Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Cyclone Yaas

ইয়াস তাণ্ডবের জের, জল ঢুকল ত্রাণ শিবিরেও

প্রবল জলোচ্ছ্বাসে সাগর, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, নামখানা, গোসোবা, বাসন্তী, ক্যানিং, কুলপি, কুলতলির গ্রামের পর গ্রাম এ দিন প্লাবিত হয়।

বাঁধ ভাঙা জলে ভাসছে পাখিরালয় গ্রাম।

বাঁধ ভাঙা জলে ভাসছে পাখিরালয় গ্রাম।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২১ ০৬:৫৩
Share: Save:

ঝড়ের তীব্রতায় আমপানের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে ছিল ইয়াস। কিন্তু বুধবার নদী-সমুদ্র উত্তাল হয়ে বহু বাঁধ ভেঙেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলবর্তী বিভিন্ন এলাকায়। ভেসেছে গ্রামের পর গ্রাম। আমপানেও নদী বাঁধের এত ক্ষতি হয়নি বলেই জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। ঝড়ের প্রভাব এবং পূর্ণিমার কটাল, দুইয়ে মিলেই এ দিন ভয়ঙ্কর রূপ নেয় নদী।

প্রবল জলোচ্ছ্বাসে সাগর, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, নামখানা, গোসোবা, বাসন্তী, ক্যানিং, কুলপি, কুলতলির গ্রামের পর গ্রাম এ দিন প্লাবিত হয়। জলের তোড়ে জেলা জুড়ে প্রায় ৬০ হাজার মাটির বাড়ি ভেঙে গিয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। হতাহতের অবশ্য খবর নেই। তবে নষ্ট হয়েছে চাষের জমি, পানের বরজ, পুকুর। ঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় বোরো ধান কেটে ফেলায়, ধানের তেমন ক্ষতি হয়নি বলেই স্থানীয় সূত্রের খবর।

কাকদ্বীপ মহকুমা এলাকায় চার ব্লক সাগর, নামখানা, কাকদ্বীপ ও পাথরপ্রতিমায় নদী ও সমুদ্র বাঁধ ভেঙে বা উপচে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মুড়িগঙ্গা নদী বাঁধ ভেঙে সাগরের ঘোড়ামারা পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় গোটাটাই জলের তলায় চলে গিয়েছে। জল ঢুকে যায় ত্রাণ শিবিরেও। সাগরের ধবলাট, ধসপাড়া সুমতিনগর ও মুড়িগঙ্গা পঞ্চায়েত এলাকাতেও নদী বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সাগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রাজেন্দ্রনাথ খাঁড়া বলেন, “এই ব্লকে একাধিক বড় ভাঙন হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৫ থেকে ২০ টা জায়গায় বাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছে।” কাকদ্বীপের কালিন্দী, মণি নদী ও মুড়িগঙ্গা নদী বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত
হয়েছে। এলাকার ১৩টি পঞ্চায়েতে সব কটিই কম-বেশি জলমগ্ন হয়েছে। নদী ও সমুদ্র ঘেরা পাথরপ্রতিমা ব্লকে ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ১৫টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৪টিই জলমগ্ন। কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতাল চত্বরেও জল ঢুকেছে এ দিন। দমকল কর্মীদের চেষ্টায় জল সরানো হয়। নামখানা ব্লকে নদী ও সমুদ্র বাঁধ ভেঙে ও উপছে বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কুলপি, রায়দিঘিতেও নদী বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বহু এলাকা। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে ডায়মন্ড হারবার ১ ও ২ ব্লকের কিছু এলাকাও।

গোসাবা ব্লকের ১৪টি পঞ্চায়েত এলাকাই বাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদীবাঁধ উপচেও বহু জায়গায় প্লাবিত হয়েছে গ্রাম। সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাখিরালয়, কুমিরমারি, ছোট মোল্লাখালি, বিপ্রদাসপুর, রাঙাবেলিয়া এলাকা। বাসন্তী ব্লকের মসজিদবাটি, ঝড়খালি, নফরগঞ্জ, জ্যোতিষপুর, চড়াবিদ্যা-সহ বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ ভেঙে গ্রামে জল ঢোকে। বাঁধ উপচে জল ঢুকেছে আরও অন্তত চল্লিশটি জায়গায়। ক্যানিং ১ ব্লকের মাতলা ১, মাতলা ২ ও দিঘিরপার পঞ্চায়েত এলাকাতেও বাঁধ ছাপিয়ে গ্রামে জল ঢুকেছে। ইটখোলা ও নিকারিঘাটা পঞ্চায়েত এলাকায় বাঁধ ভেঙে গ্রামে জল ঢুকেছে। গ্রামে জল ঢোকার ফলে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রচুর। গোসাবায় বিস্তীর্ণ এলাকার চাষের জমি, মাছ চাষের পুকুর, ভেড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বহু কাঁচাবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে একাধিক পর্যটন কেন্দ্রের। বাসন্তী ও ক্যানিং ১ ব্লকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চাষের জমি ও মাছ চাষের পুকুর। ক্ষতির পরিসংখ্যান এখনও তৈরি হয়নি বলেই মহকুমা প্রশাসন সূত্রের খবর। ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক রবিপ্রকাশ মিনা বলেন, “মহকুমা জুড়েই ক্ষতি হয়েছে। সবথেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে গোসাবা ব্লকে। কত নদীবাঁধ ভেঙেছে, কত চাষের জমি, পুকুর বা মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেই হিসেব নিকেশ চলছে।” কুলতলি ব্লকের দেউলবাড়ি, নলগড়া, কৈখালি, গোপালগঞ্জ, ব্যাঙ্কের ঘাট, সানকিজাহান, ভুবনেশ্বরী, ঢাকিরমুখ, ডোঙাজোড়া, বৈকুন্ঠপুর, নগেনাবাদ-সহ আরও কিছু এলাকায় বাঁধ ভেঙে বা উপচে জল ঢুকেছে এলাকায়। ক্ষতি হয়েছে প্রচুর কাঁচা বাড়ি, চাষের জমির।

জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, “আমপানের মত ঝড়ের কারণে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিন্তু প্রবল জলোচ্ছ্বাসে বেশ কিছু মাটির বাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিছু জায়গায় নদী বাঁধের ক্ষতি হয়েছে। ইতিমধ্যে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়ে গেছে। আমরা ক্ষয়ক্ষতির সমস্ত তথ্য জোগাড় করছি। তবে কোথাও কোনও প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।”

তথ্য সহায়তা: দিলীপ নস্কর, নির্মল বসু, সামসুল হুদা, প্রসেনজিৎ সাহা, নবেন্দু ঘোষ

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Yaas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy