Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Drowning Death

রং খেলে গঙ্গায় নেমে জন্মদিনেই নিখোঁজ, উদ্ধার দুই বন্ধুর দেহ

সোমবার, দোলের দিন গঙ্গায় স্নান করতে নেমে তলিয়ে গিয়েছিল ওই কিশোর এবং তার আরও দুই বন্ধু। মঙ্গলবার বন্ধু দুই কিশোরের দেহ মিললেও রাত পর্যন্ত আদিত্য সাউয়ের খোঁজ মেলেনি।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৪ ০৪:৪৬
Share: Save:

জন্মদিন উপলক্ষে সন্ধ্যায় বাড়িতে আসার কথা ছিল বন্ধুদের। তাই সকালে বেশি রং খেলতে চায়নি বছর চোদ্দোর কিশোর। বার বার ডাকাডাকির পরে আরও তিন বন্ধুর সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আবির খেলা শুরু করেছিল সে। তার পরে সবাই মিলে গিয়েছিল কয়েকশো মিটার দূরের গঙ্গার ঘাটে। কিন্তু জলে নামতেই ঘটে গেল বিপত্তি।

সোমবার, দোলের দিন গঙ্গায় স্নান করতে নেমে তলিয়ে গিয়েছিল ওই কিশোর এবং তার আরও দুই বন্ধু। মঙ্গলবার বন্ধু দুই কিশোরের দেহ মিললেও রাত পর্যন্ত আদিত্য সাউয়ের খোঁজ মেলেনি। দোলের দিন তারই জন্মদিন ছিল। এ দিন ফ্রিজ খুলে তার বাবা সঞ্জীব সাউ দেখাচ্ছিলেন, বন্ধুদের জন্য দোলের সকালেই আইসক্রিম, ঠান্ডা পানীয়, কেক কিনে এনে রেখেছিল অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া আদিত্য। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল ৬টা নাগাদ পানিহাটি শ্মশান সংলগ্ন ঘাট থেকে নীরজ রজক (১৪) এবং বেলা ১১টা নাগাদ খড়দহের রাসখোলা ঘাট থেকে রনিত রায়ের (১৬) দেহ উদ্ধার হয়। ব্যারাকপুরের উপ-নগরপাল (মধ্য) কুলদীপ সোনাওয়ানে বলেন, ‘‘দু’জনের দেহ ইতিমধ্যেই উদ্ধার হয়েছে। অন্য জনের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।’’

জানা গিয়েছে, দোলের দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ আদিত্য, নীরজ, রনিত ও শিবম নামে চার কিশোর পানিহাটির আনন্দময়ী ঘাটে গিয়ে স্নান করতে গঙ্গায় নামে। পূর্ণিমার ভরা কটাল থাকায় জলস্তরও অনেকটাই উঁচু ছিল। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, ওই ঘাটে খুব বেশি কেউ স্নান করতে যান না। ওই চার কিশোর নামার পরেই বান আসে। জলের স্রোতে চার জনই ভেসে গিয়ে হাবুডুবু খেতে থাকে। তিন জন তলিয়ে গেলেও কোনও মতে সাঁতরে পাশের গিরিবালা ঘাটে গিয়ে ওঠে শিবম। সে-ই বাকি বন্ধুদের বাড়িতে খবর দেয়। এ দিকে, খবর পেয়ে খড়দহ থানার পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের উদ্ধারকারীদের দল ঘটনাস্থলে পৌঁছয়।

আগরপাড়ার শ্যামাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় স্ট্রিটে আদিত্যদের পাশের বাড়িতেই থাকত নীরজ। এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা গেল, কার্যত বাক্যহারা নীরজের মা সুন্দরী রজক। ওই কিশোরের আত্মীয়েরা জানান, স্থানীয় কেদারনাথ পোদ্দার স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ওই পড়ুয়া কখনও একা একা গঙ্গায় যেত না। কান্না সামলে কোনও মতে সুন্দরী বলেন, ‘‘বাড়ির সামনেই তো ওর বন্ধুরা দাঁড়িয়েছিল। কখন গঙ্গায় চলে গিয়েছিল, টেরও পাইনি। পুলিশ যদি তাড়াতাড়ি খোঁজাখুঁজি শুরু করত, তা হলে হয়তো ছেলেটাকে বাঁচানো যেত।’’ যদিও পুলিশের দাবি, ভরা কটাল ও বানের কারণে জলস্তর অনেক বেশি ছিল। সেটা কিছুটা কমতেই ডুবুরি নামানো হয়েছিল। জানা গিয়েছে, সাঁতার জানত না নীরজ।

অন্য দিকে, আদিত্যের বাবা সঞ্জীব জানাচ্ছেন, গত বছর সপ্তম শ্রেণিতে পরীক্ষার ফল ভাল না হওয়ায় ছেলেকে বিহারে দেশের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। তখন থেকেই পিসির কাছে রয়েছে ওই কিশোর। জন্মদিন ও দোল উপলক্ষে রবিবারই সে এসে পৌঁছেছিল আগরপাড়ার বাড়িতে। তার পরের দিনই এমন ঘটনায় হতবাক আত্মীয়-পরিজন থেকে প্রতিবেশীরাও। পরিজনেরা জানাচ্ছেন, জন্মদিন পালন করবে বলে জনা ১৫ বন্ধুকে সন্ধ্যায় বাড়িতে ডেকেছিল আদিত্য। এ দিন কান্নায় ভেঙে পড়ে সঞ্জীব বলেন, ‘‘সকালে বন্ধুরা বার বার ডাকলেও ছেলে বাড়ি থেকে বেরোতে চাইছিল না। আমিই ওকে বললাম, ঘুরে আসতে। তার পরেই ছেলেটা বেরিয়েছিল।’’

প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, এলাকায় শান্ত ও ভাল ছেলে হিসাবেই পরিচিত আদিত্য, নীরজেরা। আদিত্য ও নীরজের বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে ইলিয়াস রোডের আবাসনে বাবা-মায়ের সঙ্গে ভাড়া থাকত রনিত। সে আগরপাড়া রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ মিশনের নবম শ্রেণির পড়ুয়া ছিল। ছেলের মৃত্যুতে কথা বলার ভাষা হারিয়েছেন বাবা অমরেন্দ্র রায় এবং মা রমা রায়। জানা যাচ্ছে, রনিতও সাঁতার জানত না। তাঁদের প্রতিবেশী সুনীল চৌধুরী বলেন, ‘‘পড়াশোনায় খুব ভাল ছিল রনিত। কোনও দিন গঙ্গায় যায়নি। কিন্তু কী যে হল!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy