Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Exams

বিড়ম্বনায় ফেলল সেই ইন্টারনেট-সংযোগই

কেউ বাড়ির বাইরে ফোন নিয়ে ছোটাছুটি করছেন ইন্টারনেটের খোঁজে। কেউ বাড়ি ভাড়া নিলেন কলেজের পাশে। আত্মীয়ের বাড়িতে দিন কয়েকের জন্য থাকছেন কেউ কেউ। কোথাও আবার উত্তরপত্র নিতে নৌকো ভিড়ল গাঁয়ের নদী-ঘাটে।

সতর্কতা: ভোগাতে পারে নেট, এই চিন্তায় বেগম রোকেয়া কলেজে বসেই পরীক্ষা দিলেন এঁরা। ছবি: সামসুল হুদা

সতর্কতা: ভোগাতে পারে নেট, এই চিন্তায় বেগম রোকেয়া কলেজে বসেই পরীক্ষা দিলেন এঁরা। ছবি: সামসুল হুদা

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২০ ০৩:১৪
Share: Save:

ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছনে তাকানো, বন্ধুর উত্তরপত্র নিয়ে নকল করা, শৌচাগারে বই রেখে দেখে আসা— পরীক্ষা কেন্দ্রের সেই সব টুকরো ছবি উধাও। করোনা আবহে কলেজের পরীক্ষা ঘিরে তৈরি হল অন্য চিত্রকল্প।

কেউ বাড়ির বাইরে ফোন নিয়ে ছোটাছুটি করছেন ইন্টারনেটের খোঁজে। কেউ বাড়ি ভাড়া নিলেন কলেজের পাশে। আত্মীয়ের বাড়িতে দিন কয়েকের জন্য থাকছেন কেউ কেউ। কোথাও আবার উত্তরপত্র নিতে নৌকো ভিড়ল গাঁয়ের নদী-ঘাটে।

‘নিউ নর্ম্যাল’ সময়ে নতুন ব্যবস্থায় থই পেলেন না দুই ২৪ পরগনার অনেক পরীক্ষার্থীই। ইন্টারনেট ভোগাতে পারে ধরে নিয়ে অনেকে কলেজে গিয়েই পরীক্ষা দিলেন। উত্তরপত্র ই-মেল করতে ফের একপ্রস্থ ভোগান্তি হল অনেকেরই। বিশেষত, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের তরুণ-তরুণীরাই ভুগলেন বেশি।

সমস্যা হতে পারে বুঝতে পেরে জীবনতলার বেগম রোকেয়া কলেজে দু’টি ক্লাসরুম পরীক্ষার জন্য তৈরি রাখা হয়েছিল। ইন্টারনেট না পেরে ১১ জন পরীক্ষার্থী কলেজে এসে পরীক্ষা দেন। সমস্যা হয়েছিল গোসাবার পাঠানখালি হাজি দেশারথ কলেজের বেশ কিছু পরীক্ষার্থীর। বিভিন্ন দ্বীপ এলাকার প্রায় ১০০ পরীক্ষার্থী আগেই সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষকে। দ্বীপের বিভিন্ন ঘাটে নৌকো প্রস্তুত রেখেছিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষা শেষে ঘাটে গিয়ে নৌকোয় কলেজ কর্মীদের হাতে উত্তরপত্র তুলে দেন পরীক্ষার্থীরা।

পাথরপ্রতিমা কলেজের ১৭৪ পরীক্ষার্থীদের এলাকায় ইন্টারনেট মেলে না। সে জন্য আগে থেকেই কলেজের আশপাশে মেসে বা আত্মীয়দের বাড়িতে থেকে পরীক্ষা দেন। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা বাক্স বসানো ছিল। পরীক্ষার্থীরা সেখানেই উত্তরপত্র জমা দেন। কিছু পরীক্ষার্থী অবশ্য উত্তরপত্র মেল করতে পেরেছেন।

সন্দেশখালি থানার আতাপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণেন্দু মাহাতো বেলা দু’টোয় পরীক্ষা শেষ করে কলেজের মেল আইডি-তে উত্তরপত্র মেল করতে সমস্যায় পড়েন। শেষ পর্যন্ত এক বন্ধুকে তা মেল করেন। তিনি শেষ কলেজের আইডিতে মেল করেন বন্ধুর উত্তরপত্র। সন্দেশখালি থানার আতাপুরের ধৃতিশ মণ্ডল নেটের সমস্যার জন্য প্রশ্নপত্র ডাউনলোড করতে না পেরে, রাস্তা এসে ছোটাছুটি শুরু করেন।

কোনও রকমে প্রশ্নপত্র ডাউনলোড করে ফের বাড়িতে ছোটেন। পরীক্ষা শেষে ফের ফাঁকা রাস্তায় নেট খুঁজে উত্তরপত্র পাঠান।

সন্দেশখালি কালীনগর কলেজের ছাত্রী রিম্পা মাহাতো ঝুঁকি না নিয়ে কলেজের পাশে বাড়ি ভাড়া নিয়ে পরীক্ষা দেন। কলেজে গিয়েই উত্তরপত্র জমা দেন তিনি। শুধু রিম্পা নন, কলেজের কাছে বাড়ি ভাড়া নিয়ে পরীক্ষা দিতে হল অনেককেই।

হিঙ্গলগঞ্জের সাহেবখালি পঞ্চায়েতের রমাপুরের বাসিন্দা অয়ন কামিল্যার বাড়িতে ইন্টারনেটের গতি টু-জি। ফলে গতির খোঁজে নাস্তানাবুদ হতে হল তাঁকে। একই সমস্যায় পড়তে হল হেমনগরের সুব্রত মিস্ত্রিকেও।

টাকি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে পরীক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত বিষয়গুলি বোঝানো হয়েছে। আজ ঠিকমতোই পরীক্ষা দিয়েছে অধিকাংশ পরীক্ষার্থী। তবে যাদের সমস্যা হয়েছে, তারা যাতে সমস্যায় না পড়ে, তা দেখা হবে।”

কালীনগর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক ঈশানী ঘোষ জানান, দূরের অনেক পড়ুয়া লোক পাঠিয়ে কলেজের গেট থেকে প্রশ্ন নিয়ে গিয়েছে। সে ভাবেই উত্তরপত্র দিয়ে গিয়েছে।

বনগাঁর পায়েল সরকার, রক্তিমা সরকার আবার পরীক্ষা হলের পরিবেশ না পেয়ে অখুশি।

হাবড়ার গুমা বালুইগাছি পালপড়ার কৃষ্ণার পালের মোবাইল চুরি গিয়েছে। অটোতে করে হাবড়া শ্রীচৈতন্য কলেজে গিয়ে পরীক্ষা দেন তিনি। পৃথিবা মালিগ্রামের কলেজ ছাত্র শাহরুখ আলমও জানান, ইন্টারনেট তেমন চাঙ্গা নয় বলে কলেজে গিয়েই পরীক্ষা দেন তিনি। বনগাঁ শিমুলতলার শ্রেয়সী পাল নিশ্চিত হওয়ার জন্য উত্তরপত্র বার কয়েক মেল করেছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Examinees Internet connnection
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy