Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Ashok Ruidas

ছেলেটাকে মেরেই ফেলল, বলছে অশোকের পরিবার

শুধু অশোকের একতলা বাড়ির ভিতর থেকে ভেসে আসছে কান্নার রোল।

সন্তানহারা: জগদীশ রুইদাস। মঙ্গলবার ছবি তুলেছেন সুমন সাহা

সন্তানহারা: জগদীশ রুইদাস। মঙ্গলবার ছবি তুলেছেন সুমন সাহা

সমীরণ দাস
জয়নগর শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২০ ০৪:০৯
Share: Save:

চোখের জল বাধ মানছে না সদ্য সন্তানহারা বাবা-মায়ের। বলছেন, “ছেলেটাকে মেরেই ফেলল ওরা। ওদের শাস্তি চাই। আর কোনও বাবা-মায়ের কোল যেন এ ভাবে ফাঁকা না হয়ে যায়।” সোমবারই কলকাতার একাধিক হাসপাতাল ঘুরে কার্যত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে জগদীশ ও মালতি রুইদাসের বছর ছাব্বিশের ছেলে অশোকের। তরতাজা যুবকের এ ভাবে মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না পরিবার-সহ গোটা এলাকা। জয়নগরের চণ্ডীপুর বাজার এলাকায় অশোকের বাড়ি। বাড়ির সামনেই একটা জুতো সারাইয়ের দোকান ছিল তাঁর। মঙ্গলবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল, গোটা এলাকা জুড়েই শ্মশানের স্তব্ধতা। পাড়ার ছেলের মৃত্যুতে বন্ধ দোকানপাট। শুধু অশোকের একতলা বাড়ির ভিতর থেকে ভেসে আসছে কান্নার রোল। বছর কয়েক আগে বিয়ে করেন অশোক। বছর দেড়েকের ছেলে রয়েছে। দাদু-ঠাকুমা-মাকে ক্রমাগত কাঁদতে দেখে কিছু না বুঝেই কেঁদে চলেছে সেই ছেলেও। ছেলেকে কোলে নিয়ে চিকিৎসকদের শাস্তির দাবি তোলেন অশোকের স্ত্রী অসীমা। বলেন, “এই শিশুটাকে নিয়ে কোথায় যাব এ বার! পরিবারটাই তো ভেসে যাবে। যাদের জন্য এই অবস্থা, তাদের শাস্তি না হলে শান্তি পাব না।” বেশ কিছু দিন ধরেই জ্বরে ভুগছিলেন অশোক। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা যায়, টাইফয়েড হয়েছে। দক্ষিণ বারাসতের এক নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয় তাঁকে। দিন দু’য়েক সেখানে থাকার পরে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় অশোকের। বেসরকারি নার্সিংহোমের চিকিৎসকের দাবি, তারপরই পরিবারের সদস্যদের বলা হয়, রোগীকে অন্যত্র নিয়ে যেতে। আরও দু’দিন পরে সোমবার সকালে অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে কলকাতা রওনা দেন জগদীশরা। অশোকের শ্বাসকষ্টের কথা ভেবেই ওই নার্সিংহোম থেকে দু’টি অক্সিজেন সিলিন্ডার-সহ পাঠানো হয়। প্রথমে তাঁরা যান এসএসকেএম হাসপাতালে। জ্বরের উপসর্গ দেখে তাঁদের শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে যেতে বলা হয়। পরিবারের দাবি, শম্ভুনাথে গেলে সেখান থেকে তাঁদের চিত্তরঞ্জন মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়। শম্ভুনাথ থেকেই তাঁদের নতুন অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে কোনও অক্সিজেনের ব্যবস্থা ছিল না বলে অভিযোগ। জগদীশের কথায়, “হাসপাতাল থেকে একটা বড় অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়া হয়। ভাবতেই পারিনি ওতে অক্সিজেনের ব্যবস্থা নেই। অ্যাম্বুল্যান্সে উঠেই ছেলেটার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। চোখের সামনে ছটফট করতে থাকে।” এই অবস্থায় প্রথমে চিত্তরঞ্জনে যান তাঁরা। সেখান থেকে তাঁদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় মেডিক্যাল কলেজে। মেডিক্যাল কলেজে আসার পরেও প্রায় ঘণ্টাখানেক বাইরে স্ট্রেচারে শুয়ে অপেক্ষা করতে হয় বলে অভিযোগ। এরপরেই মৃত্যু হয় অশোকের। জগদীশ বলেন, “আমার ছেলের টাইফয়েড হয়েছিল। করোনা হয়নি। সব কাগজপত্র রয়েছে। কিন্তু জ্বর-শ্বাসকষ্ট দেখেই করোনা হাসপাতালে পাঠানো হয়। বলা হয়, করোনা রোগীর সঙ্গেই চিকিৎসা হবে। ছেলেটা চিকিৎসা পাবে ভেবে আমরা তাতেও রাজি হই। কিন্তু কোনও ডাক্তার তো গায়ে হাত পর্যন্ত দিল না। বিনা চিকিৎসায় আমার ছেলেটা মরে গেল।” পরিবারের দাবি, নিমপীঠ গ্রামীণ হাসপাতালে অশোকের করোনা টেস্টও হয় সপ্তাহ দেড়েক আগে। কিন্তু সেই রিপোর্ট তাঁরা হাতে পাননি। বেসরকারি নার্সিংহোম থেকে আগেই কলকাতায় নিয়ে গেলে কি বেঁচে যেতেন অশোক? ওই নার্সিংহোমের চিকিৎসকের দাবি, আগেই কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলাও হয়েছিল। জগদীশ বলেন, “খুব ভয়ে ছিলাম। টিভিতে দেখলাম সেদিন একটা বাচ্চা ছেলে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে বিনা চিকিৎসায় মারা গেল। ভেবেছিলাম, কলকাতায় নিয়ে গেলে আমাদের সঙ্গেও এটাই হবে। শেষ পর্যন্ত সেটাই হল।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy