে নিয়ে গিয়ে ধান বিক্রি করলে কুইন্টাল প্রতি ২০ টাকা করে পরিবহণ খরচও দেওয়া হয়। মদন চান সরকারি দরেই ধান বেচতে। কিন্তু সুযোগ পাচ্ছেন কোথায়!
ঋণ নিয়ে চাষ করা অনেকেই বাধ্য হয়ে ধান ফড়েদের বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে লোকসান হচ্ছে। হিঙ্গলগঞ্জ এবং হাসনাবাদের বেশ কিছু জায়গায় এমনই চলছে বলে অভিযোগ। তবে জেলা খাদ্য নিয়ামক জামিন ইজাজ বলছেন, “এমনটা হওয়ার কথা নয়। জেলার মধ্যে একমাত্র হিঙ্গলগঞ্জে দু’টি জায়গায় ধান কেনা হচ্ছে। তারপরেও কেউ যদি ধান বিক্রি করতে না পারেন, তা হলে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বিশপুরের মদন বর নিজের দু’বিঘা এবং আরও তিন বিঘা জমি ভাগে নিয়ে ধান চাষ করেছিলেন। ৪০ বস্তা ধান হয়েছে। যাঁর জমি ভাগে নিয়েছিলেন, ধান বেচে তাঁকে ১২ হাজার টাকা দিতে হবে। আরও কিছু খুচরো ঋণ শোধ করতে হবে। এক মাস আগে হিঙ্গলগঞ্জ কিসান মান্ডিতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বলা হয়েছিল, ফোন করে ডেকে নেওয়া হবে। মদন বলেন, “বেশ কয়েকবার খোঁজ নিয়েছি। শুধু বলছে ফোন করে ডেকে নেবে।’’ মদনের অভিজ্ঞতা বলে, ২০১৮ সালেও এমন কথা শুনতে হয়েছিল। কিন্তু ফোন আর আসেনি। মদনের কথায়, ‘‘সে বার খোঁজ নিয়েছি অনেকবার। শেষে এক দিন বলে দিল, আর ধান নেওয়া হচ্ছে না। বাইরে বিক্রি করে দাও। কম দামে বাইরে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলাম। এ বারও সেই ভয় হচ্ছে।” মদন জানান, আর কিছু দিন দেখে বাইরেই বিক্রি করতে হবে। বাড়িতে ধান রাখলে ইঁদুরে খেয়ে ফেলছে।
রূপমারি পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা বিভূতি মণ্ডলের চাষই একমাত্র রোজগার। সেই টাকাতেই দুই ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। তাঁর ৬ বিঘা জমিতে ৫০ বস্তা ধান হয়েছে। ৩৫ বস্তা ধান বিক্রি করবেন বলে নভেম্বর মাসের ১২ তারিখে নাম লিখিয়ে এসেছেন হিঙ্গলগঞ্জ কিসান মান্ডিতে। বিভূতি বলেন, “উঠোনে বস্তায় রাখা ধান ইঁদুরে সাবাড় করছে। বার বার খোঁজ নিচ্ছি। মান্ডি থেকে বলছে ডাকা হবে। এ দিকে দুই ছেলেমেয়ের বিএড কলেজের টাকা বাকি। সরকারি দামে ধান বেচতে না পারলে কম দামে ফড়েদেরই দিয়ে দিতে হবে।”
বিশপুর পঞ্চায়েতের বাসিন্দা শ্যামলী পণ্ডা বলেন, “কিসান মান্ডিতে ধানের দাম বেশি। তবে দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করতে হবে। এ দিকে, ঋণ শোধ করতে হবে। পাওনাদারেরা তাগাদা দিচ্ছে। বাধ্য হয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে আমার ২২ বস্তা ধান ১৩০০ টাকা কুইন্টাল দরে বিক্রি করেছি।” দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা সুরজিৎ দাস, রূপমারির বাসিন্দা বিষ্ণুপদ মণ্ডল, বিশপুরের নির্মলেন্দু বর-সহ আরও অনেকেই মান্ডিতে নাম লিখিয়ে অপেক্ষা করছেন ডাক পাওয়ার। এমন দেরির কারণ কী?
হিঙ্গলগঞ্জ ব্লক খাদ্য ও সরবরাহ বিভাগের আধিকারিক রজত মজুমদার জানান, সব চাষি এক সঙ্গে ধান বিক্রি করতে চাইছেন। তাই নিতে একটু দেরি হচ্ছে। তবে আগে ধান নিতে তিনটে গাড়ি ঢুকত। এ বার ৪টে গাড়ি ঢুকছে। তাঁর কথায়, ‘‘আশা করছি আগামী সপ্তাহ থেকে আরও দ্রুত কৃষকদের থেকে ধান নেওয়া যাবে।” তা যদি না হয়, চাষিদের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে মুনাফা লুটবে সেই ফড়েরাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy