আদালতে চত্বরে রিয়া । ছবি: দিলীপ নস্কর।
চিকিৎসকের অপমৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যেই তদন্তভার নিয়েছে সিআইডি। ধৃত অভিজিৎ দাস, তাঁর স্ত্রী রিয়া ও পুলিশ কর্মী বাকিবুল্লা বুরহানিকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। শুক্রবার ডায়মন্ড হারবার মহকুমা আদালতে তোলা হয় ধৃতদের। বিচারক তাঁদের ৪ দিন সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
৪ মার্চ ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের আবাসন থেকে উদ্ধার হয় চিকিৎসক কল্যাণাশিস ঘোষের ঝুলন্ত দেহ। ওই দিনই তাঁর মায়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ছিল। মৃত্যু ঘিরে রহস্য দানা বাঁধে। তদন্তে নামে ডায়মন্ড হারবার পুলিশ। তদন্তকারীরা জানতে পারেন, মৃত্যুর আগে একটি চিঠিতে বেশ কয়েক জনের নাম লিখে গিয়েছিলেন কল্যাণ। তাঁদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ বলে উল্লেখ করেন সেখানে।
পুলিশ জাতে পেরেছে, চিকিৎসা সূত্রেই রিয়ার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল কল্যাণের। দু’জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। কল্যাণের আবাসনেও যাতায়াত ছিল রিয়ার। একটি দামি গাড়ি তাঁকে উপহার দেন কল্যাণ। এ নিয়ে তাঁর পরিবারে অশান্তিও হত।
বছরখানেক আগে শিলিগুড়িতে বদলির নির্দেশ আসে কল্যাণের। কিন্তু তিনি যাননি। চাকরি ছেড়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতেন। তবে হাসপাতালের আবাসন ছাড়েননি।
রিয়ার স্বামী অভিজিতের একটি পানশালা আছে ডায়মন্ড হারবার জেটি ঘাটের কাছে। বছর দু’য়েক ধরে নিয়মিত সেখানে যেতেন কল্যাণ। পুলিশ জানতে পেরেছে, পানশালায় একাধিক বার অভিজিতের সঙ্গে মারপিটে জড়িয়েছিলেন কল্যাণ। অভিজিতের দাবি, রিয়ার সঙ্গে তাঁর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। যদিও তদন্তকারীরা তা মানতে নারাজ। বরং রিয়াকে ‘ব্যবহার করে’ কল্যাণের থেকে নানা সময়ে টাকা চাওয়া হত বলে তদন্তকারীদের অনুমান। তাঁরা আরও জানতে পেরেছেন, কল্যাণের সঙ্গে রিয়ার ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের কিছু ছবি তোলা ছিল। যা দেখিয়ে কল্যাণকে রিয়ারা ব্ল্যাকমেল করতেন বলে অভিযোগ।
রিয়া-অভিজিতের সঙ্গে বাকিবুল্লার কী সূত্রে যোগাযোগ, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। তবে বাকিবুল্লাও নানা অজুহাতে ভয় দেখিয়ে কল্যাণের থেকে টাকা নিতেন বলে অনুমান তদন্তকারীদের।
ক্রমশ চাপ বাড়তে থাকে কল্যাণের উপরে। মায়ের মৃত্যুতেও বড় ধাক্কা লাগে। মায়ের মৃত্যুর কয়েক দিন পরে ফেসবুকে কল্যাণ লেখেন, ‘‘মা আসছি, অপেক্ষা করো।’’ মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে ফেসবুকে কল্যাণ লিখেছিলেন, ‘‘চলে যাওয়াতে আনন্দ আছে।’’ পরে লেখেন, ‘মুক্তি’। এটাই ছিল শেষ পোস্ট।
শুক্রবার বেলা দেড়টা নাগাদ ধৃত তিন জনকে আদালতে তোলা হয়। কেউ কোনও মন্তব্য করেননি। তবে রিয়ার এক আত্মীয়ের দাবি, ‘‘মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে। রিয়া অসুস্থ। সেই সংক্রান্ত সমস্ত নথি দেওয়া হয়েছে।’’ কল্যাণের মেয়ে ৬ জনের নামে অভিযোগ করেছিলেন থানায়। তাঁদের আইনজীবী সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জনপ্রিয় চিকিৎসক দিনের পর দিন মানসিক, শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। হুমকি দিয়ে, ভয় দেখিয়ে সমস্ত টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। চাপ সহ্য করতে না পেরে উনি আত্মঘাতী হয়েছেন। কিছু নাম সুইসাইড নোটে লিখে গিয়েছেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নানা তথ্য রয়েছে।’’
এ দিন তিন জনকে সিআইডি ভবানী ভবনে নিয়ে যায়। আদালত চত্বরে সিআইডি ওসি (হোমিওসাইড) শিবেন্দু ঘোষ বলেন, ‘‘ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসতে পারে। সে ভাবেই জেরা চলবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy