অন্ধ্রপ্রদেশে শ্রমিকের কাজ করতেন এক ব্যক্তি। অভিযোগ, সেখানে ঠিকাদারের লোকজন তাঁকে মারধর করে। জখম অবস্থায় তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। দিন কয়েক আগে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসক তাঁকে সিটি স্ক্যান-সহ আরও কিছু পরীক্ষা করাতে বলেছেন। ওই ব্যক্তির বোন বলেন, ‘‘আমাদের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড আছে। তা সত্বেও দাদার পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসার পিছনে কয়েক হাজার টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। আমাদের আর্থিক অবস্থা ভাল না। লোকজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে খরচ চালাচ্ছি। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসার সুবিধা পাওয়া গেলে অনেকটাই স্বস্তি মিলত।’’
গাইঘাটার চাঁদপাড়ার বাসিন্দা এক মহিলার স্বামী বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মহিলা বলেন, ‘‘বাইরে থেকে স্বামীর কিছু পরীক্ষা করাতে হয়েছে। সে জন্য ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড আছে।’’
অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীরা চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সুবিধা পাচ্ছেন না। ফলে গরিব মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়ছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বেসরকারি নার্সিংহোমগুলিকে বার বার হুঁশিয়ার করছেন, কোনও ভাবেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের রোগীকে ফেরানো যাবে না। প্রয়োজনে এফআইআর করার কথাও জানিয়েছেন তিনি। সেখানে সরকারি হাসপাতালে এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে।
বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়া বলেন, ‘‘বনগাঁয় বড় নীল-সাদা বিল্ডিং আছে। সেটাকে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল বলে চালানো হচ্ছে। অথচ বনগাঁ হাসপাতাল থেকে মানুষ স্বাস্থ্য সাথীকার্ডের সুবিধা পাচ্ছেন না। কারণ, রাজ্য সরকারের দেউলিয়া অবস্থা। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের চিকিৎসা বাবদ বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে প্রায় ১ কোটি টাকা পায়। রাজ্য সরকার টাকা দিচ্ছে না। ফলে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে এখানে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, চিকিৎসাধীন কোনও রোগীর যদি বাইরে থেকে সিটি স্ক্যান, এমআইআর বা অন্য কোনও পরীক্ষা করাতে হয়, রোগীর যদি স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকে, তা হলে কোনও খরচ দিতে হয় না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেই খরচ বহন করেন। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা রোগী যদি বাইরে থেকে পরীক্ষা করিয়ে এনে হাসপাতালে বিল জমা দিলে সেই টাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিয়ে দেন। আবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও সরাসরি পরীক্ষার টাকা দিয়ে পরীক্ষাগুলি করিয়ে আনেন। এ ছাড়া, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া বাবদও কিছু টাকা দেওয়া হয়। তবে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে সিটি স্ক্যান বা এমআইআর পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই।
কেন স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা?
হাসপাতাল সুপার কৌশিক ঢল বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে রোগীকে পরিষেবা দেওয়ার মতো অর্থ এখনই হাসপাতালের তহবিলে নেই। তা ছাড়া, রাজ্য সরকারের কাছে প্রচুর টাকা পাওনা আছে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা রোগীদের হাসপাতালের তহবিলের টাকা থেকে পরিষেবা দেওয়া হয়। পরে আমরা বিল পাঠালে সেই টাকা রাজ্য সরকার বা স্বাস্থ্য দফতর থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’’
সমস্যার কথা শুনেছেন বনগাঁর পুরপ্রধান গোপাল শেঠ। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতাল সুপারকে বলেছি, পুরসভার সঙ্গে টাই আপ করতে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা রোগীদের হাসপাতাল থেকে আমাদের কাছে পাঠালে পুরসভার স্বাস্থ্যদীপ থেকে সিটি স্ক্যান এবং প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা বিনা পয়সায় করিয়ে দেওয়া হবে। পরে হাসপাতালের তহবিলে টাকা এলে আমাদের মিটিয়ে দিলেই হবে।’’
তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘হাসপাতালের তহবিলে যদি টাকা না থাকে, জেলাশাসক স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা দ্রুত মেটাতে পদক্ষেপ করবেন। পরিষেবা বন্ধ রাখা যাবে না।’’
সুপারের কথায়, ‘‘পুরনো যাদের সঙ্গে আমাদের টাই আপ ছিল, তার মেয়াদ পেরিয়ে গিয়েছে। আমরা পুরসভার স্বাস্থ্যদীপের সঙ্গে টাইআপ করছি। কিছু টাকার ব্যবস্থা করা গিয়েছে। শীঘ্রই স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের পরিষেবা চালু করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy