দুর্গাপুজোর আগের দু’দফায় নিম্নচাপের বৃষ্টিতে ডুবে গিয়েছিল গাইঘাটার সুটিয়া পঞ্চায়েতের মাঠপাড়া এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়ি। ওই এলাকার বাসিন্দা উত্তম রায় তাঁর পরিবার নিয়ে আশ্রয় নেন স্থানীয় একটি স্কুলের ত্রাণ শিবিরে। উত্তমের পরিবারের ছ’জন সদস্য। বাবা বাসুদেব অসুস্থ। কাজকর্ম করতে পারেন না। পরিবারে আয়ের লোক বলতে উত্তম ও তাঁর দাদা। দু’জনেই খেতমজুরি, দিনমজুরি করেন। বৃষ্টিতে খেত জলমগ্ন হওয়ায় ফলে কাজকর্ম নেই তাঁদের। পুলিশের তরফে দেওয়া রান্না করা খাবারই ভরসা তাঁদের।
দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো কেটেছে ত্রাণ শিবিরে। সামনে কালীপুজো। অথচ, জমা জল সরার কোনও লক্ষ্মণ নেই। উল্টে, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে উত্তমদের বাড়ি ফেরা আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে। উত্তমের কথায়, ‘‘ঘরের মধ্যে হাঁটুজল। উঠোনে বুকসমান জল। জল বের হচ্ছে না। রোদে কমে আসছিল। ফের বৃষ্টি শুরু হওয়ায় জল আবার বাড়ছে। জানি না, কবে বাড়ি ফিরতে পারব।’’
ওই ত্রাণ শিবিরে আশ্রম নিয়েছে ৪৪টি পরিবার। সকলেই অনিশ্চিয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। পুজোর আগের বৃষ্টিতে গাইঘাটা ব্লকের সুটিয়া, রামনগর, শিমুলপুর, ঝাউডাঙা পঞ্চায়েত সহ বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে যায়। হাজার হাজার মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েন। অনেকেই ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেন। অনেকেরই কাজ নেই। বন্ধ হয়েছে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা।
এখনও অনেকেরই ঘর জলমগ্ন। কারও উঠোনে জল। শুরু হয়েছে সাপ ও মশার উপদ্রব। রাস্তা জলমগ্ন। চলছে নৌকো বা কলাগাছের ভেলায় যাতায়াত। কেউ আবার বাড়ির উঠোনে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছেন। ইতিমধ্যে জমা জল পচতে শুরু করেছে। সেই জলে যাতায়াত করে ত্বকের সমস্যা দেখা দিয়েছে অনেকের।
জলবন্দি দশা থেকে মুক্তি পেতে দিন কয়েক আগে গ্রামের মানুষ দলবদ্ধ ভাবে কোদাল, মাটি কাটা যন্ত্র দিয়ে স্বরূপনগরের টিপি এলাকায় মাটির বাঁধ কেটে দেন। এতে ধীর গতিতে হলেও জমা জল যমুনা হয়ে ইছামতীতে পড়তে শুরু করেছিল। কিন্তু নতুন করে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় ফের প্রমাদ গুনছেন জলবন্দি মানুষেরা।
সুটিয়া রামনগর, শিমুলপুর পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের জল-যন্ত্রণার অন্যতম কারণ বলদেঘাটা খাল। সংস্কারের অভাবে পলি জমে খালটি কার্যত মৃতপ্রায়। অভিযোগ, খালে অবৈধ ভাবে ভেড়ি করা হয়েছে। খালের জমি বেদখল হওয়ায় জল ধারণের ক্ষমতা চলে গিয়েছে।
এলাকার প্রবীণেরা জানান, অতীতে বৃষ্টির জমা জল খাল হয়ে বেরিয়ে যেত। খালে স্রোত ছিল। নৌকো চলত। এখন প্রতি বর্ষায় ভারী বৃষ্টি হলেই খালের জল লোকালয়ে ঢুকছে। গ্রামবাসীরা জানান, বলদেঘাটা খাল চারঘাট এলাকায় যমুনার সঙ্গে মিশেছে। সেখান থেকে যমুনা টিপি এলাকায় ইছামতী নদীতে মিশেছে। সে কারণে অনেকেই মনে করেন, ইছামতীর সংস্কার ছাড়া সমস্যা পুরোপুরি মিটবে না।
এ বার বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পর এলাকায় এসেছিলেন জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী সহ জেলা প্রশাসনের কর্তারা। সেচ দফতরের বিদ্যাধরী ড্রেনেজ ডিভিশনের পক্ষ থেকে জল জমার কারণ খুঁজে সরেজমিনে সমীক্ষা করা হয়েছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী এলাকা ঘুরে গিয়েছেন। সকলের কাছেই জলবন্দি মানুষেরা দাবি করেছেন, ইছামতী যমুনা ও বলদেঘাটা খাল সংস্কার করার।
নারায়ণ বলেন, ‘‘জল জমার সমস্যা দূর করতে তেঁতুলিয়া সেতু থেকে কাবিলপুর পর্যন্ত ইছামতী নদী থেকে পলি তুলে সংস্কারের পরিকল্পনা করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy