ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখেন, ছাত্রছাত্রীরা তাঁকে ঘিরে আছে। ক্লাসরুমে বসে পড়াচ্ছেন তিনি। আচমকা ঘুম ভেঙে যায়। আছড়ে পড়েন বাস্তবের মাটিতে। বোঝেন, দিনমজুরের কাজ করেই সংসারটা চালাতে হবে।
শিক্ষকতার চাকরি করবেন বলে চেষ্টায় খামতি রাখেননি হাবড়া শহরের বাসিন্দা গোবিন্দ সাহা। এখন বয়স তেতাল্লিশ। থাকেন পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের আশুতোষ কলোনি এলাকায়। হাবড়া শ্রীচৈতন্য কলেজ থেকে স্নাতক হয়েছিলেন। ২০০৫ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এমএ করেন।
শিক্ষকতার চাকরি করবেন বলে, ২০০৬-২০১৩ সালের মধ্যে ৫ বার এসএসসি দিয়েছেন। দু’বার প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বসেছেন। এ ছাড়াও খাদ্য দফতরের বিভিন্ন পদের জন্যও পরীক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু চাকরি মেলেনি।
গোবিন্দ এখন হাবড়া পুরসভার সাফাই বিভাগে দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক। ভোর সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠে ৬টার মধ্যে পৌঁছে যান নালন্দামোড় এলাকায়, সাফাই বিভাগের অফিসে। সাফাই কাজের সুপারভাইজার হিসাবে কাজ করেন। কখনও কখনও সাফাই কর্মী কম থাকলে নিজেই আবর্জনা সাফের কাজে হাত লাগান। কখনও দেখা যায়, আবর্জনা-বোঝাই ভ্যান ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন। দৈনিক হাতে পান ২০২ টাকা। মাসের ৪টি রবিবার কাজ থাকে না। সব মিলিয়ে মাসে মেরেকেটে হাতে আসে ৫২০০ টাকা। এই টাকা দিয়েই সংসার চালাতে হয়। বাড়িতে স্ত্রী লাকি, বৃদ্ধা মা এবং দশ বছরের ছেলে। সে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। সংসার চালাতে এর আগে কলকাতায় বেসরকারি সংস্থায় নিরাপত্তা কর্মীর কাজ করেছেন। দৈনিক বেতন ছিল ১৫০ টাকা। হাবড়ায় জামাকাপড়ের দোকানে কাজ করেছেন। গত পাঁচ বছর ধরে পুরসভার সাফাই বিভাগে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন। সরকারি প্রকল্পের সুবিধা বলতে বছর দু’য়েক আগে পাকা বাড়ি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির বিষয়টি গোবিন্দেরও নজরে এসেছে। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক অযোগ্য মানুষ টাকার বিনিময়ে শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছেন। এখন মনে হয়, স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ হলে আমার মতো অনেকেই এতদিনে চাকরি পেতেন। জীবনের অনেক স্বপ্ন সফল হত!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy