গাইন গার্ডেনের প্রবেশপথ। নিজস্ব চিত্র।
এক বছর আগে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা হয়েছিল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বর্তমানে ভগ্নদশায় পড়ে রয়েছে ধান্যকুড়িয়া গাইন গার্ডেন। ঘাস ও আগাছায় ভরেছে চত্বর। সীমানা পাঁচিল ভেঙে দুষ্কৃতীদের অবাধ অনুপ্রবেশ ঘটছে বলেছে অভিযোগ। যত্নের অভাবে বিশাল এই স্থাপত্য বর্তমানে নষ্ট হওয়ার মুখে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, দ্রুত ঐতিহাসিক ভবন সংস্কার করা হোক।
বসিরহাট-বেড়াচাঁপার টাকি রাস্তার ধারে গড়ে উঠেছে ধান্যকুড়িয়ার গাইন গার্ডেন। প্রায় দেড়শো বছর আগে ধান্যকুড়িয়ার পাট ব্যবসায়ী মহেন্দ্রনাথ গাইন দুর্গের আদলে ৩৩ বিঘা জমি জুড়ে ভবনটি নির্মাণ করেন। ইন্দো-ইউরোপীয় মিশ্র আঙ্গিকের সুদৃশ্য অট্টালিকাটি এখনও মানুষকে অবাক করে। ওই বাগান বাড়িতে জমিদার ও তাঁদের ব্যবসায়িক সহযোগী ইংরেজদের বিনোদনের ব্যবস্থা ছিল। সে সময়ে টাকি রোড বরাবর মার্টিন রেল চলত। ধান্যকুড়িয়ায় তার স্টেশন ছিল। ওই রেলে করে ইংরেজরা আসতেন গাইন গার্ডেনে।
ইতিহাসের পালা বদলের সঙ্গে সঙ্গে এর জৌলুস কমতে শুরু করে। আগে অট্টালিকার পুকুর ঘাটে দু’টি বড় মার্বেলের সিংহ ছিল। নব্বইয়ের দশকে গাইন পরিবারের কয়েক জন সেই সিংহ দু’টি বিক্রি করে দেন। তবে বাগান বাড়ির গেটে দু’জন ইংরেজ একটি সিংহকে বধ করছে— এ রকম একটি ভাস্কর্য এখনও রয়েছে। তিরিশের দশকে এখানে ‘কপালকুণ্ডলা’ সিনেমার শুটিং হয়েছিল।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সমাজকল্যাণ দফতরের পরিচালনায় এখানে দীর্ঘ দিন পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত একটি সরকারি বালিকা হোম-সহ মেয়েদের স্কুল চলত। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পরে ২০০৮ সালে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ গাইন পরিবারের কাছ থেকে এই সম্পত্তিটি কিনে নেয়। ২০১৯ সালে সংস্কারের কথা বলে মেয়েদের হোম ও স্কুল তুলে দেওয়া হয়। সেই থেকে এই ভবনটি অনাদরেই পড়ে রয়েছে। ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হেরিটেজ কমিশনের সদস্যেরা গাইন গার্ডেন পরিদর্শন করেন। ২০২২ সালে হেরিটেজ হিসাবে স্বীকৃতিও মেলে। চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল বিশ্ব ঐতিহ্য দিবসে পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশনের ব্রশিওরে ধান্যকুড়িয়া গাইন গার্ডেনের ছবি দিয়ে এই স্থাপত্যকে সম্মান জানানো হয়।
যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, খাতায়-কলমে শুধু ‘হেরিটেজ’ তকমাটুকুই মিলেছে। বাস্তবে ভবনের চিত্র বদলায়নি। বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরেছে। বাড়ছে বিপদের আশঙ্কা। সীমানা প্রাচীর ভেঙে বর্তমানে ভবনটি দুষ্কৃতীদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। বাগান চত্বরে বেড়েছে সাপের উপদ্রব। হেরিটেজ ভবনকে ঘিরে পর্যটনের কথা ভাবা হয়েছিল। কেমন কিছুও হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সম্প্রতি গাইন গার্ডেন একদিকে একটি কর্মতীর্থ ভবন তৈরি করা হয়েছে। হেরিটেজ চত্বরে কর্মতীর্থ গড়া নিয়ে প্রশ্নও উঠছে।
গোটা বিষয় নিয়ে বসিরহট মহকুমাশাসক মৌসম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সম্প্রতি জেলাশাসক শরৎকুমার দ্বিবেদী সংশ্লিষ্ট সকল দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে গাইন গার্ডেন পরিদর্শন করেছেন। আশা করা যায়, সংস্কারের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।’’ জেলা পরিষদের পূর্ত ও সড়ক কর্মাধ্যক্ষ নারায়ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘ওই স্থাপত্যের দায়িত্ব নিয়েছে জেলা পরিষদ। তারপরেই গাইন গার্ডেনকে হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে। দ্রুত ভবনটি সংস্কার করে চত্বর পরিষ্কার করার কাজ শুরু হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy