Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

বনগাঁ-চাকদহ সড়ক যেন মরণফাঁদ, অবাধে চলে বাইক রেস

দিন কয়েক আগে রাত ১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে বনগাঁ-চাকদা রাজ্য সড়কের গোপালনগরের চালকি এলাকায়। বনগাঁ-চাকদহ সড়কে ওই দুর্ঘটনাটি নতুন নয়। বেপরোয়া বাইকের ধাক্কায় নিয়মিত ঘটছে দুর্ঘটনা।

হেলমেট ছাড়াই বনগাঁ-চাকদহ রোডে চলছে রেস। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

হেলমেট ছাড়াই বনগাঁ-চাকদহ রোডে চলছে রেস। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৯ ০১:২৩
Share: Save:

বেপরোয়া গতিতে ছুটে চলা দু’টি বাইকের ধাক্কায় সড়কের উপর ছিটকে পড়ল পাঁচ যুবক। সকলেই মদ্যপ। কারও মাথায় হেলমেট নেই। চারজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতার আরজিকরে ভর্তি করা হয়।

দিন কয়েক আগে রাত ১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে বনগাঁ-চাকদা রাজ্য সড়কের গোপালনগরের চালকি এলাকায়। বনগাঁ-চাকদহ সড়কে ওই দুর্ঘটনাটি নতুন নয়। বেপরোয়া বাইকের ধাক্কায় নিয়মিত ঘটছে দুর্ঘটনা। মানুষ মারা যাচ্ছেন। জখম হচ্ছেন। তবুও হুঁশ ফিরছে না একাংশ বাইক চালকদের। সকাল হোক বা রাত ওই সড়কে সবসময় চোখে পড়বে বাইক রেস। জোর গতিতে বাইক চালিয়ে রেস করে যুবক-কিশোরেরা। বাইক চালাতে চালাতেই হাত উপরে করে তাঁরা চিৎকার করে উল্লাস করেন। বাসিন্দারা জানান, বাইক চালানোর সময় দু’টি বাইক পাশাপাশি হাত ধরে চালানোর চেষ্টা করে। দিনের বেলা হেডলাইট জ্বালিয়ে বাইক চালাতেও দেখা যায়। এ ভাবেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাইকগুলি পথচারীদের ধাক্কা মারে। সড়ক দিয়ে হেঁটে, সাইকেলে, টোটো করে যাওয়ার সময় বাসিন্দারা রীতিমতো আতঙ্কে থাকেন।

পুলিশ জানিয়েছে, গত পাঁচ মাসে গোপালনগর থানা এলাকায় ওই সড়কে ছ’জনের মৃত্যুর হয়েছে। জখম হয়েছেন গোটা ১৫ মানুষ। বেশির ভাগ দুর্ঘটনাই বাইক নিয়ে হয়। কখনও বাইকের সঙ্গে বাইকের, কখনও বাইকের সঙ্গে সাইকেল, টোটো অটোর ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটছে। আবার সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পিছনে এসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাইক চালক ধাক্কা মারছে এমন ঘটনাও ঘটেছে।

অতীতে বাইকের ধাক্কায় এক সিভিক ভলান্টিয়ারের জখম হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। ওই সিভিক ভলান্টিয়ার সড়কে হেলমেটহীন বাইক ধরার কাজ করছিলেন। বনগাঁ-চাকদহ সড়কে বেপরোয়া বাইক চালক ও আরোহীদের দৌরাত্ম্য দীর্ঘদিন ধরে চলছে। সড়কটি যেন একাংশের বাইক চালক যুবকদের কাছে রেসের জায়গা হয়ে উঠেছে। তার ফলে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। পথ নিরাপত্তা নিয়ে সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ কর্মসূচির মাধ্যমে পুলিশ প্রশাসনের তরফে প্রচার করা হচ্ছে। তবুও মানুষ সচেতন হচ্ছেন না। ওই সড়কটিকে এলাকার মানুষ মৃত্যুফাঁদ বলছেন। ঝাঁ চকচকে বড় সড়কটিতে মৃত্যু ও জখমের ঘটনা এখন নিত্য দিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তা দখল করে পণ্যবাহী ট্রাকের বেআইনি পার্কিং গজিয়ে উঠেছে। ফলে রাস্তা সরু হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে দিয়ে বাস, ট্রাক, বাইক বা অন্য যানবাহন জোর গতিতে যাতায়াত করছে। সড়কের উপর ফলে রাখা রয়েছে ইমারতি মালপত্র।

গিরিবালা বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে সড়কের উপর খোয়া পাথর জমা করে রাখা হয়েছে। গোপালনগর বাজারে রাস্তার উপর সাইকেল, বাইক, ছোট গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। ওই বাজারে অতীতে আনাজ বোঝাই গাড়ির ধাক্কায় দুই ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। তারপরও অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। ২০১০ সালে সরু সড়ক সংস্কার করে চওড়া সড়ক তৈরি হয় এডিবি-র ঋণের টাকায়। তারপর থেকে গাড়ির গতি বেড়েছে। ফাঁকা ও চওড়া রাস্তা পেয়ে অনেক সময় যান চালকেরা গতি এতটাই বাড়িয়ে দিচ্ছেন যে, নিয়ন্ত্রণরাখতে পারছেন না। সড়কটি বনগাঁ থেকে নদিয়ার চাকদা চৌমাথা পর্যন্ত গিয়েছে। বনগাঁ ও গোপালনগর থানা এলাকাতেই বাইক রেস দেখা যায়।

পুলিশের পক্ষ থেকে নিয়মিত ধরপাকড় চলছে। কিন্তু সড়কে যখন পুলিশ না থাকে বা সড়কের যে এলাকায় পুলিশ থাকে না সেখানেই বাইক চালকেরা গতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। বনগাঁর পুলিশ সুপার তরুণ হালদার বলেন, ‘‘বেপরোয়া বাইক চলাচল রুখতে ধরপকড়ের পাশাপাশি সচেতনতা মূলক কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে নিয়মিত।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bike Race Bongaon Chakdaha State Highway
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE