Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
Bagdah

পুজোর উচ্ছ্বাস নেই শ্যামলীদের পরিবারে

গত নভেম্বরে মাসে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার পারমাদনের বাসিন্দা শিবানী মুহুরির মৃত্যু হয়। রাতে দেহ নিয়ে নবদ্বীপে সৎকারের জন্য যাচ্ছিলেন পরিবারের সদস্যেরা। সঙ্গে ছিলেন প্রতিবেশী কয়েকজন।

বিষাদ: নিজের বাড়িতে শ্যামলী ও ছেলে। নিজস্ব চিত্র

বিষাদ: নিজের বাড়িতে শ্যামলী ও ছেলে। নিজস্ব চিত্র

সীমান্ত মৈত্র  
বাগদা শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৫৯
Share: Save:

একটা দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছিল গ্রামের বহু মানুষের প্রাণ। তারপরে বছর ঘুরতে চলল। শারদ উৎসবে শামিল হওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে গ্রামে। তবে স্বজনহারা পরিবারগুলিতে এখনও রয়ে গিয়েছে হাহাকার।

গত বছর নভেম্বর মাসে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার পারমাদনের বাসিন্দা শিবানী মুহুরির মৃত্যু হয়। রাতে দেহ নিয়ে নবদ্বীপে সৎকারের জন্য যাচ্ছিলেন পরিবারের সদস্যেরা। সঙ্গে ছিলেন প্রতিবেশী কয়েকজন। নদিয়ার হাঁসখালির ফুলবাড়ি মাঠের কাছে রাজ্য সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পাথরবোঝাই লরিতে ধাক্কা মারে শববাহী গাড়িটি। দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ১০ জন-সহ ১৭ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে পারমাদন ও সংলগ্ন এলাকারই ১৩ জন বাসিন্দা মারা যান। অনেকে জখম হয়েছিলেন।

ওই ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন গ্রামের বাসিন্দা শ্যামলী বিশ্বাসের স্বামী সুকুমার। পেশায় ভাগচাষি সুকুমার গ্রামে হরিনাম সংকীর্তনের দলেও ছিলেন। এলাকায় কেউ মারা গেলে নামসংকীর্তন করতে শ্মশানযাত্রায় শামিল হতেন। তিনিও গিয়েছিলেন শ্মশানযাত্রীদের সঙ্গে। আর ফেরেননি। শ্যামলীর দুই মেয়ে, এক ছেলে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছিলেন ধার-দেনা করে। সুকুমারই ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। তাঁর মৃত্যু কেড়ে নিয়েছে শ্যামলীর যাবতীয় আনন্দ। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ছেলে কলেজের পড়া শেষ করেছেন। এখন বাবার ভাগে নেওয়া জমিতে চাষবাস করেন। শ্যামলীর বাড়ির অবস্থা জরাজীর্ণ। বৃষ্টি হলে ভাঙা টালি ভেঙে ঘর জলে ভেসে যায়। ছেঁড়া একটি ত্রিপল টালির উপরে দিয়ে জল আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ঘরের বাইরে একটি সাইকেল বেড়ায় হেলান দিয়ে রাখা। সে দিকে তাকিয়ে শ্যামলী বললেন, “আমার স্বামী ওটা চালাতেন। উনি চলে যাওয়ার পরে সাইকেলটি ওখানেই রেখে দিয়েছি।”

ছেলে সমীর বলেন, “বাবা যখন চাষ করতেন, আমি বাবার জন্য খাবার নিয়ে যেতাম মাঠে। পটলে ফুল ছোঁয়ানো ছাড়া কোনও কাজ বাবা শেখাননি। চাষের কাজ শেখাতে চাইতেন না।” পরিস্থিতির চাপে অবশ্য সমীরকে বাবার সেই কাজই বেছে নিতে হয়েছে।

স্বামীর একটি বাঁধানো ছবি ঘর থেকে বের করে আনলেন শ্যামলী। কান্নায় ভেঙে পড়লেন হঠাৎ। ওই অবস্থায় বললেন, “পুজোয় উনিই কেনাকাটা করতেন। ঠাকুর দেখাতে নিয়ে যেতেন। এ বার কিছুই কেনাকাটা হয়নি। আমাদের আর পুজো বলে কিছু নেই।” স্বামীর মৃত্যুর পরে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সাহায্য পেয়েছেন তাঁরা। সেই টাকা দিয়ে মেয়েদের বিয়ের ধার-দেনা শোধ করেছেন। এ বার পুজোয় দেবী দশভুজার কাছে শ্যামলীর একটিই প্রার্থনা, ছেলের যেন একটা কাজের ব্যবস্থা হয়।

পারমাদনে পাঁচটি পুজো হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জয় নন্দী বলেন, “এলাকায় পুজো হলেও আমাদের মনে আনন্দ নেই। সে দিনের কথা কী ভোলা যায়! দুর্ঘটনার পরে নেতা, বিধায়ক, মন্ত্রীরা গ্রামে এসে কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন। তা এখনও পূরণ হল না।”

অন্য বিষয়গুলি:

Bagdah Durga Puja 2022
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy