যশোর রোডের পাশে সতর্কীকরণের বোর্ড লাগালেও কত জন তা দেখেন, প্রশ্ন আছে তা নিয়ে। —নিজস্ব চিত্র।
ইঞ্জিন ভ্যানে পাট বোঝাই করে দুই ছেলেকে বসিয়ে যশোর রোড বা ১১২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে ভ্যান চালিয়ে যাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। গাইঘাটা এলাকায় ভ্যানে ধাক্কা মারে একটি গাড়ি। দুই ছেলে-সহ ভ্যান চালক জখম হন। তিন জনকে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চালকের মৃত্যু হয়। ছেলে দু’টিও গুরুতর জখম হয়েছিল।
হাবড়ার দেশবন্ধু পার্ক এলাকায় যশোর রোডে একটি গাড়ি ধাক্কা মারে ভ্যানে। অন্য একটি গাড়িকে ওভারটেক করতে গিয়ে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিলেন বলে জানা যায়। ভ্যান চালক সহ চার মহিলা যাত্রী জখম হন।
নিয়মিত এ রকম দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে যশোর রোড, ১১২ নম্বর জাতীয় সড়কে। কখনও বেপরোয়া ভাবে ছুটে চলা ট্রাক ধাক্কা মারছে যাত্রী বোঝাই ভ্যানে। ছিটকে পড়ে মানুষ মারা যাচ্ছেন। কখনও যাত্রিবাহী বাসের ধাক্কায় মৃত্যু হচ্ছে বাইক চালকের। আবার কখনও অটোর সঙ্গে ম্যাটাডরের ধাক্কায় জখম হচ্ছেন মানুষ। সাম্প্রতিক সময়ে দুর্ঘটনা যেন লেগেই আছে এই রাস্তায়। বিশেষ করে পেট্রাপোল বন্দর থেকে দত্তপুকুর পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার পথ যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।
বনগাঁ থেকে দত্তপুকুর পর্যন্ত গিয়ে দেখা গেল, রাস্তায় ফুটপাত কার্যত নেই। সব বেদখল হয়ে গিয়েছে। সড়কের দু’পাশে থাকা প্রাচীন গাছগুলি রাস্তাকে একেক জায়গায় আরও সঙ্কীর্ণ করে দিয়েছে। দু’টি বড় ট্রাক পাশাপাশি যেতে পারে না। তারই মধ্যে বেপরোয়া গতিতে ছোটে বহু ট্রাক। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলে অটো। ম্যাটাডর বা অন্য যানও চলতে দেখা গেল অতিরিক্ত মালপত্র নিয়ে। একটি ম্যাটাডরে দেখা গেল, এত বিচুলি বোঝাই করা হয়েছে, যে কোনও মুহূর্তে উল্টে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। নিয়ম না মেনে যান চালকেরা একে অন্যকে গতি বাড়িয়ে টেক্কা দিচ্ছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে ‘ব্ল্যাক স্পট’ বোর্ড আছে (দুর্ঘটনাপ্রবণ এালাকা চিহ্নিত করার জন্য)। তবে দিকে কারও তেমন খেয়াল আছে বলে মনে হল না।
বনগাঁ শহর, চাঁদপাড়া বাজার, গাইঘাটা বাজার, হাবড়া শহর, দত্তপুকুরের মতো কয়েকটি এলাকা বাদ দিলে যান চালকেরা দেখা গেল, অনেকে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন। চাঁদপাড়া বাজার এলাকায় দেখা গেল, অটো স্ট্যান্ড রাস্তার উপরে চলে এসেছে। গোটা পথেই বিভিন্ন জায়গায় সড়কের উপরে ট্রাক বা অন্য যানবাহন দীর্ঘক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। হাবড়া শহরে বেআইনি ডিজ়েল অটোর দাপট চোখে পড়ল সর্বত্র। অটোর দাপটে সড়ক বলে আর কিছু নেই।
ফুটপাত দখল করে ইমারতি মালপত্র ফেলে রাখা হয়েছে অনেক জায়গায়। হেলমেটহীন যুবকদের বাইকের দাপাদাপি তো আছেই। বনগাঁ শহরে আবার দিনের বেলাতেও নিয়ন্ত্রণহীন ট্রাকের দাপাদাপি। সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাকের ধাক্কায় যশোর রোডে কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ, তারপরেও ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি। যশোর রোডে অনুষ্ঠানের জন্য তোরণ লাগানো হয়। যান চলাচলে অসুবিধা হয়। চলতি বছরে গাইঘাটা থানা এলাকায় যশোর রোডে ইতিমধ্যেই ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন আরও ২০ জন।
বাজার এলাকাগুলিতে ট্রাফিক পুলিশ বা ট্রাফিক কর্মীদের দেখা যায়। বাকি পথে দেখা মেলে না। বারাসত জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “যশোর রোডের উপরে থাকা বাজার বা হাটগুলিতে হাটবারে বিশেষ ভাবে যান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা হয়েছে। এ ছাড়া, যশোর রোডে ইমারতি মালপত্র ফেলে রাখা হলে তা বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট ধারায় মামলাও করা হচ্ছে। রাতে যান চালকদের সুবিধার জন্য গার্ডরেলে রিফ্লেক্টর লাগানো হয়েছে।”
বারাসত থেকে বনগাঁ পর্যন্ত যশোর রোডে পাঁচটি রেল সেতু তৈরি হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও হয়নি। এ দিকে, গাছের শুকনো মরা ডাল ভেঙে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। অভিযোগ, নিয়মিত শুকনো মরা ডাল কাটা হয় না। বহু মানুষ চাইছেন, সড়ক সম্প্রসারণ করা হোক। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট রেলসেতু তৈরির জন্য গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছে। তারপরেও প্রশাসনের পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ।
পুলিশ-প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যশোর রোডে পথ দুর্ঘটনা কমাতে পুলিশ ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে। সড়কের দু’পাশে রোড ‘ডেলিগেটর’ বসানো হয়েছে। ‘টেবল টপ হাম্প’ বসানো হয়েছে। রাস্তার দু'পাশে গাছে ‘রেডিয়াম রিফ্লেক্টর’ লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া, দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলিতে পথচারী ও যান চালকদের সচেতন করতে বসানো হয়েছেন ‘ব্ল্যাক স্পট’ চিহ্নিতকরণ বোর্ড। গার্ড রেলের ব্যবস্থা আছে অনেক জায়গায়। গুরুত্বপূর্ণ বাজার, হাট, স্কুলগুলির সামনে সিভিক ভলান্টিয়ার রাখা হয়।পুলিশের এক কর্তা বলেন, “দেখা গিয়েছে, ভোরের দিকে গাড়ি চালানোর সময়ে চালকেরা অনেক সময়ে ঘুমিয়ে পড়েন। এর ফলেও দুর্ঘটনা ঘটছে। পুলিশ ট্রাক, যানবাহন থামিয়ে চালক-খালাসিদের চা বিস্কুট খাওয়ায়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy