Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
মাদকের রমরমা কারবার নিয়ে সংসদে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দুই জেলায় মাদকের কেনাবেচার হালহকিকৎ খোঁজ নিয়ে দেখল আনন্দবাজার
Ghutiari Sharif

নদিয়া, মুর্শিদাবাদ থেকে মাদক ঢোকে ঘুটিয়ারি শরিফে

শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ক্যানিং লাইনে পড়ে ঘুটিয়ারি শরিফ স্টেশন। প্ল্যাটফর্মের আশপাশে এবং স্টেশন-সংলগ্ন মাকালতলা, হালদারপাড়া-সহ বেশ কিছু এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলছে হেরোইনের কারবার।

পুলিশও তাদের বাড়িতে অভিযান চালাতে সাহস পায় না বলে অভিযোগ।

পুলিশও তাদের বাড়িতে অভিযান চালাতে সাহস পায় না বলে অভিযোগ। প্রতীকী ছবি।

সামসুল হুদা
ভাঙড়  শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:০৮
Share: Save:

আন্তঃরাজ্য মাদক কারবারের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে বার বার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঘুটিয়ারি শরিফ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় এখানে মাদকের রমরমা কারবার চালিয়ে যাচ্ছে ড্রাগ মাফিয়ারা। পুলিশের হাতে দু’একজন চুনোপুঁটি মাঝে মধ্যে ধরা পড়লেও, রাঘববোয়ালরা থেকে যায় অন্তরালেই। এমনকী, পুলিশও তাদের বাড়িতে অভিযান চালাতে সাহস পায় না বলে অভিযোগ।

শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ক্যানিং লাইনে পড়ে ঘুটিয়ারি শরিফ স্টেশন। প্ল্যাটফর্মের আশপাশে এবং স্টেশন-সংলগ্ন মাকালতলা, হালদারপাড়া-সহ বেশ কিছু এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলছে হেরোইনের কারবার। এমনিতে ঘুটিয়ারি শরিফ একটি ধর্মীয় পীঠস্থান। সে কারণে সারা বছরই বহু মানুষের ভিড় লেগে থাকে। এমনকী ভিন্ রাজ্য থেকেও অনেকে আসেন। সড়কপথেও শহর ও শহরতলির সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল। এরই সুযোগ নিয়ে ড্রাগ মাফিয়াদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে এই এলাকা।

স্থানীয় সূত্রের খবর, এলাকার ড্রাগ কারবারের মাথা পিন্টু লস্কর। সঙ্গীসাথীদের নিয়ে সে ওই এলাকায় নিজের সাম্রাজ্য তৈরি করেছে। বাইরে থেকে মাদক এনে পুরিয়া তৈরি করে জেলা এবং জেলার বাইরে ছড়িয়ে দেওয়া, পুরোটাই হয় তাদের তত্ত্বাবধানে। এলাকায় পিন্টুর অট্টালিকার মতো বাড়ি। সেখান থেকেই পাচারের কাজ নিয়ন্ত্রণ করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মূলত মুর্শিদাবাদের লালগোলা এবং নদিয়ার কালিয়াগঞ্জ থেকে ট্রেন ও সড়কপথে হেরোইন আসে ঘুটিয়ারি শরিফে। পরে সেই হেরোইনের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের পাউডার ও অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে তৈরি করা হয় ছোট ছোট পুরিয়া। ওই পুরিয়াই পৌঁছে দেওয়া হয় বিভিন্ন এলাকায়। স্থানীয় মানুষের দাবি, রাজনৈতিক নেতাদের হাত রয়েছে পিন্টুর মাথায়। তাই পুলিশও তাকে ছুঁতে পারে না।

স্থানীয় বিধায়ক সওকাত মোল্লা অবশ্য জানান পিন্টুকে ধরার এবং মাদক কারবার বন্ধের সব রকম চেষ্টা চলছে। সওকাতের কথায়, “দক্ষিণ ২৪ পরগনার সব থেকে বড় মাদক কারবারির নাম পিন্টু লস্কর। মাদক কারবারের সঙ্গে পিন্টু ও তার পরিবার জড়িত। আমরা কোনও ভাবেই এই কারবারকে সমর্থন করি না। পুলিশের একটা অংশ মাসোহারা নিয়ে পিন্টু ও তার সঙ্গীসাথীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যে কারণে পিন্টু আজও ধরা পড়েনি। ইতিমধ্যে একাধিকবার প্রশাসনের সর্বস্তরে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও আবেদন করব।” পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, ঘুটিয়ারি শরিফে মাদক কারবারের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান চলছে। বারুইপুর পুলিশ জেলার স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আহমেদ মণ্ডল ও রশিদা শেখকে ঘুটিয়ারি শরিফ স্টেশন-সংলগ্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। এদের কাছ থেকে ১ কেজি ৮০০ গ্রাম হেরোইন এবং নগদ দেড় লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছিল। আহমেদের বাড়ি নদিয়ার কালিয়াগঞ্জের ছোট চাঁদঘর এলাকায়। রশিদার বাড়ি ঘুটিয়ারি শরিফের মাকালতলায়। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে পিন্টু লস্করের ছেলে রশিদ লস্কর ওরফে বাচ্চু ও জামালউদ্দিন শেখকে সোনারপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। সে সময়ে এদের কাছ থেকে প্রায় দেড় কেজি হেরোইন উদ্ধার হয়েছিল। জামালউদ্দিনের বাড়ি নদিয়ার কালিয়াগঞ্জের বলিয়াপাড়ায়। রশিদের বাড়ি ঘুটিয়ারি শরিফে। ২০২১ সালের অগস্ট মাসে মাকালতলা এলাকা থেকে সাজিনা বিবিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার কাছ থেকে দু’কেজি হেরোইন উদ্ধার হয়। ঘুটিয়ারি শরিফ থেকে ১৫০ গ্রাম হেরোইন-সহ গ্রেফতার করা হয়েছিল কুতুবউদ্দিন চৌধুরীকে। তার বাড়ি মুর্শিদাবাদের লালগোলা এলাকায়। পিন্টুর ছেলে-সহ এলাকার কয়েকজন মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করা হলেও অধরা থেকে গিয়েছে পিন্টু। ক্যানিংয়ের এসডিপিও দিবাকর দাস বলেন, “ঘুটিয়ারি শরিফে সব সময়েই নজরদারি চালানো হচ্ছে। মাদক পাচারের বিরুদ্ধেও অভিযান চলছে। ইতিমধ্যে অনেককেই মাদক-সহ গ্রেফতার করা হয়েছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Ghutiari Sharif Drugs
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE