সুনসান: স্কুলের পিছনের রাস্তা। নিজস্ব চিত্র
রোমিয়োদের হাত থেকে ছাত্রীদের রক্ষা করতে মাঝে মধ্যেই স্কুল গেটে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় প্রধান শিক্ষিকাকে। এমনই অবস্থা টাকি ষষ্ঠীবর লালমাধব উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ে।
ছাত্রীদের প্রায়ই বহিরাগতরা উত্যক্ত করছে বলে অভিযোগ। তাদের হাত থেকে রক্ষা করতে ছাত্রীদের স্কুলে পৌঁছে দেন অনেক বাবা-মা। অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, সমস্ত কাজ ফেলে মেয়েদের স্কুলে নিয়ে আসতে হয়। মেয়েরাও একা আসতে ভয় পায় অনেকেই।
স্কুলে ঢুকে নিস্তার নেই। ছুটির পরে বা টিফিনের সময়ে রোমিয়োদের দৌরাত্ম্য বাড়ে স্কুলের সামনে। প্রধান শিক্ষিকা মনীষা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ইভটিজিং ভয়ানক ভোগাচ্ছে। স্কুল ছুটি এবং টিফিনের সময়ে স্কুলের পিছনের রাস্তায় বাইক, সাইকেল নিয়ে উঠতি বয়সের ছেলেরা দাঁড়িয়ে থাকে। থানাকে জানালে পুলিশ আসে। দু’একজনকে ধরে। কয়েক দিন দৌরাত্ম্য বন্ধ থাকে। কিন্তু কয়েক দিন পর ফের শুরু হয়।’’ প্রধান শিক্ষিকা জানালেন, মেয়েদের হাত ধরে পর্যন্ত টানাটানি করে যুবকেরা। তাঁর কথায়, ‘‘মাঝে মধ্যে আমি নিজে স্কুলের গেটে গিয়ে দাঁড়াই। একবার তো এক ছাত্রীর হাত ধরে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল এক বাইক আরোহী। তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ছাত্রীরা যাতে আত্মরক্ষা করতে পারে, সে জন্য স্কুলে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে বলে জানান প্রধান শিক্ষিকা। তবে কিছু মেয়েও ওই ছেলেদের স্কুলের সামনে ভিড় করতে প্রশ্রয় দেয় বলে মনে করেন মনীষা।
টাকির পুরপ্রধান সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘একবার স্কুলের পিছনে ছাত্রীদের উত্যক্ত করার জন্য এক বহিরাগতকে কান ধরে ওঠবস করিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। স্কুলের সময়ে বেশি করে পুলিশি টহল বাড়িয়ে কয়েকজন রোমিয়োকে ধরলে ইভটিজিং বন্ধ হতে পারে।’’
হাসনাবাদের টাকি উল্লেখযোগ্য পর্যটনকেন্দ্র। সারা বছর মানুষের ভিড় থাকে। টাকি পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের টাকি ষষ্ঠীবর লালমাধব উচ্চবালিকা বিদ্যালয়। শুরু হয়েছিল ১৮৬২ সালে। বর্তমানে স্কুলটিতে ১৮৪৭ জন ছাত্রী পড়ে। ২৯ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ৪ জন শিক্ষাকর্মী আছেন। একাদশ শ্রেণির ব্রততী বিশ্বাস বলে, ‘‘বহিরাগতরা স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে সাইকেল, বাইকে পিছু নিয়ে বিরক্ত করে। তাই অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে স্কুলে আসতে হয়। স্কুল ছুটির পরে ভয়ে বন্ধুরা এক সঙ্গে বাড়ি ফিরি।’’ একই কথা জানাল ধৃতিশ্রী সেনগুপ্ত, রিমলি ভট্টাচার্য, ঋতু গুপ্তের মতো ছাত্রীরা।
দিন কয়েক আগেই এক ছাত্রীকে বাইকে করে এনে টাকির একটি নির্জন জায়গায় ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। দিন দু’য়েক আগে বিয়েতে রাজি না হওয়ায় মাটিয়ার মালতিপুর হাইস্কুলের সামনে এক ছাত্রীর মুখে বিষ ঢেলে খুন করে দুই যুবক। এই সমস্ত ঘটনায় এলাকার মানুষ মেয়েদের একা স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন।
টাকির বাসিন্দা নিমাই চন্দ্র বলেন, ‘‘বহিরাগতদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হতে হয় এখানকার মানুষকে। পিছনের রাস্তা সুনসান, সেখানেই যুবকেরা এসে ভিড় করে। বিশেষ করে টিফিনের সময়ে। ছুটির সময়েও ওই যুবকদের দেখা যায়। প্রতিবাদ করলে আমাদেরই হুমকি দেয়।’’ একই বক্তব্য এলাকারই বাসিন্দা সুজাতা অধিকারী, সৌমেন অধিকারীর।
হাসনাবাদ থানার পুলিশের দাবি, টাকির কলেজ ও স্কুল এলাকায় পুলিশি টহল বাড়ানোর পাশাপাশি সিভিক ভলান্টিয়ার দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy