অঙ্গীকার: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বাঁচানোর শপথ নিয়ে সুন্দগরবনের কালীতলায় গাছের ডালে রাখি বাঁধলেন জঙ্গল-লাগোয়া গ্রামের মহিলারা।
গ্রামে সহজলভ্য বিভিন্ন আনাজ, ফলের বীজ ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব রাখি তৈরি করলেন ‘মম সুন্দরবন’ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েরা। এই রাখির পরার পরে ফেলে দিলেও পরিবেশের ক্ষতি তো হবেই না, বরং গাছ জন্মানোর সম্ভাবনা তৈরি হবে। রাখি পূর্ণিমার আগেই গ্রাম থেকে এই রাখি পৌঁছে গিয়েছে কলকাতা, দমদম, বারাসত-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে, এমনকী দিল্লিতেও।
হিঙ্গলগঞ্জের কনকনগর এসডি ইন্সটিউশনের প্রাক্তন ছাত্রীদের নিয়ে তৈরি স্বনির্ভর গোষ্ঠী ‘মম সুন্দরবন’। তাঁদের এই প্রয়াসের বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক পুলক রায়চৌধুরী-সহ আরও অনেকে। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু উৎসাহী মানুষ ওই রাখি কেনেন। দাম ৫০ টাকা। মম সুন্দরবনের তরফে উমা মণ্ডল জানান, প্রায় ১৫০টি বীজের রাখি তৈরি করেছিলেন তাঁরা। সবগুলিই বিক্রি হয়ে গিয়েছে।
রাখির বেশ কিছুদিন আগেই পুলক মম সুন্দরবনের সদস্যদের বীজ দিয়ে রাখি তৈরি করার কথা বলেন। সেই মতো উমা মণ্ডল, সৌমিতা কয়াল, রাখি মণ্ডলরা উদ্যোগী হন। চালকুমড়ো, কুমড়ো, ঝিঙে, সর্ষে, ধান, আতা, মেথি, লাউ, শসা ইত্যাদির বীজ সংগ্রহ করেন। সেগুলি শুকিয়ে নানা রকম নকশার রাখি তৈরি করেন। কোনও কোনও রাখিতে বিভিন্ন বীজ ব্যবহার করে ময়ূর এঁকে রং করা হয়েছে। কোনওটা আবার শুধুই ধান সাজিয়ে তৈরি করা হয়েছে। রাখি তৈরিতে কোনও প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়নি। এমনকী, পার্সেল করে পাঠানোর ক্ষেত্রেও কোনও প্লাস্টিক ব্যবহার হয়নি।
এই কাজে যুক্ত মেয়েরা বলেন, ‘‘আমাদের নতুন উদ্যোগ সফল হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় ছিল। তাই অল্প পরিমাণে রাখি বানিয়েছিলাম। তবে ক্রেতাদের প্রশংসা ও চাহিদা দেখে ঠিক করেছি, আগামী বছর আরও বেশি এই ধরনের রাখি তৈরি করব।’’
মম সুন্দরবনের থেকে রাখি কিনেছেন বারাসতের বাসিন্দা শিক্ষিকা স্বপ্না রায়। তিনি বলেন, ‘‘আমি সামাজিক মাধ্যমে এই রাখির কথা জানতে পেরে অর্ডার করি। বীজ দিয়ে সুন্দর রাখি তৈরি করেছেন প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়েরা। এর পিছনে যে পরিবেশ-ভাবনা আছে, তা আমায় মুগ্ধ করেছে।’’
পরিবেশবান্ধব এই রাখির কথা জানতে পেরে হিঙ্গলগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ শেখ কামালউদ্দিন বলেন, ‘‘খুব ভাল উদ্যোগ। মম সুন্দরবন গোষ্ঠীর মেয়েদের উৎসাহ দিতে আমাদের কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁদের তৈরি পরিবেশবন্ধব জিনিস অতিথিদের উপহার দেওয়ার কথা ভেবেছি।’’ পুলক বলেন, ‘‘রাখিবন্ধনে আমরা মানুষের সঙ্গে পরিবেশকেও যুক্ত করতে চেয়েছি, তাই এই উদ্যোগ। মানুষও ভাল সাড়া দিয়েছেন। এ বার আমরা বীজ ব্যবহার করে পেন তৈরির কথা ভাবছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy