দেবী: ডায়মন্ড হারবারের রায়নগর নেতাজি সঙ্ঘের প্রতিমা। ছবি: দিলীপ নস্কর।
ভুলটা করেছিলেন পূর্বপুরুষেরা। এলাকার নিম্নবর্গের মানুষকে দুর্গাপুজোয় শামিল হতে দিতেন না তাঁরা। প্রায় একশো বছর পর আগের প্রজন্মের সেই ভুল শুধরে নিলেন এখনকার প্রজন্ম। বনগাঁর নরহরিপুর গ্রামে পাড়ুই দাস জেলে সম্প্রদায়ের মানুষকে বাড়ি গিয়ে পুজোর আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছেন তাঁরা। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া এই মানুষগুলি, বিশেষ করে মহিলারা যাতে নতুন শাড়ি পরে মহাষ্টমীর অঞ্জলি নিবেদন করতে পারেন, তারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে বনগাঁর নরহরিপুর গ্রাম। কাঁটাতার, বিএসএফ, চোরাচালান এসবের মধ্যেই সেখানকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন। এলাকার সর্বজনীন দুর্গামন্দিরে প্রায় ১০০ বছর ধরে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। ওই এলাকার ‘হঠাৎ সঙ্ঘ’ ক্লাব পুজোর আয়োজন করে মন্দিরে মণ্ডপ নির্মাণ করে। ষষ্ঠীর সকালে মণ্ডপে প্রতিমা আনা হয়েছে। পুজো উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে মন্দিরটি জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। দিন কয়েক আগে গ্রামবাসী এবং ছয়ঘড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য পরিতোষ বিশ্বাসের আর্থিক সহায়তায় কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে মন্দিরের সংস্কার করে নতুন করে পুজো শুরু হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পুজো উদ্যোক্তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, পুজোয় সামাজিক ভেদাভেদ রাখা হবে না। এক বয়স্ক গ্রামবাসী শ্যামল বিশ্বাস বলেন, “ছোটবেলায় দেখেছি এখানে পাটকাঠি দিয়ে তৈরি মণ্ডপে পুজো হত। পাড়ুই দাস জেলে সম্প্রদায়ের মানুষকে পুজোয় ডাকা হত না। উঁচু-নিচু জাতের বিভেদ ছিল।” পঞ্চায়েত সদস্য তথা পুজো উদ্যোক্তা পরিতোষ বলেন, “অতীতের ভুল শুধরে নিয়ে পাড়ুই দাস জেলে সম্প্রদায়ের মানুষকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। সকলে মিলে আনন্দ উৎসব পালন করব।”
শ্যামল, পরিতোষ-সহ পুজো কমিটির সম্পাদক কল্যাণ বিশ্বাস, উদ্যোক্তা শৈলেন বিশ্বাস ও আরও অনেকে গত কয়েকদিন ধরে পাড়ুই দাস জেলে সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়ি গিয়ে পুজোর নিমন্ত্রণ করে এসেছেন। সোমবার, মন্দিরের পাশে মঞ্চ বেঁধে সকলকে নতুন শাড়ি দেওয়া হয়েছে।
প্রবীণ বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এলাকাটি অতীতে অধুনা বাংলাদেশ যশোর জেলার মধ্যে ছিল। আগে পুজোর সময় বাংলাদেশের আত্মীয়েরা এখানে আসতেন। পুজোটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য, মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ। অর্থ সংগ্রহ, প্রতিমা আনা, বিসর্জনের যাবতীয় দায়িত্ব সামলান বিল্লাল মণ্ডল, ইসমাইল মণ্ডলেরা।
পুজোয় শামিল হওয়ার আমন্ত্রণ খুশি করেছে পাড়ুই দাস ও জেলে সম্প্রদায়ের মানুষদের। তাঁরা ইতিমধ্যেই মণ্ডপে এসে প্রতিমা দর্শন শুরু করেছেন। সুমি সরকার ও সাগরী বিশ্বাসেরা জানালেন, এই পুজোয় তাঁদের এতদিন ঠাঁই ছিল না। এবার নিমন্ত্রণ পেয়ে খুব আনন্দ হচ্ছে। পুজোর দিনগুলিতে মণ্ডপে কাটানোর ও অঞ্জলি দেওয়ার ইচ্ছে আছে তাঁদের। বঞ্চনার কথা তাঁরা মনে রাখতে চান না। উদ্যোক্তাদের আন্তরিকতায়
তাঁরা মুগ্ধ।
পাড়ুই দাস জেলে সম্প্রদায়ের মানুষেরা আগে অন্যত্র অঞ্জলি দিতেন, অনেকে তাও দিতেন না। তবে এবার সকলেই এই পুজোয় শামিল হবেন, দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, আন্তরিকতার প্রলেপে গলে জল হয়ে গিয়েছে যে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy