Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
মারা গিয়েছেন ২৮ জন

মৃত্যু বাড়ছে সিলিকোসিসে, উদাসীন সরকার

২০১০ সালে শুধু মিনাখাঁ ব্লকের প্রায় ১৮৯ জন শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, জ্বর, ফুসফুসে সংক্রমণ-সহ নানা রোগ নিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন। চিকিৎসার পর জানা যায়, তাঁরা সিলিকোসিসের মত মারণ রোগে আক্রান্ত।

শোকার্ত: হাসানুরের পরিবার। —নিজস্ব চিত্র

শোকার্ত: হাসানুরের পরিবার। —নিজস্ব চিত্র

সামসুল হুদা
ভাঙড় শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৯ ০০:৫৬
Share: Save:

বেড়েই চলেছে সিলিকোসিসে আক্রান্তদের মৃত্যুর মিছিল। এ বিষয়ে সরকারের কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ স্থানীয় মানুষের।

সোমবার ভোররাতে মারা গেলেন সিলিকোসিসে আক্রান্ত হাসানুর মোল্লা (৩২)। তাঁর বাড়ি মিনাখাঁর গোয়ালদহ গ্রামে। গত বছর মার্চ মাসে মারা যান ওই গ্রামেরই বাসিন্দা সালাউদ্দিন মোল্লা। স্থানীয় মানুষের দাবি, এখনও পর্যন্ত মিনাখাঁ ব্লক এলাকায় সিলিকোসিসের মত মারণ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৮ জন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে এখনও বঞ্চিত সিলিকোসিসে আক্রান্ত ও মৃতের পরিবারগুলি।

২০০৯ সালে বিধ্বংসী আয়লার পর সুন্দরবন-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ সব হারিয়েছিলেন। নোনা জল ঢুকে প্লাবিত হয় চাষের জমি। পরবর্তী সময়ে এলাকায় কাজ না থাকায় পেটের তাগিদে মিনাখাঁ ব্লকের গোয়ালদহ, দেবীতলা, ধুতুরদহ, জয়গ্রাম, ক্যানিং ২ ব্লকের গাঁতি, পারগাঁতি, সন্দেশখালি ১ ও ২ ব্লকের রাজবাড়ি, ভাঁটিদহ, জেলেখালি, ধুপখালি-সহ বিভিন্ন এলাকার বহু মানুষ আসানসোল, জামুড়িয়া, কুলটি, রানিগঞ্জ এলাকায় পাথর খাদানের কাজে যান।

২০১০ সালে শুধু মিনাখাঁ ব্লকের প্রায় ১৮৯ জন শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, জ্বর, ফুসফুসে সংক্রমণ-সহ নানা রোগ নিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন। চিকিৎসার পর জানা যায়, তাঁরা সিলিকোসিসের মত মারণ রোগে আক্রান্ত। মিনাখাঁ ব্লকের গোয়ালদহ গ্রামে প্রায় সাড়ে ৪০০ পরিবারের বাস। প্রায় ২০০ পরিবারের লোকজন ওই সব এলাকায় পাথর খাদানের কাজে গিয়েছিলেন। তার মধ্যে ৩৫ জনের সিলিকোসিস ধরা পড়ে। এখনও পর্যন্ত এঁদের মধ্যে ২২ জন মারা গিয়েছেন। নাসির মোল্লা, কারিবুল্লা মোল্লা, দেবু মণ্ডল, রহমান মোল্লা, সফিক মোল্লারা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। অসুস্থ আরও প্রায় ২৫-৩০ জন।

গোয়ালদহ গ্রামের বাসিন্দা আখের আলি মোল্লার চার ছেলে। এর মধ্যে তিন ছেলে হাসানুর মোল্লা, মোজাফফর মোল্লা ও মিজানুর মোল্লা পাথর খাদানের কাজে গিয়েছিলেন ওই এলাকায়। ২০১৪ সালে মারা যান মোজাফ্ফর মোল্লা। তার প্রায় এক বছর পরে মারা যান মিজানুর। সোমবার ভোর রাতে মৃত্যু হয় হাসানুরের।

মঙ্গলবার সকালে হাসানুরের বাড়ি থমথমে। একই পরিবারের তিন ছেলের মৃত্যুতে শোকাহত তাঁরা। এ দিন হাসানুরের স্ত্রী হাসিনা বিবি তাঁর ছোট মেয়েকে কোলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পাশে বসে সদ্য সন্তান হারা হাসানুরের মা আলিমুন নেশা। তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। হাসিনা বলেন, ‘‘সংসারে একমাত্র রোজগেরে ছিলেন আমার স্বামী। তিনি অসুস্থ হওয়ার পর আমি শাড়িতে জরির কাজ করে কোনও রকমে সংসার চালাতাম। তাঁর চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে বাজারে অনেক টাকা ধার হয়ে গিয়েছে। আমার ছোট ছোট দুই ছেলে মেয়ে। তাদের মানুষ করব কী ভাবে বুঝতে পারছি না।’’ সরকার যদি প্রথম থেকে সহযোগিতা করত তা হলে হয়তো হাসানুর আরও কিছুদিন বাঁচত বলে মনে করেন স্ত্রী হাসিনা। তিনি আরও বলেন, ‘‘সরকারি চাল-ডাল থেকে শুরু করে আমরা কোনও সাহায্য পাই না। আমাদের কী ভাবে চলবে বুঝতে পারছি না।’’

হাসানুরের মা আলিমুন বলেন, ‘‘সংসারের হাল ধরতে আমার তিন ছেলে আসানসোলে কাজে গিয়েছিল। সেখান থেকে এই রোগ বাধিয়ে ফিরল। একে একে তিন ছেলেই চলে গেল। কী ভাবে আমাদের চলবে তা বুঝতে পারছি না।’’

ওই গ্রামের বাসিন্দা সইদুল পাইক সিলিকোসিসে আক্রান্তদের দিনরাত সেবা করে চলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি প্রথম থেকে আক্রান্তদের পাশে আছি। সরকারি উদাসীনতায় দিন দিন মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। অথচ সরকারি ভাবে ধামাচাপা দিতে হাসপাতালগুলিতে সিলিকোসিস না লিখে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে যক্ষ্মা বা অন্য রোগের কথা। আমরা চাই, সরকারি হাসপাতালগুলোতে আক্রান্তদের সব রকম পরীক্ষা করে সঠিক রোগ নির্ণয় করে রিপোর্ট লেখা হোক।’’

মিনাখাঁ ব্লক স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, আক্রান্তদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। তা ছাড়া যাঁদের যেমন সমস্যা সেই মতো চিকিৎসা করা হয় এবং রিপোর্ট লেখা হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Bhangar Death Silicosis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy